সরকারের বীভৎস রূপ ফুটে উঠেছে: মির্জা ফখরুল

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বর্তমানে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের চেহারা কী বীভৎস রূপ ধারণ করেছে, সাংবাদিক নির্যাতন ও গণহত্যার মধ্য দিয়ে তা ফুটে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, সব হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করে দেশ এবং দেশের মানুষকে অভিশাপ থেকে মুক্তি দিন।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২৭ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ডাকসুর সাবেক ভিপি, গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হক নুরুকে আদালতে রিমান্ড শেষে নিয়ে আসার সময় গণমাধ্যমে যে চিত্র এসেছে তা যেকোনো বিবেকবান মানুষকে আলোড়িত করবে। রিমান্ডে এমনভাবে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে যে তিনি দাঁড়াতেই পারছে না। মধ্যযুগীয় নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে অবৈধ সরকার। কোটা আন্দোলনের অন্যতম তিন সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা তুলে নিয়ে গিয়েছে। এই ধরনের বর্বরোচিত অমানবিক কাজ পুরো সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দ্য মিরর এশিয়ার ঢাকা প্রতিনিধি সাঈদ খানকে গত ২৫ জুলাই গভীর রাতে তার মগবাজারস্থ বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল গ্রেফতার করে এবং রাততর নির্যাতন চালায়। তারপর সাঈদ খানকে মেট্রোরেল পোড়ানোর বানোয়াট মামলায় জড়িয়ে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। কয়েকদিন পূর্বে গুলিবিদ্ধ বাংলাদেশ ন্যাপের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নয়াব আলীর একটি চোখ অন্ধ হয়ে গেছে। বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, জহিরউদ্দিন স্বপন, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীসহ এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫ জন জাতীয় নেতা ও অসংখ্য নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে কারান্তরীণ করা হয়েছে। গতকাল যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনের বাসায় তল্লাশি করে তাকে না পেয়ে তার ভায়রা, শ্যালক ও শ্যালকের ছেলেকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে। গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফকে তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও ইউট্যাবের মহাসচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খানসহ অসংখ্য মানুষের বাড়ি বাড়ি ডিবি পুলিশ তল্লাশি করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, অবৈধ পন্থায় সরকার ক্ষমতায় আসার পরে অবৈধভাবে ক্ষমতা আগলে রাখার জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে ক্ষমতার মসনদ ধরে রেখেছে। তার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল, সেনাবাহিনীর ৫৭ জন চৌকস অফিসারকে হত্যার ঘটনা, সাজানো রায় দিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ বিরোধী দল ও মতের নেতা-কর্মীদেরকে মিথ্যা মামলায় সাজা প্রদান, ৫০ লাখ নেতা-কর্মীর নামে বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দিয়ে হয়রানি এবং খুন-গুম, রিমান্ডের নামে নির্যাতন অব্যাহত রাখা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকার সৃষ্ট সন্ত্রাসের মাধ্যমে কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে হত্যা-নির্যাতনের পর এখন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে সাজানো মামলা দায়েরের মাধ্যমে বিরোধী মতের নেতাদেরকে হত্যা, গ্রেফতার, গুলি করে আদালতে উঠানোর আগেই নির্যাতন করে পঙ্গু করা হচ্ছে এবং বিচার বিভাগকে দিয়ে রিমান্ডে নিয়ে আবারো নির্যাতন চালানো হচ্ছে। সেখানে রিমান্ডের ন্যূনতম আইন মানা হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, গ্রেফতারকৃতদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে কল্পকাহিনী রচনা করা হচ্ছে। বিরোধী দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষকে গ্রেফতারের পাশাপাশি এখন কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকেও ব্লক রেড দিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে, আইডি কার্ড দেখামাত্রই গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কারীদেরকে গুম করে কিভাবে নির্যাতন করে দমন করার চেষ্টা করা হয়েছে তা তাদের শরীরের ক্ষতচিহ্ন দেখলেই অনুধাবন করা যাচ্ছে।

সরকার প্রথম থেকেই সরকারি গুন্ডাবাহিনীকে কোটা সংস্কার আন্দোলন দমনে লেলিয়ে দেয়। তারা এতই রক্ত পিপাসু হয়ে গেছে আরও কেন হতাহত ও আরো বেশি রক্তপাত হলো না কেন এর দায় এবং ব্যর্থতায় বিভিন্ন কমিটি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে যা রংপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী নেতাদের বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তার বিরুদ্ধে সরকার প্রধানসহ আওয়ামী নেতারা এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন, কাল্পনিক কল্পকাহিনী রচনার মাধ্যমে জনগণের সামনে তুলে ধরছে, কিন্তু দেশের জনগণ তা বিশ্বাস করে না। তারেক রহমানকে নিয়ে সরকারের মিথ্যা প্রচারণার তীব্র নিন্দা জানান মির্জা ফখরুল।

ছাত্রদের গুলি করে পঙ্গু করে দেয়ার পর তাদের হাসপাতালে দেখতে যাওয়া ও মায়া কান্না এবং সাহায্য করবার কথা বলা জনগণকে প্রতারণা করার আর একটি নজির। তাই এই সরকারকে বলবো-সকল হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করে দেশ এবং দেশের মানুষকে অভিশাপ থেকে মুক্তি দিন।

সরকার জনরোষে পড়ার ভয়ে জোর করে ক্ষমতাকে আঁকড়ে ধরে রাখার লক্ষ্যে দেশে কারফিউ দিয়ে রেলসহ সকল যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে রেখেছে, জনগণকে কর্মহীন রেখে অনাহারে দিনাতিপাত করতে বাধ্য করছে, দ্রব্যমূল্য দিন দিন মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এই অবস্থা থেকে জাতি দ্রুত মুক্তি চায়, এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সমাধান।

২৫ জুলাই রাতে গ্রেফতারকৃত সাঈদ খান একজন মেধাবী সাংবাদিক। তিনি সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের ওপর সরকারের বল প্রয়োগ ও নির্বিচারে গণহত্যার খবর অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সাথে পরিবেশন করে আসছিলেন দ্য মিরর এশিয়ায়। একই সাথে তিনি ট্রেড ইউনিয়ন নেতা হিসেবে সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে অত্যন্ত সোচ্চার ছিলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সরকার পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে গভীর রাতে তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং রাতভর তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়।

বর্তমানে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের চেহারা কী বীভৎস রূপ ধারণ করেছে সাংবাদিক নির্যাতন ও গণহত্যার মধ্য দিয়ে তা ফুটে উঠেছে। সরকারি বাহিনীর হাতে মাত্র এক সপ্তাহে চার সাংবাদিক হত্যা এবং দুই শতাধিক সাংবাদিক আহত হওয়ার ঘটনার বিচার না করে প্রতিবাদী সাংবাদিক নেতা সাঈদ খানকে গ্রেফতার সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের একটি কু-নজির। কথায় কথায় বিরুদ্ধ মতাবলম্বীদের খুন, গুম, বিনা বিচারে হত্যা ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে হত্যা, মিথ্যা ও গায়েবি মামলা, বল প্রয়োগ করে প্রতিবাদী কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেয়ার মধ্য দিয়ে সরকার দেশে প্রতিহিংসার রাজনীতিকে চরম পর্যায়ে নিয়ে গেছে। সরকারের প্রতিহিংসা থেকে সাংবাদিকরাও রেহাই পাচ্ছেন না। এ সরকারের আমলে ৬৬ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। নির্যাতনের শিকার হয়েছেন শত শত সাংবাদিক। অনেক সাংবাদিককে প্রাণ বাঁচাতে দেশান্তরিত হতে হয়েছে। সম্পাদক ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে একটা ভীতির পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে।

সাংবাদিক সাঈদ খানকে গ্রেফতার এবং বানোয়াট মামলায় রিমান্ডে নেয়ার মাধ্যমে সরকারের সমালোচক, প্রতিবাদী কলামিস্ট ও বিবেকবান লেখক-বুদ্ধিজীবীদের বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার এক অশুভ বার্তা জানান দিলো। সরকার কেবল বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদেরই নয়, তারা এখন টার্গেট করেছে ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরকে। অন্তহীন ক্ষমতালিন্সার জন্য এরা প্রতিবাদী সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাই প্রতিবাদী সাংবাদিক, নির্ভিক লেখক ও অকুতোভয় গণতন্ত্রকামী বরেণ্য বৃদ্ধিজীবীদের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারের খেলায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আমরা সরকারকে এই ভয়ঙ্কর গ্রেফতার খেলা বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি।