জি টু জি (সরকার-সরকার) ভিত্তিতে আনা জ্বালানি তেলের প্রিমিয়াম কস্ট কমিয়ে দেওয়ায় রাষ্ট্রের ৪২ মিলিয়ন ডলার খরচ বেঁচে গেছে।
দীর্ঘদিন ধরেই বাড়তি দরে প্রিমিয়াম দিয়ে আসছিল বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি)। শুধু জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে আমদানিকৃত জ্বালানি তেলের বিপরীতে প্রায় ৪২ মিলিয়ন ডলার কম বিল দিতে হবে। পরবর্তীতে আরও কমিয়ে আনার আশা করছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি।
কয়েক মাস আগে বিপিসিতে চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেছেন মোঃ আমিন উল আহসান। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, যোগদান করার পর দেখতে পেলাম দরপত্রের মাধ্যমে আনা তেলের তুলনায় জি টু জি ভিত্তিতে আনা তেলের প্রিমিয়াম কষ্ট দুই থেকে আড়াই ডলার পর্যন্ত বেশি। আমরা তখন তাদের সঙ্গে বৈঠক করে বললাম, উন্মুক্ত দরপত্রের তুলনায় ১ পয়সা হলেও দর কমের শর্ত দেওয়া হলো। তাদের বললাম উন্মুক্ত দরপত্রে বেশ কিছু ইস্যু থাকে, জি টু জিতে নেই, তাই কম হতে হবে।
বৈঠকে সম্প্রতি আমরা যে দরপত্র দিয়েছিলাম সেটার রেফারেন্স তুলে ধরা হয়। তখন তারা আমাদের দাবি মেনে নিয়ে প্রিমিয়াম কষ্ট কমাতে সম্মত হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। পরবর্তী সময়ে আরও বেশি প্রতিযোগিতামূলক দরের দিকে যাওয়া হচ্ছে বলে জানান বিপিসি চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, প্রিমিয়াম খরচ কমানোর বিষয়ে তারা আপত্তি তুলেছিল, তাদের বক্তব্য ছিল আমরা নির্ধারিত সময়ে বিল পাই না, এতে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। আমরা তাদের সেই বিষয়গুলো আমলে নিয়েছি, এখন আর কোন বকেয়া নেই। এক সময় ২০০মিলিয়ন ডলারের মতো বকেয়া পড়েছিল।
অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি গতিতে ফিরেছে বিপিসির গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো। ঢাকা-চট্টগ্রাম তেলের পাইপলাইন জানুয়ারি মাসে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। ২০১৭ সালে প্রাক সমীক্ষা শেষ হলেও নানা কারণে নির্ধারিত গতিতে চলেনি প্রকল্পটি। বিপিসি অর্থায়নে গৃহীত এই প্রকল্পের আওতায় ঢাকা-চট্টগ্রাম ২৩৭ কিলোমিটার, কুমিল্লা থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ৫৯ কিলোমিটার, ফতুল্লা হতে থেকে গোদনাইল ডিপো পর্যন্ত সাড়ে ৮ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করা হবে। পাইপলাইনটি চালু হলে বছরে কমপক্ষে ৬৫ কোটি টাকা পরিবহন খরচ সাশ্রয় হবে। পাশাপাশি পরিবহন লোকসান বন্ধ হবে বলে আশা করছে বিপিসি। তবুও অবহেলিত ছিল আগের চেয়ারম্যানদের সময়ে।
বাংলাদেশ ২০২২-২৩ অর্থবছরে জ্বালানি তেল ব্যবহারের রেকর্ড করেছে। ওই বছর ৭৩ লাখ ৪৬ হাজার ৯৫ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল ব্যবহৃত হয়েছে। ওই বছরে ডিজেল ব্যবহৃত হয়েছে ৪৯ লাখ ৩৫ হাজার ৪৮৩ মেট্রিক টন। চাহিদার দিক থেকে ডিজেলের পরেই ছিল ফার্নেস অয়েল ৮ লাখ ৮০ হাজার টন। তবে পরের অর্থবছর ২০২৩-২৪ এ জ্বালানি তেলের চাহিদা কমে দাঁড়ায় ৬৩ লাখ ৬১ হাজার ৩২০ টনে। দেশের মোট চাহিদার ৫০ শতাংশ জি টু জি মেয়াদি চুক্তি এবং অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ আন্তর্জাতিক দরপত্রের ভিত্তিতে বিভিন্ন উৎস থেকে পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে।
দেশে জ্বালানি তেলের বার্ষিক চাহিদার মধ্যে ইস্টার্ন রিফাইনারির মাত্র ১৫ লাখ ৪৫ হাজার ২৪৫ মেট্রিক টন যোগান দেয়। অবশিষ্ট চাহিদা পুরণে তুলনামূলক বেশি দামে পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়। পরিশোধিত তেল না এনে ক্রডওয়েল পরিশোধন করা হলে লিটার প্রতি ডিজেলে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ টাকা করে সাশ্রয় হয়। সে কারণে ২০০৮ সালে ইআরএল-২ প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। আমলাতন্ত্রিক জটিলতাসহ নানা কারণে কাজ শুরুর আগেই কেটে গেছে এক যুগ। প্রথমে ১৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট ধরা হলেও ১০ বারের বেশি ব্যায় বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ সংশোধিত ডিপিপিতে ২৩ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা ব্যায় ধরা হয়েছে। দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছে ৩০ লাখ মেট্রিক টন।
বিপিসি চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, ইআরএল-২ প্রকল্প বাস্তবায়নে জোরদার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি খুব শিগগিরই এর অগ্রগতি দৃশ্যমান হবে।
খরচ সাশ্রয়ের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অনেকগুলো সাহসী পদক্ষেপ দেখা গেছে। এমনও অনেক কর্মকর্তা ছিলেন যারা এক বিভাগেই ২০ বছর পদ আকড়ে ছিলেন। নানা রকম অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে যাদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়নি কেউ। তাদের বদলী করে দুর্নীতিবাজ ও প্রভাবশালীদের ভয় ধরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন ২বলে জানা গেছে।