‘বাজেট বাস্তবায়িত না হলে এত উন্নয়ন হলো কীভাবে’

  • সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা, জাতীয় সংসদ ভবন থেকে
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছবি: সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় সংসদে সম্পূরক বাজেটের সমাপনী বক্তব্য দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন করেছেন, ‘বাজেট বাস্তবায়িত না হলে এত উন্নয়ন হলো কীভাবে?’

তিনি বলেন, ‘অর্থনীতি ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে বলেই উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছি। সারা বিশ্ব আজ অবাক হচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের বিস্ময়। যেখানেই যাচ্ছি সেই কদরটা পাচ্ছি। আর যদি বাজেট বাস্তবায়নই করতে না পারি, তাহলে ২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬১ হাজার কোটি টাকা থেকে ৫ লাখ কোটি টাকার ওপরে যে বাজেট দিলাম, সেই টাকা এলো কোত্থেকে? কাজেই অযথা কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত না করাই ভালো।’

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৭ জুন) বিকেলে একাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর সমাপনী বক্তৃতায় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। সাধারণত সম্পূরক বাজেটের সমাপনী বক্তব্য দিয়ে থাকেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু এবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অসুস্থ থাকায় তার পক্ষে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতি বাজেটেই সরকারের উন্নয়নের অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন বিবেচনায় নিয়ে সরকারের রাজস্ব আদায় ও ব্যয়ের প্রাক্কলন বাজেট করে থাকি। আর এই প্রাক্কলন সঙ্গত কারণেই কিছুটা বেশি করে থাকি। যে কারণে প্রাক্কলনে অনেকটা উচ্চাভিলাষী হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এটা আমাদের সমৃদ্ধির আগামীর পথে নিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা যোগায়। বিগত এক দশকে অসম্ভবকে সম্ভব করা, অজেয়কে জয় করা ও দুর্ভেদ্যকে ভেদ করা হয়েছে। কোনো মানুষের যদি উচ্চাভিলাষ না থাকে, সে কোনো কিছু অর্জন করতে পারে না। উচ্চাভিলাষ না থাকলে এসব অর্জন করা কখনোই সম্ভব হতো না’, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে বাজেট বাস্তবায়নের পরিসংখ্যান এ কথাই প্রমাণ করে যে আমাদের লক্ষ্যগুলো সব সময়ই বাস্তবভিত্তিক ছিল। তবে আমরা মনে করি, বাস্তবতার কারণে বাজেটে কিছুটা সংশোধন, সংযোজন ও পরিমার্জনের প্রয়োজন হয়। আমরা প্রতি বছরই এটা করে থাকি। এটা শুধু আমাদের দেশে না, সব জায়গায় বাজেটের প্রস্তাবনা দেয়। এই বছর যে বাজেট প্রস্তাবনাটা নিয়ে এসেছি সেটা ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য। আমাদের উন্নয়ন বাজেট ঠিক করি কোন লক্ষ্যে পৌঁছাব সেটা সুনির্দিষ্ট করি।’

সংসদ নেতা বলেন, ‘চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট যেসব সামষ্টিক অর্থনৈতিক অনুমানের ওপর ভিত্তি করে প্রণয়ন করা হয়েছিল, পরে বৈশ্বিক নানা ঘটনার কারণে সেসব সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে কিছুটা পরিমার্জনের প্রয়োজন হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মূল বাজেট প্রণয়নের সময় সামষ্টিক জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৭.৮ শতাংশ অনুমান করেছিলাম। সংশোধিত বাজেটে তা ৮.১৩ শতাংশ হবে বলে ধারণা করছি। ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ণয় করা হয়েছিল ৭.৬ শতাংশ। যা সাফাল্যজনকভাবে অতিক্রম করতে পারব বলে আশা করছি। অপরদিকে মূল্যস্ফীতি ৫.৬ শতাংশ অনুমান করা হলেও সংশোধিত মূল্যস্ফীতি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫.৫ শতাংশ। প্রবৃদ্ধি বাড়লে সাধারণত মূল্যস্ফীতি বাড়ার কথা। কিন্তু যেহেতু আমরা বাজেট পরিকল্পনায় এবং বাস্তবায়নে অত্যন্ত সর্তক, তাই সব সময় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি।’

বিজ্ঞাপন

বিরোধী দলের সদস্যদের নানা প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, ‘কেউ বলছেন, বাজেট দিয়ে বাস্তবায়ন করতে পারে না। আমরা এক বছর পর আবার বাজেট দেব। এই এক বছরে বিশেষ করে অনেক উন্নয়ন বাজেট আমরা বাস্তবায়ন করেছি। আমরা কিন্তু বাজেট বাস্তবায়নের জন্য মাঝামাঝি সময়ে এগুলোর একটা হিসেব নিয়ে থাকি যে কোথায় কোন খাতে, কী বরাদ্দ দিয়েছিলাম, কতটা কার্যকর হলো, কোন কোন জায়গায় বরাদ্দকৃত টাকার যথাযথ বাস্তবায়ন করা সম্ভব, কোথায় কোথায় সম্ভব না বা কোথায় বাস্তবায়নের জন্য বেশি টাকার প্রয়োজন হয়। এরপর সেটা ঢেলে সাজাই। সেজন্য বাজেট পরিমার্জন করি, সংশোধন করি, এটাই নিয়ম। যাতে অর্থটা যথাযথভাবে কাজে লাগে।’

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বাড়তি বরাদ্দ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সব প্রকল্প তো একইভাবে চলে না, চলতে পারে না, চলা সম্ভবও না, এটাই বাস্তবতা। সেই দিক বিবেচনায় রেখে বাজেট দিয়ে থাকি। সেটাই সম্পূরক বাজেট হিসেবে পরে উপস্থাপন করি। অনেকে বলেন, বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারি না, কিন্তু বাজেট দেই। তাহলে ২০০৮ সালে যেখানে ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিতাম আজ সেখানে বাজেট চলে গেছে ৫ লাখ কোটি টাকারও ওপরে। এটা করলাম কীভাবে? যদি বাস্তবায়নের দক্ষতাই না থাকবে, এতো উন্নয়ন কি করে হলো? উন্নয়নের সুযোগটা সবাই নিচ্ছেন। অনেকে বিদ্যুৎ নিয়ে বলেছেন, এত উন্নয়ন, তাহলে শতভাগ কেন পাচ্ছেন না। মনে রাখতে হবে, বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো সব সময় চালু থাকে না। সব বিদ্যুৎ কেন্দ্র মাঝে মধ্যে নতুনভাবে সংস্কার করতে হয়। যে কারণে বন্ধ থাকে। যেখানে যতটুক চাহিদা সেই চাহিদা মোতাবেক বিদ্যুৎ দেওয়া হয়। আজ ৯৩ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাচ্ছে।’

ব্যাংকের টাকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকেই বলছেন, ব্যাংকে টাকা নেই। ব্যাংকে টাকা থাকবে না কেন? অবশ্যই টাকা আছে। তবে লুটে খাওয়ার টাকা নেই। আর ব্যাংক যারা লুট করে নিয়ে গেছেন, তাদের আমরা চিনি। অনেকেই তো প্রচুর টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে আর ফেরত দেননি। দুর্নীতির দায়ে কারাগারে বন্দী আছেন, এ রকম বহু ঘটনা আছে।’

‘আমরা যদি কাজই না করতাম দারিদ্রের হার ৪০ ভাগ থেকে ২১ ভাগে নেমে আসত না। আগামীতে ২১ ভাগ থেকে আমরা আরো নামাব’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।