‘শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলেও তার ষড়যন্ত্র শেষ হয়নি’
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলেও তার ষড়যন্ত্র শেষ হয়নি। তিনি প্রতিটি সেক্টরে বসিয়ে রাখা দোসরদের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছেন। তাদের এ সব ষড়যন্ত্র রুখতে সব কর্মীকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখতে হবে।
তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত পিতৃহারা সন্তানরা কবর খানায় পিতার খোঁজ নিচ্ছে। জালিমরা শুধু বুলেট দিয়ে মানুষ খুন করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি, আগুন দিয়ে লাশ পর্যন্ত জ্বালিয়ে দিয়েছে। তাদেরকে দেশের মানুষ কখনো ক্ষমা করবে না।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) সকালে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে ডুমুরিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ডুমুরিয়া ও ফুলতলা এক সময় সন্ত্রাসী ও চরমপন্থীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছিল। তখন আমি জনগণকে সাথে নিয়ে জীবনবাজি রেখে সন্ত্রাসী ও চরমপন্থীদের নির্মুল করার চেষ্টা করেছি। আজ আমাদেরকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে জলাবদ্ধতা। এই জলাবদ্ধতা নিরসনে ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এতো বড় সমস্যা সমাধানে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়। এজন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে সংস্কার করে একটি যৌক্তিক সময়ে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহবান জানান তিনি।
তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, আল্লাহ তালার বিধান এবং নবীর আদর্শের ভিত্তিতে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র কায়েম করা। সেই রাষ্ট্রে সব ধর্ম, বর্ণ, জাতির মানুষের কল্যাণ হবে।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। ৫ আগস্ট বিপ্লবের পর প্রতিবিপ্লবের চক্রান্ত করছে হাসিনা। ফ্যাসিস্ট সরকারের দলবাজ প্রধান বিচারপতি নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবৈধ সরকার বলার চক্রান্ত করেছিল। তবে ছাত্র-জনতা তাদের সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, দেশ সংস্কারে যতটুকু সময় দরকার ততটুকু সময় অবশ্যই দেওয়া হবে। কিন্তু অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এটা চলতে পারে না। যৌক্তিক সময়ের ব্যাখ্যা হচ্ছে জনগণ যে পরিবেশে অবাধ ও নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবে, ভোট দিতে গেলে কেউ বলবে না, ভোট দেওয়া হয়ে গেছে এবং দিনের ভোট রাতে হয়ে গেছে- এমন পরিবেশ তৈরিতে যতটুকু সময় লাগে, সে সময়টিকে আমরা যৌক্তিক সময় বলছি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের দীর্ঘ ১৫ বছরের যে ফ্যাসিবাদী যুগ আমরা পার করেছি, সেখানে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান অপরাধ দ্বারা অপরিচ্ছন্ন ও অপবিত্র হয়ে গিয়েছিল এবং ফ্যাসিবাদী শাসক মহা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আরও বলেন, কেবল তিন মাস হয়েছে ফ্যাসিবাদের বিদায় হয়েছে; কিন্তু সেই অপরাধপ্রবণতা ১০০ ভাগ বিদায় হয়নি। এখনো কিছু অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, তবে মাত্রা কম। এই বিষয়গুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলেছি। জামায়াতে ইসলামী অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান সব সময় দৃঢ় থাকবে।
মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এত বেশি ছাত্র-জনতা হত্যা করেছে, যা পৃথিবীর ইতিহাসে আর ঘটেনি। শিশুদের কী অপরাধ ছিল? তারা শতাধিক শিশুকে হত্যা করেছে। নব্বই বছরের বৃদ্ধ রাস্তায় আসেনি, বৃদ্ধদের ঘরে ঢুকে হত্যা করেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন জঘন্যতম, নির্মমতা ও পৈশাচিকতা প্রদর্শন করেছে আওয়ামী লীগ। অথচ আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পরে তাদের শাসনামলের সবচেয়ে নির্যাতিত-মজলুম দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কোনো প্রতিশোধ নেয়নি। কারণ, জামায়াত এভাবে প্রতিশোধ গ্রহণ করবে না। আমরা এই জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই প্রতিশোধ নেব ইনশাআল্লাহ। আমরা জানমাল দিয়ে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করে পরকালের মুক্তি নিশ্চিত করতে চাই।
খুলনা জেলা মজলিসে শূরার সদস্য ও ডুমুরিয়া উপজেলা দক্ষিণের আমির মাওলানা মুখতার হুসাইনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চল সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মাস্টার শফিকুল আলম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম ও অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, খুলনা জেলা কর্মপরিষদ সদস্য এডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্যা, খুলনা জেলা ছাত্র শিবির সভাপতি বেলাল হোসাইন রিয়াদ। শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ নন্দী ও উপজেলা কৃষকদলের সভাপতি কবির হোসেন। বক্তৃতা করেন খুলনা জেলা ছাত্রশিবির সেক্রেটারি মুহা. ইউসুফ হোসেন, ডুমুরিয়া উত্তর উপজেলা আমীর গাজী সাইফুল্লাহ, ডুমুরিয়া দক্ষিণ উপজেলা সেক্রেটারি মাওলানা হাবিবুর রহমান, ডুমুরিয়া উত্তর উপজেলা সেক্রেটারি বি এম আলমগীর হোসেন, ড. একরাম উদ্দীন সুমন, সরদার আব্দুল ওয়াদুদ, হাফেজ রবিউল ইসলাম, মাওলানা আজহার, ডাক্তার হরিদাস মন্ডল, মাওলানা মনিরুল ইসলাম, গোলাম মোস্তফা, ডাক্তার আব্দুল মান্নান, আব্দুল গণি খান, হাফেজ আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ।