আজহারী দেশ ত্যাগ করলেন কিভাবে, প্রশ্ন মেননের

  • সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা, জাতীয় সংসদ ভবন থেকে
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সংসদ অধিবেশন কক্ষ, রাশেদ খান মেনন, ছবি: সংগৃহীত

সংসদ অধিবেশন কক্ষ, রাশেদ খান মেনন, ছবি: সংগৃহীত

যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর স্বপক্ষে ওয়াজ করেও মিজানুর রহমান আজহারী কী করে নির্বিঘ্নে মালয়েশিয়া চলে গেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এদেশকে ধর্ম নিরপেক্ষতার মূলনীতি উপহার দিয়েছিলেন। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি, ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজনের বিরুদ্ধে তিনি কেবল সোচ্চার ছিলেন না, বাস্তবে তার অনুসরণও করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কারও ধর্মানুভূতিতে আঘাত দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি এ সংসদে স্পিকারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে ইউটিউবে প্রচারিত ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টিকারী কিছু বক্তব্যের পেন-ড্রাইভ দিয়েছিলাম। সে সবের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, জানা নেই। সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর স্বপক্ষে ওয়াজকারী জনৈক আজাহারী সম্পর্কে ধর্মমন্ত্রী বলেছেন, তিনি জামায়াতের পক্ষ হয়ে কাজ করেছেন। অথচ আইসিটি আইনে তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। বরং তাকে নির্বিঘ্নে মালয়েশিয়ায় চলে যেতে দেওয়া হয়েছে। আর শরিয়ত বাউলকে আইসিটি আইনে গ্রেফতার করে জেলখানায় রাখা হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনিত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র কি অতীতের মতো আবার মৌলবাদকে পোষকতা দিচ্ছে? না হলে আজাহারী দেশ ছেড়ে যেতে পারেন না। খতমে নবুয়ত নতুন করে হুঙ্কার ছাড়তে পারে না। হেফাজত সমর্থন (?) প্রত্যাহারের হুমকি দিতে পারে না। এরাই ক’দিন পর পাকিস্তানি কায়দায় ব্লাসফেমি আইন প্রণয়ন করতে বলবে, যেমন এ সংসদেই যুদ্ধাপরাধী নিজামী সে প্রস্তাব তুলেছিলেন।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের নামে যে ধর্মীয় আবরণ দিয়ে তাকে পাকিস্তানি আদলে ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে তার ছেঁদ ঘটানো হয়েছে। কিন্তু সে প্রচেষ্টার অবসান হয়নি। রাষ্ট্রীয় প্রচারে, আমাদের আচার-আচরণে, বেশ-ভূষার পরিবর্তনে তার রেশ আমরা দেখি। ফেসবুক, ইউটিউবের নিত্য প্রচারে সে মানসিকতাকে উসকে দেওয়া হচ্ছে প্রতিদিন।’

সদ্য সমাপ্ত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি কম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘ভোট থেকে মানুষের এ দূরত্ব গণতন্ত্রের জন্য বিপদ ডেকে আনবে। নির্বাচন তো বটেই, রাজনৈতিক দলগুলোকেও অপ্রাসঙ্গিক করে তুলবে।’

তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি এসেছিল। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মত ভোটের দিন তাদের কোথাও দেখা যায়নি। নির্বাচন বানচাল করা, নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করে পেছন দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার কৌশল নিয়েছেন তারা। এটা সত্য যে ওই নির্বাচনে ভোটাররা ভোট দিতে খুব কম এসেছেন। কিন্তু সেটা কেবল এ কারণেই নয়। আওয়ামী লীগ তথা চৌদ্দ দলের সমর্থকরাও ভোট দিতে আসেননি।’

শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এ সরকার স্বাক্ষরতার হার গত এক দশকে ২৮ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে ৭৩ দশমিক ৯ শতাংশে নিয়ে গেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী শিশুর ভর্তির হার ৯৭ দশমিক ৮৫ ভাগে উন্নীত হয়েছে। ঝরে পড়ার হার ১৮ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে প্রাথমিক শিক্ষা চক্র সমাপনের হার ২০০৮-এর ৫০ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে এখন ৮১ দশমিক ৪ শতাংশে পৌঁছেছে। কিন্তু শিশুরা হারিয়েছে শৈশবের আনন্দ। পিএসসি নামক পাবলিক পরীক্ষার ভয় তাদের প্রথম থেকেই কোচিং নির্ভর করেছে। এটা ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে ছিল না। এখন এটা তুলে দেওয়ার কথা উঠলেও, উঠছে না। ইউনিসেফের রিপোর্ট বলছে প্রাথমিক শিক্ষায় পাশের হার ও জিপিএ-৫-এর ছড়াছড়ি হলেও শিক্ষার্থীরা বাংলা, ইংরেজি, অংক কোনোটাই ভালোভাবে জানে না। শিক্ষার গোড়ায় এ গলদ মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, এমনকি উচ্চ শিক্ষায়ও প্রতিফলিত হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ সম্পর্কে যে কথা বলছেন তা আরও ভয়ংকর। সান্ধ্যকোর্সের নামে বাণিজ্য, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় আপত্তি, ভিসিদের দুর্নীতি, গবেষণা না করা- এসব বিষয়ে রাষ্ট্রপতির বক্তব্য উচ্চ শিক্ষার ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে।’

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মেনন বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী সংসদে অর্থনীতির ভালো অবস্থার কথা বললেও বাইরে স্বীকার করেছেন যে রফতানিসহ অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নেতিবাচক। বিরোধী সদস্যরা তাকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ অর্থমন্ত্রী না বলায় তিনি দুঃখ পেয়েছেন। তবে ‘বৃক্ষ তোর নাম কি, ফলেন পরিচয়তে’। জুন মাসের বাজেট অধিবেশন পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। তবে বৈষম্য কি পরিমাণ বেড়ে যাবে, তা দেখার বিষয়। আয় বৈষম্য এখন বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকার এ বছর ব্যাংক যে পরিমাণ ঋণ নেওয়ার কথা অর্থবছরের ছয় মাসেই তা প্রায় নেওয়া হয়েছে। বেসরকারি খাতে ঋণ ১১ বছরে সর্বনিম্ন। এ ঋণ প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ঋণ খেলাপি বাড়বে না বলে অর্থমন্ত্রী যে দাবি করেছিলেন, তা মিথ্যা প্রমাণ করে গত এক বছরে ২২ হাজার কোটি টাকার ওপর খেলাপি ঋণ বেড়েছে। খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে যে পদক্ষেপ তিনি নিয়েছেন, তা ব্যবসায়ী বান্ধব হলেও, ব্যাংক বান্ধব বা অর্থনীতি বান্ধব ছিল না। এ নিয়ে সে সময় ৬৮ বিধিতে নোটিশ দিলেও স্পিকার তা আলোচনায় দেননি। ফলে অর্থমন্ত্রী যা বলেছেন, তাকেই ‘আহা বেশ বেশ’ বলে আমাদের মেনে নিতে হয়েছে।’

‘সংসদে কোন নোটিশ গ্রহণ করা হবে, কি আলোচনা করা যাবে, তা নির্ধারণের এখতিয়ার স্পিকারের। এমনিতেই ১৯৭০ বিধির কারণে সংসদ সদস্যরা অনেক ক্ষেত্রেই তাদের স্বাধীন মতামত দিতে পারেন না। তার ওপর এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করা না গেলে, সংসদে কেবল আমরা স্তুতি শুনব। সংসদ সম্পর্কে জনগণ যেমন, তেমনি সদস্যরাও আগ্রহ হারিয়ে ফেলব,’ যোগ করেন মেনন।

তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে, অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর আগেই তারা মরিয়া আক্রমণ করবে। ওই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে ডান ও তথাকথিত বামও এক হচ্ছে।’