সমন্বয়কদের চাপ প্রয়োগ করে কর্মসূচি প্রত্যাহারের অভিযোগ ফখরুলের

  • নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কদের ডিবি কার্যালয়ে তুলে নিয়ে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে কর্মসূচি প্রত্যাহার করার অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ সোমবার (২৯ জুলাই) বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ অভিযোগ করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, সমন্বয়কারীদেরকে ডিবি কার্যালয়ে তুলে নিয়ে চাপ প্রয়োগ করে নির্যাতনের মাধ্যমে কর্মসূচি প্রত্যাহার করা যায়। কিন্তু আবেগ-অনুভূতি এবং সঙ্গীদের রক্ত মাখা শার্টের গন্ধ শিক্ষার্থীদের বিবেককে সবসময় তাড়া করবে। সুযোগ পেলেই তারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে সেটির বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে।

বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসায় লুটপাটের অভিযোগ তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম, ইন্টারনেট সংযোগ ধীরগতির কারণে দেশব্যাপী সরকারের নির্মম ও নির্দয় অত্যাচার এবং নিপীড়নের সব তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে জানা সম্ভব হচ্ছে না। তবে বিভিন্নভাবে যে সকল তথ্য আসছে সেগুলো রীতিমতো লোমহর্ষক এবং মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ছাত্র আন্দোলনের কারণে সাধারণ ছাত্র-জনতা, বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীদের কারফিউ চলাকালে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে গ্রেফতার করানো হচ্ছে। অনেককে তুলে নিয়ে গেলেও তাদের খোঁজখবর পাওয়া যাচ্ছে না। গণগ্রেফতারের নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দিয়ে নেতাকর্মীদের বাসায় ছিনতাই ও লুটপাটের দৃশ্য ইতিমধ্যে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।

বিজ্ঞাপন

দমন নিপীড়ন বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী এবং গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসু’র সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরকে নির্যাতনের পর আবারও নির্যাতন চালানোর উদ্দেশ্যে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে, যা গভীর উদ্বেগ-উৎকন্ঠার সৃষ্টি করেছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি রিয়াদ ইকবাল এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ মাহতাব গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়ার পর এখনও পর্যন্ত তাদের কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। দেশব্যাপী নিরীহ ছাত্র-জনতা এবং বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনসহ অন্যান্য বিরোধী দলের নেতাকর্মী, সাংবাদিক ও পেশাজীবিদেরকে নির্বিচারে গ্রেফতার, গুম করে রাখা হয়েছে। নির্যাতনের পর পুনরায় নির্যাতনের লক্ষ্যে সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে বারবার রিমান্ডে নেয়া হয়। গ্রেফতারকৃতদের ওপর সরকারের অত্যাচার-নির্যাতন চালানোর ঘটনাকে বর্বরোচিত আখ্যায়িত করে অবিলম্বে এসব দমন নিপীড়ন বন্ধ করার আহ্বান জানান তিনি।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, এর আগেও এসব অন্যায়, অত্যাচার, আটক, নির্যাতন ও নিপীড়নের প্রতিবাদ করা হয়েছে। কিন্তু ফ্যাসিষ্ট ও কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী ভোটারবিহীন সরকার তা কর্ণপাত করেনি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা সরকারের এসব মানবাধিকার বিরোধী কর্মকাণ্ডে প্রতিবাদ করে তা বন্ধ করার আহ্বান জানালেও সরকার তা অব্যাহত রেখেছে এবং দিন দিন তা বৃদ্ধি করছে।

কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলন অনির্বাচিত ফ্যসিষ্ট সরকারের ক্ষমতার ভীত নড়িয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আন্দোলন দমনের নামে নিষ্ঠুরভাবে রাষ্ট্রীয় ও দলীয় সন্ত্রাস চালিয়ে শত শত ছাত্র-জনতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। যারা নিহত কিংবা আহত হয়েছেন তাদের অধিকাংশই আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় সন্ত্রাসী পেটোয়া বাহিনীর ছোড়া গুলিতে হয়েছেন। পত্রিকার তথ্যমতে, রাজধানীর ৩১টি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতের সংখ্যা ৬ হাজারের অধিক। যেসব ছাত্র-জনতকে হতাহত করা হয়েছে তাদের পরিবারকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে, সরকারের নির্দেশে মৃতদের ময়না তদন্ত রিপোর্ট পরিবর্তন করা হচ্ছে বলে অনেক ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ করেছে। অনেককে ময়না তদন্ত ছাড়াই আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করা হয়েছে।

সরকার কর্তৃক প্রকাশিত চলমান আন্দোলনে নিহতদের নাম ও সংখ্যা গ্রহণযোগ্য নয়- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে এর সংখ্যা অনেক বেশী। কিশোর ও আগে নিহতের নাম এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। অবিলম্বে সঠিক তালিকা প্রকাশের দাবি ও জনদাবীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সরকারের পদত্যাগ করা উচিৎ বলে জানায় বিএনপির মহাসচিব। একই সঙ্গে গ্রেফতারকৃত বিএনপি ও বিরোধী দলের সকল নেতৃবৃন্দসহ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করার জোর দাবি করেন তিনি।