অর্থমন্ত্রীকে তুলোধুনো করলেন বিরোধী দলীয় এমপিরা

  • সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা, জাতীয় সংসদ ভবন থেকে
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সংসদ অধিবেশন, ছবি: সংগৃহীত

সংসদ অধিবেশন, ছবি: সংগৃহীত

সংসদে বিল পাস নিয়ে পুঁজিবাজার, ব্যাংকিং খাতে বিশৃঙ্খলা ও বিদেশে অর্থপাচার ইস্যুতে বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যদের (এমপি) তোপের মুখে পড়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বুধবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় অধিবেশনের শুরুতেই স্বায়ত্তশাসিত, সরকারি কর্তৃপক্ষ ও স্ব-শাসিত সংস্থার যে বিপুল পরিমাণ উদ্বৃত্ত অর্থ ব্যাংকে রয়েছে, তা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার বিধান রাখতে বিল পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।

বিজ্ঞাপন

এর বিরোধিতা করে অর্থমন্ত্রীকে তুলোধুনো করেন বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা। প্রথমে তারা বিলটি প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানান এবং ওই বিলকে কালো আইন বলে আখ্যা দেন। অনেকে বলেন, এটি ডিজগাস্টিং বিল, এটি প্রত্যাহার করুন।

বিলটির জনমত যাচাই-বাছাইয়ের প্রস্তাব দিয়ে বিলের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, একটি কালো আইন তৈরি করা হচ্ছে। যেখানে ৬১টি প্রতিষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে, সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শিক্ষা, বাণিজ্যিক ও গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠানও আছে। বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত নির্দিষ্ট আইনের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। সেই আইন পরিবর্তন না করে সরাসরি আরেকটি আইন তৈরি করে সমস্ত প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা প্রত্যাহার করে নেবেন। এ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য বিলটি কমিটিতে আলোচনার সময় অর্থসচিব ছিলেন, তিনি বলেছেন, সরকারের অর্থের দরকার।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, উন্নয়নের দরকার আছে, অর্থের দরকার আছে, কিন্তু সক্ষমতা কতটুকু? আমার অর্থের প্রয়োজন কতটুকু? সমস্ত কিছু বিসর্জন দিয়ে অর্থ প্রত্যাহার করবেন, এটা হতে পারে না। এ টাকা ব্যাংকে জমা আছে। তাই প্রথমে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যাংকগুলো। অর্থসচিবই কমিটিতে বলেছেন, ২ লাখ ৩৫ হাজার কোটি জমা আছে। এ টাকা তুলে আনলে ব্যাংকগুলো অর্থনৈতিক সংকটে পড়বে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।

রুমিন ফারহানা বলেন, এ বিল সরকারের ধারাবাহিক লুটপাটের প্রতীক। পুরো বিলটি চ্যালেঞ্জ করছি। টাকা পাচার, মন্দ ঋণের কারণে ব্যাংকে চলছে তারল্য সংকট। শেয়ার মার্কেট ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, তিনি সাধারণ অবস্থা থেকে অত্যন্ত বড় শিল্পপতি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন। বছরে ৭৬ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যায়। অর্থমন্ত্রী অসাধারণ মেধাবী ছাত্র ছিলেন। সাধারণ অবস্থা থেকে ব্যবসায়ী হয়েছেন। তিনি অর্থনীতি বোঝেন না, এটা পাগলেও বিশ্বাস করবে না। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? তার সদিচ্ছার অভাব। এতো মেধাবী তিনি, কিন্তু শেয়ার বাজার, খেলাপি ঋণ নিয়ে কিছু করলেন না। কেন মেধাবী অর্থমন্ত্রী এদিকে নজর দিচ্ছেন না? তিনি ধনী সমাজের জন্য অর্থমন্ত্রী হন নাই। কেন খেটে খাওয়া মানুষের দিকে তার নজর নেই?

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, অর্থমন্ত্রী শিক্ষিত লোক। চার্টার্ড একাউন্টেন্ট। ওনার সময়ে পুঁজিবাজারে ১০ হাজার ইনডেক্স উঠেছিল। যখন তিনি পরিকল্পনামন্ত্রী। তখনই তিনি বলেছিলেন, ৪ হাজার হওয়ার কথা, কীভাবে ১০ হাজার হলো? তিনি জানতেন না। ব্যাংকের মালিক সমিতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী-অর্থমন্ত্রী বসেন। কীভাবে হয় এটা? নিরঙ্কুশ সংখ্যগরিষ্ঠের ক্ষমতা দেখাবেন না। পৃথিবীতে অনেক দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে। কদিন পরে আমার একাউন্টের টাকা নিয়ে নেবে কিনা সেই ভয়ে আছি। টাকা এখন ব্যাংক থেকে বাসায় নিয়ে যাব কিনা ভাবছি।

জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, বিলটি পাস হলে অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে যাবে। রাজস্ব বোর্ড অটোমেশন করতে দিচ্ছে না। টাকা চুরি করছে। ট্যাক্স নিচ্ছেন না, নিচ্ছেন ঘুষ। এটাকে সহজ করছেন না। টাকার মালিক জনগণ। জনগণের গচ্ছিত টাকা। পাচার হওয়া টাকা উদ্ধার করেন। জনগণের পকেটে হাত দিয়ে ফেলেছেন। ব্যাংকিং খাত ভেঙে পড়েছে। সেদিকে নজর দিন। টাকা পাচার বন্ধ করুন। মানুষ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। ধনী আরও ধনী হচ্ছে। গরীব আরও গরীব হচ্ছে।

তিনি বলেন, টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। এর জন্য ব্যাংক দায়ী। ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশন এখানে বই দেয়, ওখানে কম্বল দেয়। অন্তত ১০০ ছবি দেয়। অর্থমন্ত্রীর ছবি ছাপা হয়। টাকা কি ওনার? এটা জনগণের টাকা। এ টাকা কেন অ্যালাউ করেন? টাকা যদি বেশি হয়ে থাকে, জনগণের খেদমতে দিয়ে দেন। বিলটা পাস করবেন না।

জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ী হলে যা হয়, তাই হয়েছে। বাজেট করার সময় চিন্তা করেন নাই? রাজস্ব ঘাটতি সম্পর্কে চিন্তা করেন নাই? ৩৫ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি। আগের বছরের চেয়ে ৪৫ ভাগ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হলেও আদায় করা হয়েছে মাত্র ৭ শতাংশ। এনবিআরের ব্যর্থতার কারণে এ বিল সমর্থন করতে পারছি না।

তিনি বলেন, আমি একজন অ্যাডভোকেট। এটা বললে কী অপরাধ হবে? অর্থমন্ত্রী চার্টার্ড একাউন্টেন্ট। কিন্তু ওনার মূল পরিচয় একজন ব্যবসায়ী। এটাতে আহত হওয়ার কিছু নেই। আমরা আশা করেছিলাম, সাকসেসফুল বিজনেস ম্যান, অর্থনীতিতে ভালো করবেন। কতদূর ভালো করেছেন, উনি চিন্তা করবেন। ব্যাংকের মালিক ডিরেক্টররা ঋণ নিয়ে বসে আছেন। এটা কী দেশ? টাকা পাচার হয়, উনি ব্যবস্থা নেন না। বিভিন্ন সংস্থার টাকা খরচ করছেন। আগামী বছর ট্যাক্স না পেলে কী করবেন? ২০১৭ সালে আমাকে বেস্ট লেবার মিনিস্টারের অ্যাওয়ার্ড দিয়েছিল। কেন যে দিয়েছিল, তা আমি জানি না।

জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী এ বিলটিকে জনবিরোধী আইন, ডিজগাস্টিং আইন আখ্যা দিয়ে বলেন, আইনটি পাস হলে সংসদের ইতিহাসে ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটবে। ব্যাংক থেকে ৫৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। দেখা যাবে, সামনের বছর ১ লাখ কোটি টাকা নেবে। এর কোনো শেষ নেই। ডিজগাস্টিং আইনটার প্রত্যাহার চাই। জাতির পতনের প্রথম ধাপে যাচ্ছি। ওনারা দায় স্বীকার করে নিক।

পাটোয়ারী বলেন, স্বাধীন দেশে এ ধরনের আইন হতে পারে না। মেগা প্রজেক্ট বাদ দিলে কী হবে? কিছুই হবে না। একটি আইন সিস্টেমকে কলাপস করে দেবে। একটি আইন অর্থনীতিতে কি লোটাস বা পদ্মফুল এনে দেবে? এতই ন্যাক্কারজনক আইন যে সংশোধনযোগ্যও নয়।