করোনা মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্যমত গড়ার দাবি সংসদে
করোনা আল্লাহ কর্তৃক আজাব আখ্যায়িত করে সকলকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেছেন, করোনাভাইরাস এটা আল্লাহ কর্তৃক আজাব, গত ৭ মাস যাবৎ সারা পৃথিবীকে যেভাবে গ্রাস করেছে, সারা পৃথিবীকে বিপর্যস্ত করেছে, সারা পৃথিবীর চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ রূপে বিপর্যস্ত। তাই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সরকার অবশ্যই জাতীয় ঐক্যমত গড়ার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে আশা রাখি। জাতির মধ্যে যে ক্ষতগুলো সৃষ্টি হয়েছে সেই ক্ষত দূর করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করার দাবি জানাচ্ছি। সরকার জাতীয় ঐক্যমত তৈরি করে পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে এই দাবি করছি।
সোমবার (১৫ জুন) সকালে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ জাতীয় সংসদের ৮ম অধিবেশনে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি একথা বলেন।
হারুনুর রশীদ বলেন, ব্যাপক উদ্বেগ–উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে এই সংসদে আসছি। গতকাল দু’জন সদস্য ইন্তেকাল করেছেন। সারা বিশ্বকে নিঃসন্দেহে একটা কঠিন অবস্থায় পড়তে হয়েছে। এই সময় তিনি সকল প্রচার মাধ্যমে বেশি বেশি করে সূরা বাকারার ১৫৫ নং ১৫৬ আয়াত প্রচারের অনুরোধ জানান।
স্বাস্থ্য খাতের দুরবস্থার কথা তুলে ধরে বলেন, সারা দেশে দুর্বিসহ অবস্থা। স্বাস্থ্য খাতের অবস্থা কি? সরকারি হাসপাতালগুলোর কি অবস্থা? বিএসএমএমইউ এর মতো একটা স্পেশালাইজড হাসপাতাল সেখানে এখন পর্যন্ত কোভিডের চিকিৎসা হচ্ছে না, সেখানে আইসিইউ স্থাপন করা হয়নি। সেখানে কোনো পরীক্ষা নিরীক্ষা নাই। অথচ গণস্বাস্থ্যের মতো একটি প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন যাবৎ কোডিড-১৯ পরীক্ষার কিট উদ্ভাবন করেছে। সেই কিটের অনুমোদন দিচ্ছে না সরকার, কি কারণে দিচ্ছে না সেটারও কোনো ব্যাখ্যা নেই। অনুমোদন দিতে কেন এতো সময় লাগছে?
তিনি বলেন, গণস্বাস্থ্যের উদ্ভাবিত কিট অনুমোদন দিতে পারলে উপজেলা পর্যায়ে পরীক্ষা ছড়িয়ে দিতে পারতাম। গণস্বাস্থ্যের মতো প্রতিষ্ঠান যদি এ ধরনের কিট উদ্ভাবন করতে পারে বিএসএমএমইউ অভিজ্ঞ চিকিৎসক গবেষক সেখানে কি কাজ হচ্ছে? এমপি-মন্ত্রীরা কোভিড আক্রান্ত হলে সরকারি হাসপাতালে যাচ্ছে না হয় সিএমএইচ না হয় প্রাইভেট হাসপাতালে যাচ্ছে। এটাই বাস্তবতা।
বিএনপির এই এমপি বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একেবারেই ভঙ্গুর। একেবারেই ধ্বংস হয়ে গেছে। গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গত ১২ বছর ধরে ভারত নির্ভর, ভারত মুখী হয়ে গেছে। গত ১০ বছরে প্রায় কোটির অধিক মানুষ চিকিৎসার জন্য ভারত গেছে। কাজেই সরকারি উন্নয়ন ব্যয় হ্রাস করতে হবে। সরকারি উন্নয়ন ব্যয় হ্রাস করে মানুষের জীবন এবং জীবিকার দিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এই খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করার দরকার।
করোনার নমুনা পরীক্ষার হার বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে বলেন, ঘরে ঘরে উপসর্গ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বার বার বলছে পরীক্ষার হার বাড়ানো। আমরা ১৮ কোটি মানুষের দেশ, প্রতিদিন মাত্র ৮-১০ হাজার মানুষের নমুনা সংগ্রহ করছি তার ফলাফল প্রকাশ করছি। এটি অত্যন্ত সীমিত। এখন পর্যন্ত জেলা হাসপাতালগুলোতে আমরা কোন ধরনের পরীক্ষার ব্যবস্থা করিনি। জেলাগুলো থেকে নমুনা সংগ্রহের ১০ দিন পর ফলাফল প্রকাশ করা হচ্ছে। এটা দুঃখজনক।
বাজেটের বিশ্লেষণে হারুন বলেন, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত রাজস্ব আহরণ করা হয়েছে ৩৮ দশমিক ৩২ শতাংশ। তবে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩৬ শতাংশ। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আয়-ব্যয় প্রায় সমান সমান। মার্চ থেকে সমস্ত কিছু বন্ধ। অফিস দোকান পাট সমস্ত কিছু বন্ধ। চলতি অর্থবছরে ব্যাংকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৮ হাজার কোটি টাকা, সেখানে প্রায় ৮৩ হাজার কোটি টাকার মতো ঋণ নিয়েছে। বৈদেশিক সাহায্যের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৮ হাজার কোটি সেখানে পেয়েছি ৫৬ হাজার কোটি টাকা। বাকি টাকা কিভাবে সমন্বয় হবে বলা হয়নি।
অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, একটা সাংবিধানিক দায়িত্ব থেকে এরকম বক্তব্য আসতে পারে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন আগে খরচ করবো, টাকা কোথা থেকে আসবে জানি না। এটা বলতে পারে। বাজেট কি জন্য তাহলে? বাজেট দিয়েন না, টাকা খরচ করতে থাকেন। টাকা খরচ করার পর বাজেট দিয়েন।