কৃষকদের আগ্রহ কমছে আখ আবাদে
ঝিনাইদহ: সঠিক মূল্য না পাওয়া, দাম পেতে হয়রানি ও ফলন ভালো না হওয়ায় ঝিনাইদহের কৃষকদের আখ আবাদের প্রতি আগ্রহ কমছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর অর্ধেকেরও কম জমিতে আখের আবাদ হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে বন্ধ হয়ে যেতে পারে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান মোবারকগঞ্জ সুগার মিলটি।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে এ বছর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মিল জোন ও নন মিল জোনে আখের আবাদ হয়েছে মাত্র ৫৫৫ হেক্টর জমিতে। যা গত বছরের তুলনায় ৬৩০ হেক্টর কম। এছাড়াও গত ৫ বছরে জেলায় আখের আবাদ কমেছে কয়েকগুণ। এক সময়ে জেলার ৬টি উপজেলায় যেভাবে কৃষকরা আখ চাষ করত, বর্তমানে সেটা আর নেই।
কালীগঞ্জ উপজেলার বড়পুকুরিয়া গ্রামের আব্দুল হাই জানান, গত বছর তিনি আড়াই বিঘা জমিতে আখের আবাদ করেছিলেন। এ বছর আখের আবাদ বন্ধ করে দিয়ে অন্য ফসল আবাদ করেছেন।
তিনি জানান, অতীতে আখ চাষ করে লাভবান হওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে আগের মতো আর লাভ হচ্ছে না। সব ফসলের উচ্চ ফলনশীলজাত বের হলেও আজ পর্যন্ত আখের ক্ষেত্রে তা বের হয়নি। এছাড়াও মিলগেট ছাড়া অন্যান্য সেন্টারে আখ ওজনে কম করা, দীর্ঘমেয়াদি চাষ, পুঁজি পেতে চরম হয়রানি, আখের মূল্য বৃদ্ধি না করা, ঋণের মাধ্যমে কৃষকদেরকে দেয়া সার ওজনে কম হওয়া এবং সর্বোপরি কৃষকদের সঙ্গে চিনি কলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণেই এলাকার কৃষকরা আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
বলিদাপাড়া গ্রামের বাবুল হোসেন জানান, তিনি গত বছর ৩ বিঘা জমিতে আখের আবাদ করেছিলেন। এ বছর ১ বিঘা জমিতে আবাদ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, সারাবছর আখের আবাদ করার পর মিলে আখ দিলে ঠিকমতো টাকা পাওয়া যায় না।
বাবরা গ্রামের কৃষক সেন্টু কুমার জানান, এ এলাকার কৃষকরা আখের আবাদ বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি জানান, দেড় বছর আবাদ করে যদি সঠিক সময়ে ভালো ভাবে তার মূল্য না পাওয়া যায়, তবে কৃষকরা আখের আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ জি এম আব্দুর রউফ জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর আখের আবাদ কম হয়েছে। আখ চাষে সরকারের একটি প্রকল্প ছিল। তবে তা বন্ধ হয়ে গেছে। এ আবাদ ফিরিয়ে আনতে হলে কৃষকদের প্রনোদনাসহ আখের মূল্য বৃদ্ধি করা যেতে পারে।