সংসদে শোকের ছায়া, নাসিম-শেখ আব্দুল্লাহর মৃত্যুতে আপ্লুত এমপিরা
পর পর দুইজন নেতাকে হারিয়ে সংসদে শোকের ছায়া বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, ১৪ দলের মুখপাত্র ও সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নাসিম এবং ধর্ম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহর মৃত্যুতে সংসদে শোক প্রস্তাব আনা হয়েছে।
রোববার (১৪ জুন) সকাল ১১টার পর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ সংসদের ৮ম অধিবেশন শুরু হয়। শুরুতেই দিনের সম্পূরক কার্যসূচি অনুযায়ী সাবেক মন্ত্রী ও একাদশ জাতীয় সংসদের খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ নাসিম এবং ধর্ম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহর মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন স্পিকার।
এরপর আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা শুরু করেন। আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, সংসদ সদস্য ডা. হাবিবে মিল্লাত, মোস্তফা লুৎফুল্লাহ প্রমুখ।
মতিয়া চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক পরিবারের কর্মীরা যখন জেলে যান, তাদের পরিবারের সদস্যরা বুকে কান্না নিয়ে জীবন যাপন করেন। নাসিম তার কর্মদক্ষতা, বিশ্বাস ও কর্ম রাজনীতির জন্য দিয়ে গেছেন। রাজনৈতিক কর্মীদের জন্য উদহারণ হয়ে থাকবেন তিনি।
মোহাম্মদ নাসিমের সঙ্গে রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের পিটুনির স্মৃতিচারণ করে বলেন, ২০০৮ সালে নির্বাচনের আগে ১ অক্টোবর আওয়ামী লীগ অফিসে বসে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, মতিয়া আপা এভাবে অফিসে বসে থেকে কী রাজনীতি করব? এরপর আমরা বেরিয়ে এলাম। নূর হোসেন চত্বরে যাওয়ার পর যেভাবে আমাদের ওপর নির্যাতন করা হলো। সেদিন বিএনপি সরকার সামান্য রাজনৈতিক ভব্যতা ভুলে গিয়েছিল। বেধরক লাঠির পেটার মধ্যে নাসিম বললেন, মতিায়া আপা মাথায় হাত দেন, আমিও দিচ্ছি, আপনি মাথা রক্ষা করেন। হাত ভাঙলে সমস্যা নাই, মাথায় আঘাত করলে ক্ষতি হবে। সেদিন ওভাবেই রাস্তায় পরে আমরা মাথার আঘাত ঠেকাতে চেষ্টা করছিলাম। যে ছবি এখনো দেখা যায়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে আপ্লুত কণ্ঠে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, আমরা একটা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। করোনা মহামারির মধ্যে অনেক প্রিয়জনকে হারিয়েছি। এ সংকটে আমার প্রিয়জনের জানাজায়ও অংশ নিতে পারছি না। আমার বড় কষ্ট, প্রিয় বন্ধু নাসিমকে হারিয়েছি। যুদ্ধ ক্ষেত্রেও যদি নাসিম মারা যেত, আমি তার লাশ না নিয়ে যেতাম না, সেও যেত না।
তিনি এসময় আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর স্ত্রী সাহানার আব্দুল্লাহর মৃত্যুতে স্মৃতিচারণ করে বলেন, এ কয়েক দিন একটি ভালো খবর পাই নাই। একে একে সব চলে যাচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, এখন অনেক ভালো দিন, ভালো সময়, দেশের অবস্থা ভালো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, কিন্তু আমরা যারা আওয়ামী লীগ করতাম, রাজনীতি করতাম, আমাদের কাছে কেউ কোনো দিন মেয়ে বিয়ে দিতে চায়নি। আমাদের অনিশ্চিত ভবিষৎ, আমাদের জেল জুলুম অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে, আমাদের কাছে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে চায়? আমাদের স্ত্রীরা কী অমানবিক জীবন যাপন করেছে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে ডা. হাবিবে মিল্লাত বলেন, আমাদের সিরাজগঞ্জের অভিভাবককে হারালাম। আমাদের ওপর থেকে বড় ছায়া চলে গেল। সব শেষ ১৯ মে তিনি সিরাজগঞ্জে ক্যাপটেন এম মনসুর আলী হাসপাতালে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার জন্য পিসিআর ল্যাব স্থাপন করেন। সেখানে আমিও ছিলাম। আমাদের সিরাজগঞ্জের মানুষ তাদের বটবৃক্ষকে হারাল।
ওয়ার্কার্স পার্টির মোস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, আমাদের ১৪ দলের সমন্বয়ক ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। তিনি সব সময় হাসি মুখে কথা বলতেন। কোনো অবস্থাতেই তিনি রাগ করতেন না।