অবশেষে ডাক পেল জাতীয় পার্টি
প্রথম দফার বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক না পেয়ে মুষড়ে পড়েছিল সদ্য বিলুপ্ত সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টি। তবে দ্বিতীয় দফার বৈঠকে (৩১ আগস্ট) ডাক পেয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে দলটির প্রেস উইং।
শনিবার (৩১ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের নেতৃত্বে দলটির নেতৃবৃন্দ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করবেন। বিকেল থেকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তারই অংশ হিসেবে জাপা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন ৫ আগস্ট সেনা প্রধানের বৈঠক ও রাষ্ট্রপতির বৈঠকে ডাক পাওয়ায় বেশ উৎফুল্ল ছিল জাতীয় পার্টি। এমনকি কেন্দ্রীয় কার্যালয় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও চেয়ারম্যানের কার্যালয় ভাঙচুর ও লুটপাটের পরও ছিল বেশ চাঙ্গা। শেখ হাসিনা সরকারের পতনেই দিনেই তাদের দুই প্রধান কার্যালয় আক্রান্ত হলেও তারা বিষয়টি চেপে গিয়েছিলেন।
নাম ঘোষণা হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অভিনন্দনও জানান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। কিন্তু ১২ আগস্ট বিএনপি-জামায়াত এবং ছোট ছোট রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করলেও ডাক পায়নি জাপা। জনশ্রুতি রয়েছে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে অনেক দেনদরবারও করা হয় বৈঠকের জন্য। তবে শেষ পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে সাড়া না পেয়ে মুষড়ে পড়েছিলেন দলটির নেতারা।
জাতীয় পার্টি ১৯৯৬ সালে ভোটের পর সরকার গঠনে সমর্থন দেয় আওয়ামী লীগকে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে কখনও ইচ্ছায় কখনও চাপের মুখে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ মনে করেন, জাতীয় পার্টির কারণেই ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন কিছুটা হলেও সুবিধা পেয়েছে আওয়ামী লীগ। আর ক্ষমতার ভাগ নিয়ে জাপা সাধারণ জনগণের কথা ভুলে গেছে। দলকে সংগঠিত ও জনপ্রিয় করার কোন প্রচেষ্টা দেখা যায়নি।
২০০৮ সাল থেকে নানাভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকে নির্বাচন করে সংসদে থেকেছে জাতীয় পার্টি। কখনও সরকারের অংশীদার (২০০৮ ও ২০১৪) এমনকি ২০১৪ সালে একইসঙ্গে সরকার ও বিরোধীদলে থাকার বিরল নজির গড়ে জাপা। তখন পার্টির মধ্যেই তুমুল সমালোচনার মধ্যেই পুরো ৫ বছর একইসঙ্গে সরকারের মন্ত্রিসভায় ও বিরোধীদলের আসনে ছিল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি। পার্টির প্রধান হুসেইন মুহুম্মদ এরশাদ ছিলেন মন্ত্রী মর্যাদায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। আর বিরোধীদলীয় নেতার আসনে ছিলেন সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ।
২০২৪ সালের নির্বাচনে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল নির্বাচন বয়কট করলেও জিএম কাদেরের নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশ নেয় জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ২৬টি আসন ছেড়ে দেওয়া হয়। তার মধ্যে থেকে মাত্র ১১ আসনে বিজয়ী হয় জাপার প্রার্থীরা। জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার চেয়ারে বসেন জিএম কাদের।
যদিও জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে বরাবরই বলা হয়েছে, তারা চাপের মুখে নির্বাচনে গেছে। কখনও কখনও হুমকির মুখে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকেছেন বলে দাবি করা হয়। কিন্তু রাজনৈতিকদলগুলো থেকে সাধারণ মানুষ তাদের এই বক্তব্য সেভাবে গ্রহণ করছে না। সরকারের লেজুড়বৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত করে এসেছে। একদিকে সরকারের লেজুড়বৃত্তি অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে মাঠে কর্মসূচি না থাকায় জাতীয় পার্টির মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে, সঙ্গে রয়েছে নেতৃত্বের শূন্যতাও।
দফায় দফায় ভাঙনের শিকার জাপার জনসমর্থন থাকলে নেতৃত্বের শূন্যতা প্রকট দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকে শুরু করে সিটি করপোরেশনে যোগ্য প্রার্থী সংকটে পড়ছে। নির্বাচনের সময় প্রার্থী হায়ার করতে দেখা যাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে।