‘জবাবদিহিতাহীন কোন সরকার দেশের কল্যাণ করতে পারবে না’
জবাবদিহিতাহীন কোন সরকার বাংলাদেশের কল্যাণ করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) ঐতিহাসিক ‘সিপাহী-জনতার বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে চট্টগ্রাম নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির যৌথ উদ্যোগে র্যালি আয়োজন করা হয়। এর আগে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আমীর খসরু বলেন, যেই আন্দোলনে নিজেদের জীবনের বিনিময়ে আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে, চাকরি হারাতে হয়েছে, ব্যবসা হারাতে হয়েছে, পঙ্গু হতে হয়েছে, জেলে যেতে হয়েছে। তোমরা কয়জন? সব হিসাব করলে কিন্তু অসুবিধা আছে! আমরা কিন্তু হিসাব করতে চাচ্ছি না। আমরা চাচ্ছিলাম, সবাই মিলে শেখ হাসিনাকে বিদায় করে দিতে। দেশ একটা গণতন্ত্রের অবস্থা ফিরিয়ে আনুক। গণতন্ত্রের মাধ্যমে দেশবাসী তাদের ভোটে যাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে, সংসদে যাবে, সরকারে যাবে, তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে, জবাবদিহি থাকবে। জবাবদিহিতাহীন কোন সরকার বাংলাদেশের কল্যাণ করতে পারবে না।’
‘জনপ্রতিনিধিত্বহীন কোন সরকার জনগণের কথা বুঝবে না, জনগণের কষ্ট বুঝবে না। কারণ বুঝতে হলে জনগণের কাছ যেতে হবে, জনগণের পাশে থাকতে হবে, জনগণের দুঃখ-দুর্দশা বুঝতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের মনে আছে? লাখ লাখ মানুষ চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে, সবকিছু উপেক্ষা করে জীবনের বিনিময়ে তারা সেখানে উপস্থিত হয়েছিল। পরবর্তীতে ঢাকাতে গুলি করে সমাবেশ ভণ্ড করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল। শেখ হাসিনার সেই আশা তারেক রহমানের নেতৃত্বের গুণের কারণে সফল হয়নি। তারেক রহমানের নেতৃত্বে সমস্ত দেশ ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কারণে শেষ ধাক্কা যখন দিয়েছে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে। সেই পটভূমি যদি সৃষ্টি না হতো, সেই অবস্থা যদি সৃষ্টি না হতো তাহলে শেখ হাসিনাকে ধাক্কা দিয়ে সরানোর সুযোগ ছিল না। এখন অনেক গল্প শুনছি, শেখ হাসিনার পতনের গল্পের শেষ নেই। প্রত্যেকদিন নতুন নতুন গল্প শুনছি। ওরা নাকি এটা করেছে, সেটা করেছে। ১৫ বছর যখন আমরা রাস্তায় আন্দোলন করেছি, জীবন দিয়েছি, গুম-হত্যার শিকার হয়েছি, জেলে গিয়েছি বারবার; তখন তো তোমাদের এসব গল্প দেখিনি। তোমাদের ছিল কেউ, আমাদের সঙ্গে তো তখন কেউ আসেনি।’
আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, ‘এখন আবার আরেক বয়ান। এই বয়ানের অর্থ হচ্ছে- বাংলাদেশে কখন নির্বাচন হবে তা এ বয়ানের মধ্যে নেই। বাংলাদেশের জনগণ কবে ভোট দিয়ে সরকার নির্বাচিত করবে সেই বয়ান নেই। বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেয়ে একটি গণতান্ত্রিক দেশ হবে সেই বয়ান নেই। বয়ান হচ্ছে, সংস্কারের বয়ান। আরে সংস্কার কি বিএনপির আগে আপনারা দিয়েছেন। ৬ বছর আগে বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন। কারণ, আমরা জনগণের কথা বুঝেছি বলে আমরা দিয়েছি। এক বছর আগে তারেক রহমানের নেতৃত্ব আমরা সবাই একটি নতুন সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছি। ওই সংস্কারে সবকিছু আছে। কিছু বাকি নেই। আপনারা যা বলেছেন, তাও আছে; তার বাইরে আছে। সংস্কারে আপনাদের চেয়ে আরো বেশি আছে।’
তিনি বলেন, ‘যে কয়েকটি সংস্কার, জাতীয় ঐক্যমতের পরিপ্রেক্ষিতে হবে সেগুলো দ্রুত করে ফেলুন। এরপর নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যান। এবং যে সংস্কারে ঐক্যমত হবে না সেটা বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিবে আগামী দিনে। নির্বাচনের মাধ্যমে যে সংসদ হবে তারা সিদ্ধান্ত নেবে, সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। এর বাইরে অনির্বাচিত কারো কোনো অধিকার নেই। জাতীয় ঐক্যমতের পরিপ্রেক্ষিতে যতটুকু হবে সহসা সমাধান করে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। জাতি তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি দেখতে চায়। তাদের নির্বাচিত সরকার দেখতে চায়। এ কারণেই ঐক্য ঘটানো হয়েছে। ২৩ তারিখে এক দফা, আগে তো এক দফা ছিল না। কেন এক দফা জানেন? আমরা বলেছি, এক দফার মাধ্যমে শেখ হাসিনার যদি পতন না হয় তাহলে আপনারা যত দফা দিবেন কোনো দফা কাজে আসবে না। তারপর আপনারা এক দফায় আসছেন; আমরা সবাই ঝাপিয়ে পড়েছি। আর শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে। এটাই সত্য, এটা বুঝুন। ‘
আমীর খসরু বলেন, ‘তারেক রহমান সাহেব বলেছেন, এ সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। তাদের আমরা সমর্থন দেব, তাদের আমরা শেষ পর্যন্ত সমর্থন দেব। আমরা এ সরকারকে যখন আসা মাত্রই সমর্থন দিয়েছি, এ সরকারকে আমরা এখনো সমর্থন দিচ্ছি। আমরা চাই এ সরকার গণতন্ত্রের অধিকার ফিরিয়ে আনবে। তার জন্য আমরা সকলে মিলে কাজ করবো। আমাদের ঐক্য নষ্ট করা যাবে না। আওয়ামী লীগ উঁকিঝুঁকি মারছে, ফ্যাসিস্টরা উঁকিঝুঁকি মারছে, এই ঐক্য ভাঙা যাবে না। তারেক রহমান যে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন তা অটুট থাকতে হবে। অটুট রেখে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দিকে যেতে হবে, নির্বাচনের দিকে যেতে, নির্বাচিত সরকারের দিকে যেতে হবে। যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘৭ নভেম্বর ছিল সিপাহী জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে, শহীদ জিয়াকে মুক্ত করার মাধ্যমে এক নতুন বাংলাদেশের সূচনা হয়েছিল। সেই বাংলাদেশ কি হলো বহুদলীয় গণতন্ত্রের বাংলাদেশ, স্বাধীনতার বাংলাদেশের, আইনের শাসনের বাংলাদেশ, জীবনের নিরাপত্তার বাংলাদেশ, স্বাধীন-সার্বভৌম মাথা উঁচু করার বাংলাদেশ। সেই ধারা অব্যাহত রেখে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লড়াই করে স্বৈরাচারদের পতন ঘটিয়েছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরাচারদের বিদায় করে আবারো শুধু বহুদলীয় গণতন্ত্র নয়; সংসদীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেছে। আবারো বাংলাদেশে মুক্তবাজার উন্মুক্ত হয়ে ব্যবসায়ীরা-উদ্যোক্তারা অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে ফেলেছিল। যেই অর্থনীতির ভিত্তি জিয়াউর রহমান সৃষ্টি করেছিলেন; সেই অর্থনীতির ভিত্তিকে আরো শক্তিশালী করেছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।’
আমীর খসরু বলেন, ‘এরপর ১/১১ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ যখন আবারো কিছু লোকের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের সকল অধিকার কেড়ে নিয়ে আবারো একটি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘পরবর্তীতে ওই স্বৈরাচারকে আবারো ক্ষমতায় বসিয়েছে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে, জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে দিয়ে, বিএনপির সাত লাখের অধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে নিপীড়ন, নির্যাতন, খুন, গুম, হত্যা, জেলহত্যা, পুলিশের হেফাজতে হত্যা; এর মাধ্যমে সেদিন বাংলাদেশে আবারো একটি নিরাপত্তাহীন জনগণের জন্য পরাধীন জাতি সৃষ্টি করেছিল। সেখানে আবারো দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া রুখে দাঁড়িয়েছিল। রুখে দাঁড়ানোর কারণে তাকে জেলে যেতে হয়েছে, জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে, চিকিৎসা না দিয়ে তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল।’
রাজনীতি বদলে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রাজনীতি বদলে গেছে, ডিসিপ্লিনের মধ্যে থাকতে হবে। আগের রাজনীতি এখন নেই। যারা সুশৃঙ্খলভাবে রাজনীতি করতে পারবে তাদের ভবিষ্যৎ আছে। উচ্ছৃঙ্খল, চাঁদাবাজ, দখলদার, ভূমিদস্যুর জায়গা বিএনপিতে হবে না।’