‘বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলন’ নামে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ
দেশের বাম রাজনীতিতে ‘বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলন’ নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে।
শনিবার (৩ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন এই দলের ঘোষণা দেন দলটির সমন্বয়ক শুভ্রাংশ চক্রবর্তী। দলের প্রাথমিক সদস্যের সংখ্যা ৩৭ জন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ২০১৩ সালে বাসদ থেকে বেরিয়ে এসে কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরীর নেতৃত্বে বাসদ (মার্কসবাদী) গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু দল ঘোষণার কিছুদিন পরেই পুরনো দলের অনেক রাজনৈতিক সাংগঠনিক সমস্যা পুনরাবৃত্তি শুরু হয়। অতীতের বাসদ রাজনীতির যথার্থ মূল্যায়ন এবং ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন ঐ দলটি পরিচালনার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সে পথে হাঁটেনি। বরং কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অযৌক্তিক, মনগড়া সিদ্ধান্ত মূল্যায়নের নামে দলের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হলাে। ফলে ভুল থেকে বের হয়ে আসা এবং পেটিবুর্জোয়া রাজনীতির সাথে ছেদ ঘটানাের কোন সম্ভাবনা থাকলাে না। মূল্যায়নের ভিত্তিতে আমরা বলেছিলাম, বাসদ (মার্কসবাদী) অতীতের পেটিবুর্জোয়া রাজনীতির সাথে ছেদ ঘটাতে পারেনি। শ্রমিক শ্রেণির পার্টি পরিচালনার মূলনীতি গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীকতা ও চােখ নেতত্ত্বের চর্চার ভিত্তিতে দল পরিচালিত হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, সাধারণ সম্পাদকের স্বেচ্ছাচারিতা, সমালােচনা গ্রহণ না করে দ্বিমত পােষণকারীদের কোণঠাসা করা, গণসংগঠনে পার্টি নেতৃত্বের অযাচিত হস্তক্ষেপ ইত্যাদি কর্মকাণ্ড আমাদের মূল্যায়নের যৌক্তিকতা প্রমাণ করেছিল। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রেও গণআন্দোলন, শ্রেণি সংগ্রামের উদ্যোগী না হয়ে গতানুগতিক কর্মসূচির মধ্যে দল গণ্ডীবদ্ধ হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় নির্ধারিত ফোরামের ১৬ নেতা কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্তী লিখিত বক্তব্যের ভিত্তিতে দলের কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন করে সংগ্রামের সূচনা করার আহ্বান জানান। কিন্তু সে আহ্বানে কর্ণপাত না করে কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্তীসহ ১৬ জন নেতাকে বহিষ্কার করা হলে দল ভাঙনের মুখে পড়ে।
শুভ্রাংচ চক্রবর্তী বলেন, বাংলাদেশে অনেক বামপন্থী রাজনৈতিক দল থাকলেও এর কোনটাই সঠিক মার্কসবাদী বিপ্লবী দল হিসেবে গড়ে ওঠেনি। একটি বিপ্লবী দল গড়ে তােলার লক্ষ্যে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা নিজেদের মধ্যে অলাপ আলােচনা করছি। কমিউনিস্ট পার্টি পড়ার নীতিগত ও পদ্ধতিগত সংগ্রামের নানা দিক এবং অতীত রাজনীতির অভিজ্ঞতা নিয়ে আমরা কথা বলছি। এটি একটি পার্টি গঠন-প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়াকে আরও মূর্ত করার জন্যে একটি নতুন নামকরণ এবং একটি আনুষ্ঠানিক ঘােষণা প্রদান করা প্রয়ােজন মনে করেছি। সে প্রয়ােজন থেকেই আমরা নতুন নাম ‘বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলন’ ঘােষণা করছি। ইংরেজিতে এটি Communist Movement Of Bangladesh- CMB.
তিনি আরও বলেন, বিপ্লবী দলের অত্যাবশ্যকীয় শর্তাবলী পূরণ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলন-পার্টি গঠন প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত হবে। পুঁজিবাদী শােষণমূলক ব্যবস্থা উচ্ছেদ করে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের লক্ষ্যে আমরা কাজ করবাে। শ্রমিক শ্রেণির বিপ্লবী মতাদর্শ মার্কসবাদ-লেনিনবাদের ভিত্তিতে গণ-আন্দোলন, শ্রেণিসংগ্রাম এবং দল গড়ার নীতিগত ও পদ্ধতিগত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ পার্টি গঠন-প্রক্রিয়া এগিয়ে যাবে। আমরা অতীত কাজের মূল্যায়নের ভিত্তিতে ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে তা থেকে মুক্ত হওয়ার দৃঢ় সংগ্রামে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকবাে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মঞ্জুরুল আলম মিঠু, কমরেড অপু দাশগুপ্ত, কমরেড দলিলুর রহমান দুলাল, সত্যজিৎ বিশ্বাস, কমরেড সুশান্ত সিনহা এবং কমরেড আমিরুল ইসলাম।