জাপার পতন, মহাসচিব সোমবার জানাবেন প্রতিক্রিয়া
একাদশ সংসদের তুলনায় আসন সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে জাতীয় পার্টির। একাদশে ২২টি আসনে জিতলেও এবার মাত্র ১১ আসনে জিতে চলেছে দলটি।
চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষিত না হলেও দলটির পক্ষ থেকে ১১ আসনে বিজয়ীর তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। অন্যদিকে নানা কারচুপির অভিযোগ এনে ভোটের দিনেও ১১ জন প্রার্থী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু কোন প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি হন নি। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আজকে নয়, প্রতিক্রিয়া জানাবো আগামীকাল (৮ জানুয়ারি)।
জাতীয় সংসদের বিরোধীদলের আসনে থাকা দলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এতো নাজুক ফলাফলের মুখোমুখী হয় নি। এর আগে সবচেয়ে কম আসনের রেকর্ড ছিল ২০০১ সালে ১৪ আসন। ২০০৮ সালের মহাজোট থেকে নির্বাচন করে জাতীয় পার্টি। ওই নির্বাচনে ২৭ আসনে বিজয়ী হয়েছিলেন দলটির প্রার্থীরা আর ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় ২০ জন এবং নির্বাচনের মাধ্যমে আরও ১৩জনসহ ৩৩ জন প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছিলেন।
২০১৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ২৬টি আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ, সব মিলিয়ে ২৭৮টি আসনে প্রতিদ্বন্দিতা করে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। এরমধ্যে জোটগতভাবে ২১টি আরও উন্মুক্ত থেকে একটি আসনে বিজয়ী হয় জাতীয় পার্টির প্রার্থী।
এবারের নির্বাচন নিয়ে শুরু থেকেই ধোঁয়াশাচ্ছন্ন ছিল জাতীয় পার্টির ভূমিকা। নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে দলটির অবস্থান ছিল রহস্যজনক। ইলেকশন কমিশন ১৫ নভেম্বর তফসিল দিলেও নির্বাচন প্রশ্নে পার্টির অবস্থান ঝুঁলে রাখা হয় ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত। ২০ নভেম্বর দলীয় মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু করলেও নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি অন্ধকারে রাখা হয়।
মনোনয়ন ফরম বিক্রির দিনগুলোতে পার্টির পক্ষ থেকে বলা হতো নির্বাচন প্রক্রিয়া এগিয়ে রাখা হচ্ছে, জাপা নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা পরে জানানো হবে। অবশেষে ২২ নভেম্বর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানান দলটির মহাসচিব। ২৭ নভেম্বর ২৯৪ আসনে দলীয় প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করে। অন্যদিকে ছেলে সাদ এরশাদসহ অনুসারীদের আসন নিশ্চিত না হওয়ায় জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ২৯ নভেম্বর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।
মনোনয়ন দাখিলের পর আওয়ামী লীগের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে দলটির নেতারা। আসন ভাগা-ভাগি নিয়ে নানা রকম গুজব ছড়তে থাকে। ওই দিনগুলোতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে আবার ধোঁয়াশা ছড়িয়ে দেয় দলটির নেতারা। রটে যায় নির্বাচন বর্জনের খবর, বিষয়টি পার্টির পক্ষ থেকেও রহস্যবৃত্ত রাখা হয়। এ কারণে দলটির প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠ থেকে হাত গুটিয়ে বসে থাকে ১৭ ডিসেম্বর (মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার) পর্যন্ত। এতে করে অনেকেই নির্বাচনী দৌড় থেকে পিছিয়ে পড়ে যান।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ মুহুর্তে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ২৬আসনে সমঝোতা করে জাতীয় পার্টি। ওই আসনগুলো থেকে নৌকা সরিয়ে নেওয়া আওয়ামী লীগ। ওই ঘোষণার পর থেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন ২৬ আসনের বাইরে থাকা সাধারণ প্রার্থীরা। অনেকে মনে করছেন, তাদের অংশগ্রহণ করার বিষয়টি এখন শুধুমাত্র নির্বাচনে বৈধতা দেওয়ার প্রশ্নে। সে কারণে তারা নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে প্রচারণা চালাতে রাজি ছিলেন না। ৩০ডিসেম্বর পর্যন্ত অনেক প্রার্থী পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে ঘোরাঘুরি করেছিলেন দলীয় ফান্ডের বিষয়ে। কিন্তু সাড়া না পেয়ে ক্ষোভ হতাশা নিয়ে নির্বাচনী মাঠ থেকে নিষ্কিয় হয়ে পড়েছেন। তারা অভিযোগ করেছেন পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের সাক্ষাত পাইনি। তাদেরকে ফোন করলেও রিসিভ করেননি।
আবার নির্বাচনে পার্টির সমন্বয়হীনতা ছিল চোখে পড়ার মতো। পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিব নিজ নিজ আসনে ব্যস্ত ছিলেন। অন্য আসন নিয়ে খোঁজ নেওয়া কিংবা সেখানে কেন্দ্রীয় টিম পাঠানোর বিষয়ে আগ্রহ দেখান নি। পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের রংপুরে থাকলেও আশপাশের জেলায় যান নি। প্রার্থীরা যা পেরেছেন নিজের মতো করে চালিয়েছেন। অনেক প্রার্থী শেষ মুহুর্তে গিয়ে আর্থিক সংকটের কারণে দৌড় থেকে ছিটকে গেছেন।