জাপার জোরালো প্রচারণা ৪৯ আসনে সীমাবদ্ধ
সমঝোতায় (নৌকা বিহীন) পাওয়া ২৬ আসনের দশটিতে শঙ্কা দেখছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। সমঝোতার বাইরে থাকা আসনগুলোর মধ্যে ২৩টি আসন সম্ভাবনাময় হিসেবে চিহ্নিত করেছে দলটি।
যারা নির্বাচনী মাঠে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। অর্থাৎ মোট ৪৯টি আসনে জোরালো নির্বাচনী কার্যক্রম চলছে দলটির। এসবের বাইরে আরও ৩৮টি আসনে প্রার্থীরা প্রচারণায় রয়েছে, তবে তাদের উপস্থিতি উল্লেখ করার মতো নয়। তাদের প্রচারণাকে নামকাওয়াস্তে বলে দাবি করেছে কেউ কেউ।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ মুহূর্তে এসে ২৫টি আসন থেকে আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থীদের সরিয়ে নেয়। আর আগে থেকেই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেয়নি। আওয়ামী লীগ ছেড়ে দিলেও নিজ দলের স্বতন্ত্রদের কারণে রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া), পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া), ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) ও নীলফামারী-৩ (জলঢাকা) আসন নিয়ে সংকটে রয়েছে জাপা। এসব আসনে জাতীয় পার্টির বর্তমান এবং সাবেক সংসদ সদস্যরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। এর বাইরে হবিগঞ্জ-১, মানিকগঞ্জ-১ আসনসহ ৬টি আসন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে দলটি।
সমঝোতায় বাইরে ২৩ আসনে দলটির প্রার্থীরা তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিচ্ছেন। তারা নির্বাচনী প্রচারণাতেও রয়েছে জোরালো ভূমিকায়। এই তালিকার শুরুতেই রয়েছে ৫ জন বর্তমান সংসদ সদস্য, যারা বিগত নির্বাচনে জোটের মনোনয়ন পেলেও এবার নানা কারণে বঞ্চিত হয়েছেন।
এই তালিকায় সবার উপরে রয়েছেন ঢাকা-৪ আসনে দলটির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। তিনি বিগত দু’টি সংসদে ঢাকা-৪ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিগত দু’টি সংসদে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকাও। তিনি এবারও প্রার্থী হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে। বরিশাল-৬ আসনে বিগত দু’টি সংসদ নির্বাচনে জোটের মনোনয়ন পেলেও এবার নৌকার সঙ্গে লড়তে হচ্ছে প্রেসিডিয়াম সদস্য রত্মা আমিন হাওলাদারকে। সুনামগঞ্জ-৪ আসনে মহাজোটের টিকেটে এমপি নির্বাচিত হলেও এবার ছিটকে গেছেন পীর ফজলুর রহমান। এবার নৌকার সঙ্গে টক্কর দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। তারা প্রত্যেকেই তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইঙ্গিত দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান যমুনা গ্রুপের কর্ণধার অ্যাড. সালমা ইসলাম এমপি এবারও লড়ছেন ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসন থেকে। বিগত ২০১৮ সালের নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরে যান আওয়ামী লীগ প্রার্থী সালমান এফ রহমানের কাছে। যেই জিতুক হাড্ডাহাড্ডি লাড়াইয়ের কথা জানিয়েছেন ভোটাররা।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে জাপার কেন্দ্রীয় ভাইস-চেয়ারম্যান ব্যবসায়ী সাইফুর রহমান ব্যাপক প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন। ভোররাত থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিরামহীনভাবে চলে তার প্রচারণা। আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী এবং তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারের চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছেন।
নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে জাপার প্রার্থী হয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি আলমগীর শিকদার লোটন। সাবেক এই ছাত্রনেতাও ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে আলোচনায় এসেছেন। জাপার দুর্গখ্যাত রংপুর জেলার রংপুর-২ আসনে আনিসুল ইসলাম মন্ডল, রংপুর-৪ আসনে সেলিম বেঙ্গল, রংপুর-৫ আসনে আনিসুর রহমান, রংপুর-৬ আসনে নূর আলম মিয়া যাদু, গাইবান্ধা-৩ আসনে মইনুর রাব্বী চৌধুরী ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিচ্ছেন।
প্রচারণা ও জনপ্রিয়তার মাধ্যমে আলোচনায় থাকা প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছে শেরপুর-১ আসনের মাহমুদুল হক মনি, জামালপুর-২ আসনে মোস্তফা আল মাহমুদ, টাঙ্গাইল-৫ আসনে মোজাম্মেল হক, কুমিল্লা-১ আসনে আমীর হোসেন, কুমিল্লা-৭ আসনে লুৎফর রহমান খোকন, জামালপুর-৫ আসনে জাকির হোসেন, সিলেট-৬ আসনে সেলিম উদ্দিন, সিলেট-২ আসনে সাবেক এমপি ইয়াহইয়া চৌধুরী।
অন্যদিকে ক্ষোভ হতাশা নিয়ে নির্বাচনী মাঠ থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন অনেক প্রার্থী। ৩০ ডিসেম্বর বরিশাল-২ ও ৫ এবং গাজীপুর-১, ২ ও ৪ আসনের প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারণা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। জাতীয় পার্টির (জাপা) ঠিক কতজন প্রার্থী এখন নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় রয়েছে তার কোনো উত্তর এখন কারো কাছেই নেই। কারণ প্রতিদিনেই নির্বাচনী মাঠ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে প্রার্থীরা।
বড় একটি গ্রুপ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়ার প্রস্তুতি নিলেই সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে তারা সরে এসেছেন। জাপা ২৯৪ আসনে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন দিলেও সিলেট-৪ আসনের প্রার্থী প্রেসিডিয়াম সদস্য এটিইউ তাজ রহমান, কক্সবাজার-২ আসনের প্রার্থী কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহমুদুল করিম, চাঁদপুর-৫ আসনে জাতীয় কৃষক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ওমর ফারুক, কিশোরগঞ্জ-২ আসনে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য খুররম ভূঁইয়া, মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি জয়নাল আবেদীন এবং ফেনী-১ আসনের প্রার্থী ফজলুল করিম মনোনয়নপত্র দাখিল থেকে বিরত থাকেন। নির্বাচন কমিশন বাছাই শেষে ২৭২ আসনে জাপার প্রার্থীদের বৈধ ঘোষণা করে। ৬ জন আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পেলে সংখ্যা দাঁড়ায় ২৭৮-এ। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে (১৭ ডিসেম্বর) কয়েকজন প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। শেষ পর্যন্ত ২৬৫ আসনে প্রার্থী প্রতীক বরাদ্দ পান বলে জাপা সূত্র জানিয়েছে।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ২৬ আসনে সমঝোতা করে জাতীয় পার্টি। যখন ওই ঘোষণা আসে তখন আর প্রত্যাহারের সুযোগ ছিল না। ওই ঘোষণার পর থেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন ২৬ আসনের বাইরে থাকা সাধারণ প্রার্থীরা। ওই প্রার্থীরা মনে করছেন, তাদের অংশগ্রহণ করার বিষয়টি এখন শুধুমাত্র নির্বাচনে বৈধতা দেওয়ার প্রশ্নে। সে কারণে তারা নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে প্রচারণা চালাতে রাজি নন। তারা কয়েকদিন বনানীতে ধর্না দিয়ে এখন রণেভঙ্গ দিয়েছেন।