পদ্মের হাসি দেখতে ছুটে আসছে দর্শনার্থীরা
বরিশাল: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার কেউ কথা রাখেনি কবিতায় বলেছিলেন, মামাবাড়ির মাঝি নাদের আলী বলেছিল, ‘বড় হও দাদাঠাকুর-তোমাকে আমি তিন প্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবো, সেখানে পদ্মফুলের মাথায় সাপ আর ভ্রমর খেলা করে’।
মৃদু বাতাসে দু’একটা শিরীষের পাতা বা হিজলের লালচে ফুলের পানিতে ঢলে পড়া। গাঙ ফড়িং এর চঞ্চল উড়াউড়ি, তার ভেতরে পদ্মপাতায় সাপ আর ভ্রমরের খেলা, কি অপার্থিব সুন্দর।
বর্তমানে সাদা বা লাল রঙের শাপলা ভরা দিঘি বা বিল চোখে পড়লেও আমাদের দেশে কিন্তু এমন পদ্মদিঘি মোটামুটি বিরলই বলা যায়।
কিন্তু ঠিক এমনই একটি স্থান রয়েছে বরিশাল নগরীতে। তবে সেটি একটি দিঘি বা বিল নয়। নগরবাসীর কাছে এটি শ্বেতপদ্ম পুকুর নামে পরিচিত। বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ এর নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরের পাশে হিমনীড়, ছায়ানীড়, শিলানীড় ও চানবাংলোর সামনে এই পুকুরে আবার ফুটেছে পদ্মফুল।
প্রস্ফুটিত পদ্মের হাসি দেখতে সৌন্দর্য প্রিয় মানুষগুলো প্রতিদিন ভিড় করছে নগরীর বান্দ রোডের পাশে এই পুকুর পাড়ে।
জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে স্টিমার কোম্পানির কর্মকর্তাদের জন্য নগরীর রাজা বাহাদুর সড়কে বেলস পার্কের উওর প্রান্তে হিমনীড় বাড়িটি তৈরি করা হয়। ১৯৪২ সালের দিকে নির্মিত হিমনীড় ও পশ্চিম পাশের চাঁনবাংলোয় বিআইডব্লিউটিএ এর কার্যক্রম শুরু হয়। এ বাড়ির চত্বরে খনন করা হয় ওই পুকুর। এরপর তৈরি করা হয় একটি বাংলো। চারপাশে নানা রকম ফুল আর বনজ গাছগাছালি রোপন করা হয়।
আরও জানা গেছে, সৌন্দর্য প্রিয় কেউ একজন পুকুরে পদ্ম গাছ রোপন করে। এছাড়া পুকুরের চারপাশে কাঁঠাল চাপা, গোলাপ, রাধাচূড়া, হাসনাহেনা, নয়নতারা, ডালিয়া, জিনিয়াসহ নানা প্রজাতির দুর্লভ ফুল গাছও রোপন করা হয়েছিল।
বাড়ির আঙিনা জুড়ে হরেক প্রকার ফুলগাছ আর পুকুরের পদ্মফুলের সৌন্দর্যের সমারোহের কারণে এরশাদ সরকার আমলে হিমনীড়ে বিআইডব্লিউটিএর সদর দপ্তর স্থাপন করার সিদ্ধান্তও নেয়া হয়। পরে আর তা করা হয়নি। বাড়িটিও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। পরে অযত্ন-অবহেলায় গাছ মরে যায়। বাড়িটি দেখভালের দায়িত্বে থাকা কর্মচারীরা পুরনো বৃক্ষ গোপনে বিক্রি করে দেয়।
এছাড়াও লাভের আশায় পদ্ম পুকুরে হাইব্রিড জাতের মাছ চাষ করার জন্য সেচ দিয়ে চুন ও কীটনাশক প্রয়োগ করে। এতে পদ্মফুলের গাছ মারা যায়। যার কারণে বেশ কয়েক বছর পদ্মফুল আর ফোটেনি।
এরই মধ্যে দুই বছর আগে পুকুরে পদ্মগাছগুলো আবার প্রকৃতির নিয়মে জেগে উঠতে শুরু করলেও ফুল ফোটেনি। তবে গত বছরের মতো এবার আবারো শ্বেতপদ্ম প্রস্ফুটিত হয়। নতুনভাবে প্রস্ফুটিত এই পদ্মফুল দেখতে এখন প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে দর্শনার্থীদের।
ঐতিহ্যবাহী এই পদ্মপুকুরটি দেখতে এসে ফয়সাল আহমেদ নামে এক দর্শনার্থী বলেন, ‘এই পুকুর ঘিরে যে স্থানটি রয়েছে সেটি একটি সংরক্ষিত এলাকা। এখানে যততত্র ভাবে কেউ আসতে পারে না। পুকুরটিতে ফোটা শ্বেতপদ্ম ফুলের এই দৃশ্য দেখে আসলেই আমরা মুগ্ধ।’
এদিকে বিআইডব্লিউটিএর এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিআইডব্লিউটিএ এর এ দপ্তরটি কালের সাক্ষী হিসেবে আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। পুকুরটি দেখতে প্রতিদিনই এখানে প্রচুর মানুষ আসে।
উল্লেখ্য, ঐতিহ্যবাহী চানবাংলোয় রয়েছে ভিভিআইপি এর বিশ্রামাগার। শিলানীড় ও ছায়ানীড়ে রয়েছে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বসবাস।