করোনা মোকাবিলায় সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগ চায় গণসংহতি
বৈশ্বিক মহামারি করোনা মোকাবিলায় অবিলম্বে সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন।
মঙ্গলবার (৫ মে) দুপুরে গণসংহতি আন্দোলনের উদ্যোগে ‘করোনা পরিস্থিতি বর্তমান বাস্তবতা এবং উত্তরণের পথ’ শীর্ষক অনলাইন সংবাদ সম্মেলন আয়োজিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী (ভারপ্রাপ্ত) আবুল হাসান রুবেল।
অনলাইনে সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেন দলের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, কেন্দ্রীয় নেতা তাসলিমা আখতার, দেওয়ান আব্দুর রশিদ নিলু, হাসান মারুফ রুবেল ও জুলহাসনাইন বাবু।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বিশেষজ্ঞরা যখন দেশে করোনায় আক্রান্তের ঝুঁকি সর্বোচ্চ পর্যায়ে যাবার পূর্বাভাস দিচ্ছেন, ঠিক তখনই গার্মেন্টসের পর এবার মার্কেট ও বিপনীবিতান চালু করা হচ্ছে। সরকার সবকিছুই খুলে দেওয়ার পথে হাঁটছে। অবিলম্বে এই ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ থেকে সরে এসে সরকারকে লকডাউন বাস্তবায়ন ও আবারও স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড চালু করার পরিবেশ সৃষ্টির পদক্ষেপ নিতে হবে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, সরকার আসলে দায় এড়াতে লকডাউন না করে সাধারণ ছুটির পথ বেছে নিয়েছে এবং লকডাউন কার্যকর করার যেসব আবশ্যিক শর্ত আছে সেগুলো তারা পূরণ করেনি। লকডাউনের ফলে যেসব লক্ষ্য অর্জিত হবার কথা তার কোনোটিই অর্জিত হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে কিছু নীতিগত বিষয়ে গণসংহতি আন্দোলন কয়েকচি প্রাথমিক প্রস্তাব দিয়েছে। তা হলো—
• গার্মেন্ট সেক্টরের ওপর একক নির্ভরতা নয়। দেশে উৎপাদনী খাতের বৈচিত্র্য ও নিজস্ব ভোক্তা শ্রেণির বৃদ্ধি ও তাদের ওপর নির্ভরশীল শিল্প খাতের বিকাশ নিশ্চিত করতে হবে। উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল দেশেই উৎপাদনের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
• বাজারের ওপর খোদ কৃষকের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য কৃষি সমবায় গড়ে তুলতে হবে। এই কৃষি সমবায় যাতে কৃষি ভিত্তিক পণ্য উৎপাদনে যেতে পারে সেজন্য তাদের সরকারি প্রণোদনা দিতে হবে।
• গবেষণা, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিগত খাতে দেশীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। এ জন্য একটি পর্ষদ গঠন করতে হবে যার স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের সক্ষমতা থাকবে। তার জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল বরাদ্দ করতে হবে।
• দেশের সমগ্র স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে ব্যক্তি ব্যবসা মুনাফামুখী অন্ধত্ব থেকে মুক্ত করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত অভিন্ন রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নির্মাণ করতে হবে। এই খাতে জিডিপির কমপক্ষে ৫ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ করা এবং স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক শিক্ষা ও গবেষণাকে গুরুত্ব প্রদান। চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসা গবেষকদের জন্য বিশেষ বেতন স্কেল তৈরি করা যাতে তাদের আয়ের অন্য উৎস খুঁজতে না হয়।
• সাম্প্রতিক কালে ঘটে যাওয়া সকল মহামারির পেছনেই আছে বনভূমি ধ্বংস ও বন্যপ্রাণীর বাণিজ্যিক ব্যবহার। বনভূমি ধ্বংস ও বন্যপ্রাণীর বাণিজ্যিক ব্যবহারকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ ও নিষিদ্ধ করতে হবে। পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী সকল তৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
• গ্রামীণ ও দরিদ্রতর জনগোষ্ঠী প্রতিবছর যে সকল স্থানীয় সংক্রামক ব্যধিতে আক্রান্ত হন, সেগুলো বিষয়ে গবেষণা জোরদার করতে হবে।
• সকল সুরক্ষা সরঞ্জাম ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি দেশে তৈরি করার বন্দোবস্ত করতে হবে। দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতালগুলোর সাথে গবেষণা ও জ্ঞানের লেনদেনের যোগসূত্র তৈরি করতে হবে। যাতে পারস্পরিক যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা আদান-প্রদানের মাধ্যমে দুর্যোগকালীন সময়ে তারা নেতৃত্ব প্রদান করতে পারে।
• স্কুল পর্যায় থেকে বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যশিক্ষায় বিশেষ জোর দিতে হবে, স্বাস্থ্যকর খাবার ও স্বাস্থ্যবিধি ও সংক্রামক রোগে সাধারণ করনীয় বিষয়কে পাঠ্যপুস্তকে অর্ন্তভূক্ত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, করোনা যেসব গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিয়েছে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে সবকিছু আগের মতো চালাতে চাইলে সেটি ভুল হবে, মস্ত বড় ভুল। যার পরিণামে হয়তো ভুগতে হবে সবাইকেই। একটি বৈষম্যহীন পৃথিবী নির্মাণ ও সব জীবনকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার মাধ্যমেই সবচেয়ে ভালোভাবে এই মহামারি মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।