জাতীয় পার্টির আয়ের হিসাবে গরমিল নাকি গোজামিল!

  • সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

জাতীয় পার্টির আয়ের হিসাবে গরমিল নাকি গোজামিল!

জাতীয় পার্টির আয়ের হিসাবে গরমিল নাকি গোজামিল!

নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত জাতীয় পার্টির আয়-ব্যয়ের হিসাবে বিশাল গড়বড় দেখা গেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে দলটি ফরম বিক্রির পর যে আয়ের ঘোষণা দিয়েছিল, তার সঙ্গে হিসাবে বিশাল ফারাক দেখা যাচ্ছে।

দলটি ২০২৩ সালে দলটির সামগ্রিক আয় দেখিয়েছে- ৩ কোটি ২২ লাখ ৭৯ হাজার ৮৩১ টাকা। অথচ গত বছর অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটি দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি থেকে ৫ কোটি ২৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা আয় করার কথা ঘোষণা দিয়েছিল। ৫দিনে দলটি ১৭৫২টি দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রির পরিসংখ্যান মিডিয়াকে জানিয়েছিল। যার প্রত্যেকটির মূল্য ছিল ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু ইসিতে দাখিলকৃত হিসাবে জাতীয় পার্টির সর্বমোট আয় দেখানো হয়েছে ৩ কোটি ২২ লাখ ৭৯ হাজার ৮৩১ টাকা। যাতে দলীয় চাঁদা, বিশেষ চাঁদা, জাতীয় সংসদ নির্বাচন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, বিভিন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দলীয় ফরম বিক্রির টাকা রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সে হিসেবে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রির টাকাই হিসাবে আনা হয়নি। আংশিক আয় দেখানো হয়েছে, ইসিতে দাখিল করা হিসাব বিবরণীতে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রির চতুর্থ দিনে (২৩ নভেম্বর) জাতীয় পার্টির মাহসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ব্রিফিং করে বলেছিলেন, গত ৪দিনে ১৭৩৭টি দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। আর পরদিন ২৪ নভেম্বর বলেছিলেন ৩০০ আসনের বিপরীতে প্রায় ১৮০০ প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। আর দলের দফতর থেকে প্রকৃত সংখ্যা ১৭৫২ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।

জাতীয় পার্টি তখন প্রত্যেক দিনের শেষে মনোনয়ন ফরম বিক্রির একটি হিসাবে প্রকাশ করতো। ২০ নভেম্বর প্রথম দিনে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছিল, ৫৫৭টি ফরম বিক্রি হয়েছে। ২১ নভেম্বর ৬২২টি, ২২ নভেম্বর ৩৩১টি, ২৩ নভেম্বর ২২৭টি এবং ২৪ নভেম্বর ১৫টি ফরম কিনেছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

জাতীয় পার্টির যুগ্ম দফতর সম্পাদক মাহমুদ আলম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ১৭৫২টি দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রির তথ্য সঠিক নয়। দফতর থেকেই তখন বিক্রি ওই পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছিল, খোদ মহাসচিবও ঘোষণা দিয়েছিলেন। এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, তখন কিছুটা বাড়িয়ে বলা হয়েছিল। কেন বাড়িয়ে বলা হয়েছিল সে বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

অবশ্য গত জাতীয় নির্বাচনের সময়ে যখন মনোনয়ন ফরম বিক্রির পরিসংখ্যান দেওয়া হচ্ছিল, তখনই অনেকে একে অবিশ্বাস্য বলে মন্তব্য করেছিলেন। তখন পার্টির পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়, জাতীয় পার্টির জনপ্রিয়তা বেড়েছে, তার প্রমাণ বেশি সংখ্যায় দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি হচ্ছে।

জাতীয় পার্টির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, মূলত জাতীয় পার্টির জনপ্রিয়তা দেখাতে ফরম বিক্রির সংখ্যা বাড়িয়ে বলা হয়েছিল। প্রকৃত সংখ্যা অনেক কম ছিল। আবার কেউ কেউ পার্টির চেয়ারম্যানকে বলে বিনামূল্যে ফরম নিয়েছেন। সোয়া ৫কোটি টাকার ফরম বিক্রির তথ্য সঠিক নয়।

এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি থেকে আয় এসেছে ৮৯ লাখ টাকার মতো। তার ওই হিসাব সঠিক ধরা হলে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রির সংখ্যা দাঁড়ায় ২৯৬টির মতো। এর বাইরে আরও অনেকগুলো নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হয়। সেগুলো যোগ করলে আরও কমে যায় ফরম বিক্রির সংখ্যা।

জাতীয় সংসদের বিরোধীদলের আসনে থাকা জাতীয় পার্টি গত নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ফরমের দাম ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা নির্ধারণ করে। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ফরমের দাম ছিল ২০ হাজার টাকা। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাম ছিল ১৫ হাজার টাকা আর ২০০৮ সালে নেওয়া হয় ১০ হাজার টাকা।

নানা ঘটনার মধ্যদিয়ে ২০২৩ সালের ২০ নভেম্বর দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করে। প্রথমে ২দিন সময় দেওয়া হলেও পরে আরও ২দিন বাড়ানো হয়, অঘোষিতভাবে আরও ১দিন ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। ২৭ নভেম্বর ২৮৯ আসনের প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করা হয়। ২৬টি আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগতভাবে নির্বাচন করে। ওই আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী ছিল না। তারমধ্যে ১১টি আসনে বিজয়ী হন জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা।