পরীক্ষা নয় জ্বর মেপেই অধিবেশনে যোগ দিতে পারবেন এমপিরা
করোনা মহামারির ভেতর চলছে একাদশ জাতীয় সংসদের অষ্টম অধিবেশন। এরই মধ্যে নতুন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। তাছাড়া সম্পূরক বাজেটও পাস করা হয়েছে। চার কার্য দিবস সংসদ চলেছে, এর মধ্যেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন কয়েকজন মন্ত্রী, এমপি। পাশাপাশি একাধিক কর্মকর্তা কর্মচারীরও কোভিড-১৯ পজেটিভ।
এনিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক থাকলেও অধিবেশন যথা নিয়মেই চলানোর সিদ্ধান্ত সংসদ সচিবালয়ের। পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গ্যাপ দিয়ে দিয়ে অধিবেশন চালানোর অবস্থানেই আছে সংসদ সচিবালয়। এক্ষেত্রে যে সব মন্ত্রী, এমপি বা কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হবেন, তাদের আইসোলেশনে থাকতে হবে।
একের পর এক সংসদ সদস্য (এমপি) ও সংসদে কর্মরত কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় অন্যদের মধ্যেও ভয় কাজ করছে। ভয়াবহ সংক্রামক করোনা কার মাধ্যমে ছড়াবে, এ বিষয়ে যেহেতু সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য প্রমাণ নেই, তাই সবাই আতঙ্কে।
তাছাড়া সংসদ এলাকায় নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ ও আনসার সদস্যদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের করোনা পজেটিভ এসেছে। সব মিলিয়ে সংসদ এলাকায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরই মধ্যে ৯৩ কর্মকর্তা-কর্মচারীর করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে। যারা চলতি অধিবেশনে বিভিন্ন কাজে সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।
এছাড়া চলতি অধিবেশনে যোগ অংশ নেওয়া একজন মন্ত্রী ও একজন এমপি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কর্মকর্তাদের মধ্যে বেশিরভাগ নিজ বাসায় আইসোলেশনে রয়েছেন।
সংসদের চলতি বাজেট অধিবেশনে ১৫ জুন সম্পূরক বাজেট পাসের দিন অংশ নেওয়া বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির ১৭ জুন করোনা পজেটিভ আসে। তিনি ওই দিন সংসদে যোগদান ছাড়াও ১১ জুন বাজেট উপলক্ষে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকেও যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। ওই বৈঠকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী মিলে আরও ১০ জনের মতো সদস্য উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক কার্য পরিচালনার জন্য মন্ত্রিসভার ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রায় ১০ জন সচিব।
অধিবেশন ও মন্ত্রিসভায় যোগদানের পর করোনা পজেটিভ হওয়ায় অনেকের ভেতরেই শঙ্কা কাজ করছে। তারপরও অধিবেশন পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বসবে বলে জানা গেছে। বাজেট অধিবেশন শুরুর দিন সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান। গত ১৫ জুন শ্বাস কষ্ট নিয়ে সম্মিলিত সামারিক হাসপাতালে ভর্তির পর ১৬ জুন তার করোনা পজেটিভ আসে।
সংসদে যোগ দেওয়া মন্ত্রী ও এমপিদের করোনা পজেটিভ আসার পর অধিবেশন নিয়ে নতুন কোনো পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে প্রধান হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, না, অধিবেশন নিয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেই। অধিবেশন তো ২৩, ২৪ জুন। যাদের করোনা পজেটিভ, তারা তো এমনিতেই আসবেন না।
অন্যদের করোনা পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, এখনো দরকার নাই। আমরা তো একটা গ্যাপ মেইনটেইন করছি। এমনি ঢোকার সময় জ্বর পরীক্ষা করে ঢুকাচ্ছি। তাছাড়া সবাই মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরছে। পরীক্ষা তো আর বার বার করা যাবে না, আমাদের সংসদ চলবে অনেক দিন। একজন রোগী ১৪ দিন পর টেস্ট করাবেন। জ্বরের টেস্টটা দেখলেই তো বোঝা যায়।
করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে গত ১০ জুন বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। এবারের অধিবেশন যেহেতু ভিন্ন প্রেক্ষাপটে, তাই এমপিদের মধ্যে যারা বয়স্ক, তাদের আসতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। সিডিউল ধরে একদিন ৮০-৯০ জন সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে অধিবেশন চলবে। সাড়ে ৩০০ এমপির মধ্যে যাদের যাদের প্রয়োজন, শুধু তাদের যোগাদান করতে বলা হবে, তাও ভাগে ভাগে। অর্থাৎ একজন একদিন যোগদানের পর আবার কয়েক দিন পরে সুযোগ পেতে পারেন।
সবশেষ গত ১৫ জুন অধিবেশন শেষে আগামী ২৩ জুন পর্যন্ত সংসদ অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করেছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।