নারী বিদ্বেষী ওয়াজ বন্ধের আহ্বান

  • সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সংসদ অধিবেশন এবং ইনসেটে হাসানুল হক/ ছবি: সংগৃৃহীত

সংসদ অধিবেশন এবং ইনসেটে হাসানুল হক/ ছবি: সংগৃৃহীত

জাতীয় সংসদ ভবন থেকে: সারা দেশে ওয়াজের নামে রাজনৈতিক মোল্লারা ধর্মের মনগড়া ব্যাখ্যা দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সাথে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত সাঈদীকে তুলনা করা হয়। তাকে আল্লাহর প্রিয় মানুষ উল্লেখ করে তার মুক্তি দাবি করা হচ্ছে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জেনাকারী হিসাবে চিহ্নত করে ভাষণ দেয়া হচ্ছে। সরকারের নারী নীতির বিরুদ্ধে প্রচারণা চলছে। নারীর ঘর থেকে বের হওয়া, নারীর চাকরি করা, নারী স্কুল-কলেজে লেখাপড়ার বিরুদ্ধে কথা বলাই এ সকল রাজনৈতিক ওয়াজের মূল বিষয়।

বিজ্ঞাপন

এ সময় তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আইন শৃংখলা রক্ষাবাহিনীকে সজাগ করুন। নারী বিদ্বেষী ওয়াজ বন্ধ করুন।

রোববার (০২ ফেব্রুয়ারি) রাতে সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনিত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী কওমী মাদ্রাসা বোর্ড করে দিয়েছেন। ইসলামিক আরবি বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু ইসলামিক ফাউন্ডেশন করে দিয়েছেন। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ-স্কুল-মাদ্রাসাগুলোতে ইসলামী শিক্ষা, ইসলামের ইতিহাস পড়ানো হচ্ছে। দেশে মাদ্রাসা বোর্ড আছে। এই রাজনৈতিক মোল্লারা-ফতোয়াবাজরা-ধর্ম ব্যবসায়ীরা কি ইসলামি ফাউন্ডেশন, বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ-মাদ্রাসায় যে শিক্ষা দেয়া হয়, যে সিলেবাস পড়ানো হয় তার আলোকে ভাষণ দেয়? নাকি নিজেদের মনগড়া ধর্মের ব্যাখ্যা দেয়? তা সরকার ও প্রশাসনকে তা মনিটর করতে হবে।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক শান্তি ছাড়া উন্নয়ন-অগ্রগতি-সমৃদ্ধির পথে এগুনো কঠিন। দেশে রাজনৈতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য মুক্তিযুদ্ধসহ অতীতের সকল ঐতিহাসিক গণআন্দোলনে মীমাংসিত বিষয়সমূহকে অমীমাংসিত করা সকল অপচেষ্টা বন্ধ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইতিহাস নিয়ে বিতর্কের অবসান করতে হবে। পাকিস্তানপন্থার রাজনীতি তথা সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদী-জঙ্গিবাদী-সন্ত্রাসবাদী রাজনীতি ও তাদের পৃষ্ঠপোষক জামাত-বিএনপিকে রাজনীতির মাঠ থেকে চিরতরে বিদায় করতে হবে।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে দেশ বিরোধী এই শক্তিগুলোর প্রতি নমনীয়তা ও ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নাই। ইতিহাস ও তথ্য প্রমাণ করে জামাত-বিএনপি সুযোগ পেলেই গণতন্ত্রের পিঠে ছোবল হানে। বিএনপি-জামাত সাম্প্রদায়িক-জঙ্গিবাদ-মৌলবাদ উৎপাদন পুনরুৎপাদনের কারখানা। আশান্তি উৎপাদন-পুনরুৎপাদনের কারখানা চিরদিনের জন্য বন্ধ করে দিতে হবে। এ কথা রাজনৈতিক বিদ্বেষ না, রাজনৈতিক বাস্তবতা।

হাসানুল হক ইনু বলেন, সিটি নির্বাচনে বিএনপি দাবী করেছিল তাদের প্রার্থীর পক্ষে নাকি জনজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে! কিন্তু ফলাফল ঘোষণার পর তাদের পুরাতন বদঅভ্যাস অনুযায়ী ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে হরতাল ডেকেছে। কিন্তু হরতালে সবকিছু স্বাভাবিক। বিএনপির এই হরতাল তাদের ভুল ও ব্যর্থ রাজনীতি ঢাকার মুখ রক্ষার হরতাল।

তিনি বলেন, জাতীয় উন্নয়ন-অগ্রগতি-সমৃদ্ধির জোয়ার বইছে দেশে। বাংলাদেশ আজ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম প্রবৃদ্ধি অর্জনের দেশ। তবে দুর্নীতির দুষ্টচক্র আমাদের জন্য অভিশাপ, বিরাট চ্যালেঞ্জ। উন্নয়নের সুফল খেয়ে ফেলা দুর্নীতির উঁইপোকা ও ইঁদুরগুলোকে বিষ দিয়ে মারতেই হবে। ক্ষমতার অপব্যবহারকারী-দুর্নীতিবাজ-লুটেরারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে না- তা প্রমাণ করতেই হবে। ব্যাংক লুটেরা- শেয়ারবাজার লুটেরারাও ধরাছোঁয়ার বাইরে না- সেটাও প্রমাণ করতে হবে। লুটেরা-দুর্নীতিবাজ অফিসার, অসৎ রাজনীতিবিদদের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ত্রিমুখী অভিযান পরিচালনা করতে হবে। এর জন্য সুশাসন ও আইনের শাসন নিশ্চিত করতেই হবে।

ইনু বলেন, সাম্প্রতিককালে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় জনমনে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। জনগণের এই ক্ষোভকে ধারণ করে কয়েকদিন পূর্বে এই মহান সংসদে ধর্ষকদের ক্রসফায়ার দেয়ার মতো আবেগপ্রবণ কথাও উঠেছে। আমরা ধর্ষকদের কঠোর শাস্তি চাই। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে জিরো টলারেন্সের কথা বলেছেন। আমরা ধর্ষকদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স দেখতে চাই। কিন্তু আমরা এই মহান সংসদে ক্রসফায়ার বা বিচার বহির্ভূত হত্যার পক্ষে কথা বলতে পারিনা।