নূর হোসেন ইস্যুতে জাপার গ্রুপিং প্রকাশ্য
শহীদ নূর হোসেন ইস্যুতে জাতীয় পার্টির মহাসচিবের মন্তব্যে পার্টির দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য হয়ে পড়েছে। একটি গ্রুপ চাইছে এই ইস্যুকে টার্গেট করে মহাসচিবকে সরিয়ে দিতে।
সাধারণ কর্মীরা মসিউর রহমান রাঙ্গার অতি উৎসাহী বক্তব্য যেমন পুরোপুরি সমর্থন করছেন না। আবার সংসদে নূর হোসেনকে হিরো বানিয়ে দেওয়া কাজী ফিরোজ রশীদের বক্তব্যকেও সমর্থন করছেন না। তারা মনে করছেন নূর হোসেনকে হিরো বানিয়ে পক্ষান্তরে এরশাদের ভূমিকাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। জাতীয় ছাত্র সমাজের সম্মেলনে একাধিক ছাত্রনেতা বিষয়টি সামনে তুলে এনেছেন। তারা মনে করছেন মহাসচিবের বিরুদ্ধে এভাবে সমালোচনা করা সঠিক কাজ হয়নি।
সাতক্ষীরা জেলা ছাত্র সমাজের এক নেতা কারো নাম উল্লেখ না করলেও বলেছেন মহাসচিব একটি বক্তব্য দিয়েছেন, পার্টির নেতারাই এর সমালোচনা করছেন। আমরা মাঠ পর্যায়ের নেতারা কোনো শক্ত বক্তব্য দিলে কে শেল্টার দেবে। কার কাছে গিয়ে দাঁড়াবো।
আরও পড়ুন: নূর হোসেনের পরিবারের কাছে ক্ষমা চাইলেন রাঙ্গা
কাজী ফিরোজ রশীদের বক্তব্যে যখন ক্ষোভ বিরাজ করছে। ঠিক সেই সময়ে যুগ্ম মহাসচিব হাসিবুল ইসলাম জয় নানা রকম প্রশ্নের জন্ম দিয়েছেন। জয় বলেছেন, মহাসচিবের বক্তব্যের দায় পার্টি নেবে না, এটা তার ব্যক্তিগত মত। রাঙ্গার বক্তব্যকে কুরুচিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন। আবার রাঙ্গার সমালোচনা করে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকার নিউজ শেয়ার করেছেন নিজের ওয়ালে।
জয়ের সেই স্ট্যাটাসে এসে অনেকে নানান প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন। অনেক নেতাই রাঙ্গার বিরুদ্ধে এভাবে স্ট্যাটাস দেওয়া সঠিক মনে করছেন না। একজন তো অবাক বিস্ময়ে লিখেছেন, স্যার, কি শুরু করলেন এটা?! না আপনার আইডি হ্যাক হয়েছে? Moniruzzaman Palash নামে একজন লিখেছেন নিজের বর্তমান অবস্থান আগামী সুন্দর সাচ্চা পথ চলা, সব কিছু মিলে আপনাকে আরো সতর্ক হতে হবে,,,কর্মী বিহীন কেও নেতা হতে পারে না,, রাঙ্গা ভাই যেটা বলেছেন সেটা এরশাদ প্রেমিকদের মনের কথা। Abu Sayem কাজী সাহেব একটু বেশিই বলছেন! নূর হোসেনকে মাদকাসক্ত বলা উচিত হয়নি, বাদবাকি যা বলেছেন সব ঠিক।
জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের অনেকের ধারণা সরকার জাতীয় পার্টির কলকাঠি নাড়ানাড়ি করেন। শীর্ষপদের ক্ষেত্রেও তাদের পছন্দ অপছন্দ কাজ করে থাকতে পারে। বিগত নির্বাচনের পূর্বে রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে রাঙ্গাকে বসানোও সেই ব্লু প্রিন্টের অংশ।
আরও পড়ুন: নুর হোসেনকে ইয়াবাখোর বললেন জাপা মহাসচিব
সে কারণে আসছে কাউন্সিলে রাঙ্গাকে সরাতে বঙ্গবন্ধু ও বাকশাল নিয়ে দেওয়া বক্তব্যকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছেন রাঙ্গা বিরোধীরা। তারা মনে করছেন এই টোপ দিয়ে সরকারকে বশ করা যাবে। আর সরকার পক্ষে থাকলে রাঙ্গাকে সরানো সহজ হবে। কাজী ফিরোজ রশীদের দেওয়া সংসদের বক্তব্য এবং জয়ের বক্তব্য সেই নকশার অংশ বলে মনে করছেন রাঙ্গার অনুসারীরা।
কাজী ফিরোজ রশীদের বক্তব্যকেও বেশিরভাগ কর্মী সমর্থন করছেন না। তারা রাঙ্গার পক্ষে একাট্টা। কেউ কেউ বলেছেন, সাহসী মহাসচিব নূর হোসেন ছাড়া আর যা বলেছেন সঠিক বলেছেন। নেতাকর্মীদের মনের কথা বলেছেন। আওয়ামী লীগের দালালি করেননি। এটাই দেশবাসীর কথা।
উল্লেখ্য, জাতীয় পার্টির এক আলোচনা সভায় মহাসচিব রাঙ্গা নূর হোসেনকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেন। তার সেই বক্তব্য নিয়ে সারাদেশে নিন্দার ঝড় ওঠে। অনেক জায়গায় বিক্ষোভও হয়। দু্'দিনের মাথায় বক্তব্য প্রত্যাহার করে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। তবু এর রেশ যেন কাটতেই চাইছে না। দলের মধ্যেও চলছে নানান গুঞ্জন। বিশেষ করে রাঙ্গা বিরোধীরা বেশ সরব। এরই জেরে নূর হোসেনের পরিবারের কাছে ক্ষমা চান তিনি। তবু রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে রাঙ্গা ইস্যু। শেষ পর্যন্ত সংসদেও রাঙ্গার এ মন্তব্যের জেরে চলে বেশ দফারফা। তারই খেসারত হিসেবে বুধবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চম অধিবেশনে সংসদে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চেয়েছেন বিতর্কিত এ নেতা।
আরও পড়ুন: সংসদে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চাইলেন রাঙ্গা