অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, গণ-অভ্যুত্থানের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন আপনারা। রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন। তিনমাস পার হয়েছে এখন পর্যন্ত যানমালের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এইভাবে চলতে পারে না। সমস্যা সমাধান করতে যদি না পারেন তাহলে দায়িত্ব নিয়েছেন কেনো? মানুষ আর বেশিদিন আপনাদের সময় দিবে না।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় যাদুঘরের সামনে গণসংহতি আন্দোলন আয়োজিত 'ভাসানীর পথ ধরে জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হোন' শীর্ষক কেন্দ্রীয় সমাবেশে এসব বলেন তিনি।
জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা বাংলাদেশে আর কোনো ভাবেই ফ্যসিবাদের পুনরুত্থান চাই না। আর পুনরুত্থান চায় না বলে এভাবে ছাত্র, শ্রমিক, জনতার যে স্বপ্ন এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতেই হবে। তার জন্য আমাদের ঐক্য দরকার। আমরা যদি জনগণের স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করতে চাই, আর কাউককে ফ্যসিস্ট হিসেবে দেখতে না চাই তাহলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
আমাদের ঐক্যবদ্ধ ভাবে সংবিধান, রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার একটা নতুন বন্দোবস্ত এবং গণতন্ত্রের ভিত্তিতে নির্বাচন ও তার জন্য লড়াই করতে হবে। আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। মাওলানা ভাসানীর দেখানো পথ অনুসরণ করি। এই দেশের খেটে খাওয়া মানুষ শ্রমিকেরা তাকিয়ে দেখুক শহীদের তালিকার দিকে। ১৬০০ এর উপরে ছাত্র শ্রমিক শহীদ হয়েছেন। শহীদদের বেশিরভাগ শ্রমজীবী মানুষ। ৫০০ এর উপরে চোখ অন্ধ হয়ে গেছে। ৫০ হাজারের উপরে আহত। শহীদদের বেশিরভাগ শ্রমজীবী মানুষ। এদেশের শ্রমিক খেটে খাওয়া মানুষদের মুক্তি না আসলে, জনগণের হাতে ক্ষমতা না থাকলে আর ক্ষমতা পাবে না। জনগণের কাছে জবাবদিহিতা না করলে কোনো সংবিধান গণতান্ত্রিক হতে পারে না। আর সেই কারণেই সমস্ত রাষ্ট্র নির্মাণ জনগণের ইচ্ছার ওপরে করতে হবে। আর এটা করতে হলে যে ঐক্য ৫ আগষ্ট সৃষ্টি হয়েছে সেই ঐক্যকে ধরে রাখতে হবে।
ফ্যসিস্টরা নানা ভাবে এখনও ষড়যন্ত্র করছে। যার অধিনে এই স্বৈরাচারী শাশন চালিয়েছে তারাও চায় যে কোনোভাবে এই দেশের ক্ষমতা যাতে তাদের হাতে থাকে। এই কারণে আমরা আপনাদের বলি অভ্যুথ্যানের রাজনৈতিক শক্তি সংহত করতে হবে। অভ্যুথ্যান যদি সফল করতে হয় যে অভ্যুথ্যান এখন দ্বিতীয় পর্যায়ে আছে নতুন রাষ্ট নির্মান, নতুন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নির্মাণ তবে তার শক্তি আপনাদের সংহত করতে হবে। আমরা গণসংহতি আন্দোলন বাংলাদেশের জনগনের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য, দেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বের জন্য আমরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। মাওলানা ভাসানী বলেছেন , জনগণের সংগ্রাম পারমাণবিক বোমার চাইতেও শক্তিশালী।
আমাদের আগামী দিনের যে রাষ্ট্র নির্মাণ, বাংলাদেশের একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, গণতান্ত্রিক সংবিধান আর তার ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন এর পথে গণসংহতি আন্দোলন লড়াই করবে। সেই লড়াইকে শক্তিশালী করার আহ্বান আমরা জানাই। আজকে বাংলাদেশের মানুষ এই সংগ্রামের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। এই রাষ্ট্র নির্মাণ তারা দেখতে চায়।
অন্তর্বর্তী সরকারকে বলি, গণ-অভ্যুত্থানের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন আপনারা। রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন। তিনমাস পার হয়েছে এখন পর্যন্ত যানমালের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এইভাবে চলতে পারে না। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। যারা আমাদের সন্তানদের হত্যা করেছে, গুম খুন লুটপাট করেছে এদেরকে গ্রেফতার করে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। দেশকে ফোকলা বানিয়ে দিয়ে গেছে। অর্থনৈতিক সংকট, দ্রব্যমূল্য, মানুষের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সংগতি নেই। খেটে খাওয়া মানুষ বিপদে আছে। এসব সমস্যা সমাধান করা আপনাদের দ্বায়িত্ব। সমস্যা সমাধান করতে যদি না পারেন তাহলে দ্বায়িত্ব নিয়েছেন কেনো?
তিনি বলেন, তিন মাস হয়ে গেছে, মানুষ আর বেশিদিন আপনাদের সময় দিবে না। অবিলম্বে মানুষ তাদের সমস্যার সমাধান চায়। মানুষের জানমালের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন। দ্রব্যমূল্য কমান, অর্থনৈতিক চ্যলেঞ্জ মোকাবিলা করেন। আর সমস্ত রাজনৈতিক দল, শিক্ষার্থী, শ্রেণি পেশার অংশীজনদের নিয়ে একসাথে বসে এই রাষ্ট্রের রুপান্তর সংস্কার নতুন বন্দোবস্ত আর আগামীদিনের নির্বাচনের রোডম্যপ ঘোষণা করেন। এটা বাংলাদেশের মানুষ এখন চায়। মানুষের চাওয়াা অনুযায়ী আপনাদের চলতে হবে। এটা পরিস্কার করে মনে রাখবেন।