বাদলের মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে শূন্যতা সৃষ্টি হলো
জাতীয় সংসদ ভবন থেকে: একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) কার্যকরী সদস্য মঈন উদ্দীন খান বাদলের মৃত্যুতে রাজনৈতিক অজ্ঞনে এক বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে সকল রাজনৈতিক সংগ্রামে তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল।
বৃহস্পতিবার (০৭ নভেম্বর) বিকেলে একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চম অধিবেশনে সংসদ সদস্য মঈন উদ্দীন খান বাদলের মৃত্যুতে আনীত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ নেতা একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজ পার্লামেন্ট শুরু করছি, আমাদের একজন সাথী মঈন উদ্দীন খান বাদল। যিনি চট্টগ্রাম থেকে তিন বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য। তার উপর শোক প্রস্তাব নিচ্ছি এবং অন্যান্য শোক প্রস্তাব গ্রহণ করছি। তিনি ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ তিনটা নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
তিনি বলেন, ছাত্র রাজনীতিতে তিনি সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান রয়েছে। তিনি সব সময় অস্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন এবং শান্তি সমৃদ্ধিতে বিশ্বাসী ছিলেন। পার্লামেন্টে তিনি যখন ভাষণ দিতেন প্রত্যেকটি ভাষণেই একটা দাগ কেটে যেত। অত্যন্ত বলিষ্ট ভাবেই তিনি কথা বলতেন। এলাকার উন্নয়নের জন্য সব সময় তিনি সক্রিয় ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মঈন উদ্দীন খান বাদলের তার মৃত্যুতে তার এলাকাবাসীর ক্ষতি হয়েছে। সাথে সাথে রাজনৈতিক অঙ্গনে আমরা যারা স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করেছি আমরা যারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছি এমনকি আয়ুব বিরোধী আন্দোলন থেকে নিয়ে ৬ দফা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যহার আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধ প্রতিটি ক্ষেতেই তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি জাসদে যোগ দেন এবং আমরা যখন ঐক্যজোট গঠন করি। আমাদের ঐক্যজোটের সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন। কাজেই আন্দোলন সংগ্রামের রাজপথে এবং এই সংসদে তার সঙ্গে এক সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। রাজনৈতিক চিন্তা চেতনা প্রজ্ঞায় তিনি যথেষ্ট শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছেন। তার মৃত্যুতে রাজনৈতিক অজ্ঞনে একটা বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি হলো।
বাদলের স্মৃতিচারণ করে সংসদ নেতা বলেন, দুই দিন আগেই.. আমি সব সময় তার শরীর স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতাম। তিনি অসুস্থ ছিলেন। তার স্ত্রী সব সময় মেসেজ পাঠাতেন খবর দিতেন, তিনি কি অবস্থায় আছেন। দুই দিন আগেও তার কাছ থেকে মেসেজ পাই। কিন্তু আজ সকালে যখন খবর পেলেন একটা বিরাট ধাক্কা লেগে গিয়েছিল। কারণ এটা আমি ভাবতেই পারিনি যে তিনি এভাবে মৃত্যুবরণ করবেন। পার্লামেন্ট শুরু হবে তিনি আসবনে পার্লামেন্টে এবং দ্রুত সুস্থ হতে হবে এটাই তার মনে ছিল। আজকেও মৃত্যু খবর পেয়ে তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলি এবং তিনি একথাই বলছিলেন বুবু তিনি তো চাচ্ছিলেন খুব তাড়াতড়ি সুস্থ হয়ে পার্লামেন্টে এসে কথা বলবেন। আমাদের দুর্ভাগ্য যে তার সেই বলিষ্ট কণ্ঠস্বর আর শুনতে পাব না।
তিনি বলেন, আমরা সকলেই খুব আহত। দুই দিন আগেও আপনার (স্পিকার) সঙ্গে যখন কথা হলো বলছিলাম এবার আমাদের সংসদে অন্তত কেউ মারা যাননি। শোক প্রস্তাবে অধিবেশন বন্ধ করতে হবে না। কি দুর্ভাগ্য আমাদের, ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আজ (বৃহস্পতিবার) সকালেই আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। তার লাশ আনতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমাদের দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। চলার পথে অনেক আপন জনের হারিয়েছি, অনেকে হারিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য সময়ের সাথে সবাইকে একদিন চলে যেতে হবে। জন্মিলে মরিতে হবে এটাই প্রকৃতির নিয়ম।