আওয়ামী লীগের প্রশ্নে বিন্দুমাত্র ছাড় দেব না বলে জানিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, ‘দুই-একটি রাজনৈতিক দল চায় আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে আসবে, আর আমরা কি আঙুল চুষবো! আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নাম যারা মুখে নিবে, তাদের প্রতিহত করতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রশ্নে বিন্দুমাত্র ছাড় দেব না। প্রয়োজনে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও বিচারের দাবিতে ঢাকায় মহা সমাবেশ করবো। আপনাদেরকে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দানে চট্টগ্রাম জেলা গণঅধিকার পরিষদ আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নুরুল হক নুর এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ছাত্রজনতা কেন জীবন দিয়েছে, তাদের প্রত্যাশা কী ছিল সেটা আমরা সবাই জানি। শুধুমাত্র একটি নির্বাচনের জন্য বা কাউকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য ছাত্রজনতা জীবন দেয় নাই। তাই নির্বাচন নিয়ে, ক্ষমতায় যাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে অস্থির না হওয়ার জন্য অনুরোধ করব। ৫৩ বছরের রাষ্ট্রব্যবস্থা ব্যর্থ এবং অকার্যকর হয়েছে বিধায় এই জুলাই বিপ্লয়ে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, নতুন রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য জীবন দিয়েছে ছাত্রজনতা। একটি ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, সেক্রিফাইস করেছে। যার ফলে আজকের পরিবর্তীত এই বাংলাদেশ। ভুলে গেলে চলবে না কোন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে বা ডাকে ছাত্রজনতা এই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেয় নাই। ফ্যাসিবাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিবর্তন ব্যতীত আগামীতে কোন নির্বাচন হবে না, হতে পারে না।
নুরুল হক নুর বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের নেতাদের আমরা ৫৩ বছর দেখেছি। কাজেই আর দুই-এক বছর প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দেখতে চাই। তারা কী কী করে। আমাদের বিশ্বাস, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যে আন্তর্জাতিক পরিচিতি, দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে টেনে তুলতে পারবেন। তিনি ছয়টি সংস্কার কমিশন করে দিয়েছেন। নির্বাচন, গণমাধ্যম, বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসনের সংস্কার গণআন্দোলনের গণআকাঙ্ক্ষা। এ সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না।
গণঅধিকার পরিষদ সভাপতি আরও বলেন, অবশ্য সরকারকে ক্ষমতায় থাকার প্রশ্নে আমরা ব্ল্যাংক চেক দেবো না। আপনারা ভালো কাজ করবেন, আমাদের সমর্থন পাবেন। জনবিরোধী কমকাণ্ড করলে, জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে, এক সেকেন্ডও সময় দেবো না। ৫৩ বছর পর আমরা যে সুযোগ পেয়েছি সেই সুযোগ হেলায় ফেলায় নষ্ট করা যাবে না। রাতারাতি নির্বাচন হলে এই ব্যবস্থার পরিবর্তন হবে না।
সংবিধান পরিবর্তন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংবিধান পরিবর্তনের দাবি এসেছে। সংবিধান নির্বাচবত সরকারও পরিবর্তন করবে, অন্তবর্তী সরকারও পরিবর্তন করবে। নির্বাচনে একদল কিংবা এক দলের নেতৃত্বে কোনো জোট বা সরকার গঠন করলে শুধুমাত্র তাদের সমর্থন সেখানে থাকবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিএনপি, জামায়াত, ডান-বাম সকলের সমর্থন আছে। কাজেই এই সরকারের মেন্ডেড নেই এই কথা বলার ভিত্তি নেই। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মেন্ডেড নিয়ে এই অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে।
ভিপি নুর বলেন, ছাত্রজনতার গণভ্যুত্থানে যে দমন-পিড়ন, হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, সেই ফ্যাসিবাদকে পুনর্বাসন করার জন্য কোনো কোনো রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে স্পেস দেওয়ার কথা বলছে। আমরা এমপি-মন্ত্রী হতে বা ক্ষমতায় বসতে জীবন দেয়নি। আন্দোলনে আমাদের ১৩ জন নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। আওয়ামীলীগকে পুনর্বাসনের পক্ষে যারা অবস্থান নিবে, আমরা বলতে চাই ফ্যাসিবাদের দোসর ওরা। এবং আমরা বলতে পারি আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন ঠেকানোর জন্য দ্বিতীয় বিপ্লবের জন্য আবার যদি ডাক দিতে হয় এই চট্টগ্রামের মাটি থেকে যেন সেই ডাক আসে।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণঅধিকার পরিষদের (জিওপি) সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মঞ্জুর মোর্শেদ মামুন, পেশাজীবি অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খালিদ হোসেন, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা প্রমুখ।