এককভাবে ছাত্ররা দেশ চালাতে পারবে না: জিএম কাদের
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, এককভাবে ছাত্ররা দেশ রক্ষা করতে পেরেছে, কিন্তু এককভাবে ছাত্ররা দেশ চালাতে পারবে না। আবেগ ও জীবন দিয়ে দেশ রক্ষা করা যায় কিন্তু দেশ চালানো যায় না। দেশ চালাতে জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা দরকার হবে।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) জাপার বনানী কার্যালয়ে জাতীয় ছাত্র সমাজ কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দেশে বিশৃঙ্খলা আছে, এটা চলতে থাকলে জনগণ এই সরকারের ওপর বিরক্ত হয়ে উঠবে।
জিএম কাদের বলেন, আমরা এখনই নির্বাচন চাই না, ভালো নির্বাচনের পরে ভালো সরকার দেখতে চাই। সেজন্য বর্তমান সরকারকে আমরা সময় দিতেও রাজি আছি। ভালো নির্বাচন আমরা অতীতে অনেক দেখেছি। ভালো নির্বাচনের পরে ভালো সরকার হয় না। ভালো নির্বাচনে নির্বাচিত সরকার বেশির ভাগ সময়ে স্বৈরশাসক হয়েছিলো। কিন্তু, অনির্বাচিত সরকারগুলো অনেক বেশি গণতন্ত্রমনা ছিলো। অনির্বাচিত সরকারগুলোই জনগণের মতামতের বেশি গুরুত্ব দেয়। তাই, অনির্বাচিত সরকারকে সংস্কারের জন্য সময় দিতে আমাদের আপত্তি নেই। সেই রকম সরকারের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা চাই বর্তমান সরকার যেনো আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে পারে, দ্রব্যমূল্য যেনো নিয়ন্ত্রণে থাকে, কর্মসংস্থান যেনো থাকে...তাহলে আমাদের অপেক্ষা করতে আপত্তি নেই। রাজনীতিতে অনেক হিসাব-নিকাশ আছে। আওয়ামী লীগ মাঠে নেই, কিন্তু তাদের একটি সমর্থক গোষ্ঠী আছে। আগামী নির্বাচনে তাদের একটা ভূমিকা থাকবে।
তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য হচ্ছে, বিএনপি ক্ষমতায় না এসেই তাদের নেতা-কর্মীরা যে অবস্থা সৃষ্টি করেছে তা সাধারণ মানুষ পছন্দ করছে না। রংপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের সঙ্গে বিএনপির মুখোমুখি অবস্থা। কেউ দখলবাজি শুরু করলে, ছাত্ররা তার প্রতিবাদ করছে। শেষ পর্যন্ত জনগণ কার পক্ষে থাকবে তা এখনো নিশ্চিত নয়।
তিনি বলেন, জনগণের পক্ষে রাজনীতি না থাকলেও দল থাকে না, আমাদের রাজনীতির জন্য দলকে ছাড় দিতে হয়েছে। আবার, দলের জন্যও রাজনীতি ছাড় দিতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ আমাদের দলকে নষ্ট করতে চেয়েছে, একইসাথে আমাদের রাজনীতি করতেও বাধা দিয়েছে। দল না থাকলে রাজনীতি থাকে না, আবার রাজনীতি না থাকলে দলও থাকে না। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি আমাদের দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে, সেই ষড়যন্ত্র এখনও চলছে। জাতীয় পার্টি সব সময় জনগণের সাথেই ছিলো। তাই, ৩৪ বছর পরেও জাতীয় পার্টি রাজনীতির মাঠে টিকে আছে। জাতীয় পার্টিকে বাদ দিয়ে কেউ কিছু চিন্তা করে না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দেশে বৈষম্য সৃষ্টি করেছিলো, তাদের শোষণ ও নির্যাতনের জন্যই তাদের পতন হয়েছে। কোন রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগের পতন হয়নি। সরকারের পতন হয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার অন্দোলনের মুখে। আমরা সব সময় বৈষম্য ও দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। সাধারণ মানুষের ধারণা ছিলো, ছাত্ররা রাজনীতিতে আসতে চায় না। কেউই বুঝতে পারেনি, ছাত্ররা এতটাই রাজনীতি সচেতন। প্রমাণ করেছে, ছাত্ররা আমাদের চেয়ে বেশি রাজনীতি বুঝে।
দলীয় সংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজকে সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ছাত্র রাজনীতি করতে হবে সুশৃঙ্খলভাবে।
তিনি বলেন, ১৯৯০ সালে আমাদের নেতা, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তিন জোটের রুপরেখা অনুযায়ী ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন। কথা ছিলো সবাই মিলে একটি সুন্দর নির্বাচন করবো। পরে দেখা গেলো হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও জাতীয় পার্টিকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না এমন ষড়যন্ত্র শুরু হলো। গণমানুষের আন্দোলনের মুখে, বিশেষ করে রংপুরের মানুষের অন্দোলনের ফলে এরশাদ সাহেবকে নির্বাচন করতে দেওয়া হলো।
বিএনপির আমলে দেওয়া মঞ্জুর হত্যা মামলা দিয়ে আওয়ামী লীগ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ব্ল্যাক মেইল করেছিলো। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি যখন কেয়াটেকার পদ্ধতি বাদ দিয়ে নির্বাচন করতে চেয়েছিলো, আমরা তখন জামায়াত ও আওয়ামী লীগকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন বর্জন করেছিলাম।
তিনি আরও বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকলে বিএনপি দুর্নীতিতে চারবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো, তারা র্যাব প্রতিষ্ঠা করে বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড করেছিলো। বিচারবর্হিভূত ভাবে মানুষ হত্যা কথনোই সমর্থনযোগ্য নয়। ২০০৬ সালের পর দলীয়করণের মাধ্যমে বিএনপি নিজেদের লোক দিয়ে তত্বাবধায়ক সরকার তৈরি করেছিলো। তখন আবারও আন্দোলন হলে ওয়ান-ইলেভেন আসে। অওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুটি দলই নির্বাচন ব্যবস্থা প্রভাবিত করে কারচুপির মাধ্যমে জয়ী হতে চেয়েছিলো। দুটি দলই বিচার বর্হিভূত হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিলো।