বঙ্গবন্ধু হত্যার পথ তৈরি করেছিলেন ইনু: ফিরোজ রশীদ
জাতীয় সংসদ ভবন থেকে: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পেছনে এবার জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর দিকে ইঙ্গিত করলেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ। ধর্ষকদের শাস্তি ক্রসফায়ার দাবি করে সংসদে বক্তব্য দিয়েছিলেন কাজী ফিরোজ রশীদ, (রোববার ২ ফেব্রুয়ারি) সেই বক্তব্যের সমালোচনা করেন হাসানুল হক ইনু। তার জবাব দিতে গিয়ে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেছেন, আপনারা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের কত লোক গুলি করে মেরেছিলেন? হাজার হাজার কর্মীকে মেরেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। থানা, ফাঁড়ি লুট করেছিলেন। সেদিন যদি আপনার এগুলো না করতেন বঙ্গবন্ধুকে মারার দুঃসাহস কেউ করত না। আপনার বঙ্গবন্ধুকে মারার পথ তৈরি করে দিয়েছিলেন।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনিত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে এভাবেই কড়া জবাব দেন ফিরোজ রশীদ। এসময় সভাপতিত্ব করছিলেন ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া।
নারী ও শিশু ধর্ষণের চিত্র তুলে ধরে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, সারাদেশে শিশু-নারী-প্রতিবন্ধী ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। বাসযাত্রীকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হচ্ছে। নিষ্পাপ শিশুদের ধর্ষণ করে হত্যা করা হচ্ছে। প্রতিমাসে ৮৪ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। গত বছর ৫ হাজার ৪০০ নারী ও ৮০০ শিশু ধর্ষণের শিকার। এরমধ্যে মারা গেছে ২ হাজার ৮০০ জন মারা গেছে।
কয়েকদিন আগে সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে ধর্ষকদের শাস্তি একমাত্র ক্রসফায়ার ও গুলি করে হত্যার দাবি করলেও আজ পুরো উল্টো সুরে বলেন, সেদিন অত্যন্ত আবেগ তাড়িত হয়ে ধর্ষকদের ওপর গুলি চালানোর কথা বলেছিলাম। কিন্তু আমাদের এখান থেকেই একজন সংসদ সদস্য (হাসানুল হক ইনু) এটার বিরাট ফিরিস্তি দিলেন। যে এইটা মহাপাপ। আমরা এখানে আলোচনা করতে পারি না।
তিনি বলেন, আমি কি চাই? সকল ধর্ষণকারী যারা আছে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে একটা কঠোর আইন করতে হবে। যাতে ধর্ষকদের ৯০ দিনের মধ্যে স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে বিচার করে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া যায়। তা না হলে সাক্ষী নেই, শিশুকে হত্যা করা হচ্ছে কেউ সাক্ষী দিতে চায় না। ১ শতাংশ লোকেরও বিচার হয় না। সাক্ষীর অভাবে বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা। এজন্য আমরা চাই একটা তড়িৎ ব্যবস্থা করতে, আইন করতে। দুঃখ লাগে কিছু মানবাধিকার কর্মী বাইরে বলেছেন কেন সংসদে গুলির কথা বললাম। এনিয়ে অনেক বাহাস করেছেন, আমি ওইভাবে মিন করিনি। কিন্তু তারপর বলছি কঠোর শাস্তি হোক।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, যেদিন নিষ্পাপ শিশু শেখ রাসেলকে হত্যা করল সেদিন কেউ একটা কথা বলেন নাই। সে তো শিশু ছিল, রাসেল সে তো রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল না, সেদিন কিন্তু মানবাধিকার কর্মীরা কোনো কথা বলে নাই।
হাসানুল হক ইনুর নাম উল্লেখ করে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, আমার বন্ধু ইনু সাহেব এখানে কথা বলেছেন, কালকে তিনি (ইনু) কথা বলে চলে গেল। আমি তাকে পাল্টা প্রশ্ন করি আপনারা কত লোক মেরেছিলেন গুলি করে? আওয়ামী লীগের, ছাত্রলীগের? হাজার হাজার কর্মীকে মেরেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। থানা, ফাঁড়ি লুট করেছিলেন। সেদিন যদি আপনার এগুলো না করতেন বঙ্গবন্ধুকে মারার দুঃসাহস কেউ করত না। আপনার মারার পথ রচনা করে দিয়েছিলেন। আমি একটা কথা বলেছি সেটা আমার অশুদ্ধ হয়ে গেছে। উনি গুলির বিরুদ্ধে কথা বললেন। ওনারা যে কথা বলেন কান্নাকাটি করেন, ওনাদের ভাষা বুঝি।
তিনি মুজিব বর্ষে গ্রাম বাংলার সকল রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ, স্কুল-কলেজ মুক্তিযোদ্ধাদের নামে করার দাবি জানিয়ে বলেন, এটা করলে আগামী প্রজন্ম জানতে পারবে বঙ্গবন্ধুর ডাকে কারা সেদিন মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিল। ইতিহাস থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের নাম কেউ মুছে ফেলতে পারবে না।
তিনি বলেন, সরকারের অনেক উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু উন্নয়নের সফলতা ম্লান হয়ে গেছে আর্থিকখাতে সীমাহীন অনিয়ম এবং দুর্নীতি। সব থেকে বেশি দুর্নীতি হচ্ছে ব্যাংকিং খাত। ব্যাংকিং খাতে একটা হরিলুট হয়েছে।
ফিরোজ রশীদ আরও বলেন, পাহাড় সমান দুর্নীতির অভিযোগ প্রশান্তের বিরুদ্ধে। প্রশান্ত কুমার হালদার ৫ হাজার কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন। ওনি এনবিআর গ্রুপ অব ফাইনান্সের এমডি। এই রাজকুমারের এখানে ৩ হাজার কোটি টাকা পাওয়া গেছে। সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে পাচার করা হয়েছে।
জাপা নেতা বলেন, সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে একটা উচ্চ পর্যায়ের কমিশন বসিয়ে তদন্ত করে বের করা হোক এই সকল ভাগ্যবান ব্যক্তিরা কারা? যারা জনগণের ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা নিয়ে গেছেন।