একটি মহল আন্দোলন হাইজ্যাক করে নিয়ে যেতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, আন্দোলনে যাবেন, নতুন নতুন বয়ান শোনা যাচ্ছে। আন্দোলন হাইজ্যাক করে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন। বয়ান দেওয়ার আগে একটু চিন্তা করে দেখবেন। আমরা এ আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাই না। এ আন্দোলন বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের আন্দোলন।
বুধবার (১ জানুয়ারি) বিকেলে নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেটস্থ বিপ্লব উদ্যানের পাশে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের র্যালী পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সমাবেশ শেষে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে শোভাযাত্রা নিয়ে দুই নম্বর গেট থেকে শুরু করে জিইসি মোড় হয়ে ওয়াসা মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাইফুল আলমের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিনের সঞ্চালনায় সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আলহাজ্ব এরশাদ উল্লাহ, সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি একা এই আন্দোলন করেনি। সমস্ত মানুষ মিলে আমরা আন্দোলন করে ফ্যাসিস্টকে বিতাড়িত করেছি। আন্দোলন এবং আন্দোলনের মালিকানা কেউ নেওয়ার চেষ্টা করবেন না। মালিকানার হিসাব যদি করতে হয়, আমরা (বিএনপি) যেই হিসাব দিব আপনারা লজ্জা পাবেন।
মালিকানা নিয়ে টানাটানি করলে শেখ হাসিনার পথে যেতে হবে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, আন্দোলনের মালিকানা মানে জনগণ তাদের ভোটে যাকে ইচ্ছে তাকে নির্বাচিত করবে। এটা নিয়ে কেউ খেলাধুলা করলে আবার শেখ হাসিনার পথে যেতে হবে। আপনারা ভোট না নিয়ে নতুন নতুন বয়ান সৃষ্টি করে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা, এখানে কাজ করবে না। ভোটে যেতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন দিতে হবে।
ছাত্রদল দীর্ঘ ১৬ বছর নির্যাতনের পরেও রাজপথে ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছাত্রদল রাস্তায় থেকে জীবন দিয়ে পঙ্গু হয়ে, মামলা খেয়ে, পালিয়ে বেরিয়ে, ব্যবসা চাকরি হারিয়ে শেখ হাসিনাকে বিদায় করেছে। এই ছাত্রদল, যারা এরশাদকে বিতাড়িত করেছে, দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে গুম, খুনের শিকার হয়েও কেউ বাড়ি ফিরে যায়নি।
তিনি বলেন, আমরা চাই না আন্দোলনকে নিয়ে দেশে একটি বিভক্তি সৃষ্টি হোক। আমরা চাই আন্দোলনকে নিয়ে দেশে ঐক্য সৃষ্টি হোক। আর আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে চিরজীবনের জন্য দেশ থেকে যে স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্টকে বিতাড়িত করেছে সেই ফ্যাসিস্ট ও তার প্রেতাত্মা যাতে আর ফিরে আসতে না পারে।
আমীর খসরু বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা নির্বাচিত সংসদ সরকারের হাতে তুলে দেওয়া। এর বাইরে আর কোনো দায়িত্ব নেই। আর যে সংস্কারের গল্প করা হচ্ছে সেগুলো হবে আগামী সংসদে। অর্থাৎ নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা যত সংস্কার প্রয়োজন তা করবে।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, ৯০ সালে ছাত্রদলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতন হয়েছিল। আর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে ছাত্রদলের শক্তিশালী ভূমিকার কারণে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামের সকল কলেজে মিছিল মিটিং করতে হবে। ছাত্রদের দাবি দাওয়া নিয়ে কথা বলতে হবে। আজকে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের দোসররা দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে। নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করছে। তাই আমরা বলতে চাই, গণতন্ত্র এখনো পুরোপুরি উদ্ধার হয় নাই। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রদলকে রাজপথে থাকতে হবে। দেশের মানুষ ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন, না হলে ছাত্র সমাজ আবারও রাজপথে নামবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, আন্দোলনের ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না। আন্দোলন শুরু হয়েছিল সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে, তখন ছাত্রদের ওপর আক্রমণ হয়েছে। আর তখনই ছাত্রদলসহ সকল দলই সরকার পতনে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপি, ছাত্রদল, ছাত্র এবং ১৮ কোটি মানুষের নেতৃত্ব ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান সফল হয়েছে। মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজের সকল দেশপ্রেমিক ছাত্ররা আন্দোলন শেষ করে বাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফেরত গিয়েছে। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও তাই করেছে। কিন্তু যারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কথা বলে কোটায় গিয়ে, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে দল গঠন করে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন, এসময় এটা হবে না। দেশের মানুষের পত্যক্ষ ভোটে তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এরশাদ উল্লাহ বলেন, ছাত্রদল বিএনপির অন্যতম শক্তি ও মনোবল। গত জুলাই আন্দোলনে ছাত্রদল সহ যেসকল ছাত্রনেতা নিহত হয়েছে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। ফ্যাসিবাদী শাসনামলে ছাত্রলীগের অপকর্মের কারণে বর্তমান সরকার তাদের নিষিদ্ধ করেছে। আমরা চাই ছাত্রদল দেশের সুষ্ঠু রাজনীতি ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রদলের কমিটিকে শক্তিশালী করতে হবে। অভিভাবক সংগঠন হিসেবে বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা সকল ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করবো।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নাজিমুর রহমান বলেন, বিগত ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট হাসিনা ছাত্র রাজনীতিকে যে পথে পরিচালিত করেছে তা কখনোই ছাত্ররাজনীতি ছিল না। এটা ছিল একটি সন্ত্রাসী রাজনৈতিক দল। তাই বর্তমান সরকার ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে। তাদের রাজনীতি করার অধিকার এই বাংলাদেশে নেই। ছাত্রদল নেতৃবৃন্দকে বলতে চাই, আমরা এমন কোন কর্মকাণ্ড না করি, যেন শেখ হাসিনার মতো আমাদেরকে পালিয়ে যেতে না হয়। আমরা গত পনের বছর ধরে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছি। এখন শুনতে পাচ্ছি অন্য কেউ একা আন্দোলনের সুফল ভোগ করার অপচেষ্টা করছে। গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের সংগ্রাম চলবেই।
এতে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক তারিকুল ইসলাম তানভীর, সামিয়াত আমিন চৌধুরী জিসান, মাস্টার আরিফ, জহির উদ্দিন বাবর, আরিফুর রহমান মিঠু, শহিদুল ইসলাম সুমন, সাব্বির আহমেদ, এম এ হাসান বাপ্পা, খন্দকার রাজীবুল হক বাপ্পী, মাহমুদুর রহমান বাবু, ইসমাইল হোসেন, মো. আনাছ, জাহেদ হোসেন খান জসি, নুর নবী মহররম, নুর জাফর নাঈম রাহুল, ফখরুল ইসলাম শাহীন, সদস্য নজরুল ইসলাম, মো. শামসুদ্দীন, ইমরান হোসেন বাপ্পী, আবু কাউছার, আল মামুন সাদ্দাম, দেলোয়ার হোসেন শিশির, কামরুল হাসান আকাশ, এনামুল হক, আব্বাস উদ্দিন সহ বিভিন্ন থানা, কলেজ ও ওয়ার্ড ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ।