জিএম কাদের, রওশন ও বিদিশার পৃথক আয়োজন

  • সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

রওশন এরশাদ, বিদিশা ও জিএম কাদের

রওশন এরশাদ, বিদিশা ও জিএম কাদের

প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকী পৃথকভাবে পালনের প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা। জিএম কাদের পার্টিগত ভাবে আয়োজন করলেও রওশন এরশাদ আয়োজন করছেন তার বাসায়। আর বিদিশার তত্ত্বাবধানে প্রেসিডেন্ট পার্কে বিশেষ আয়োজন করেছে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্ট।

নানা কারণে বিদিশা ও ট্রাস্টের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে জিএম কাদেরের। সে কারণে ট্রাস্টের উদ্যোগে পৃথক কর্মসূচি নিয়ে বেশি নতুন কিছু নয়। কিন্তু রওশন এরশাদের পৃথক কর্মসূচি সাধারণ কর্মীদের মধ্যে নানা রকম মুখরোচক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

দিবেই না কেনো? বেশ কিছুদিন ধরে রওশনকে সামনে রেখে পৃথক কিছু করার তৎপরতা যখন ওপেন সিক্রেট। এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচন প্রশ্নে দেবর জিএম কাদেরের সঙ্গে মতপার্থক্য দেখা দেয় রওশন এরশাদের। পাল্টাপাল্টি চিঠি দিয়ে হাস্যরসের জন্ম দেন। শেষ পর্যন্ত রওশনই বিরোধীদল নেতা হন। এরপরও নানা রকম টানা পোড়েনের মধ্যে দিয়ে যায় জাতীয় পার্টি। ভাঙতে গিয়ে খাদের কিনার থেকে উঠে দাঁড়ায়। শেষ মুহূর্তে মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গার মধ্যস্থতায় টিকে যায় জাপা।

এরপর অনেক ঘটনা প্রবাহের মধ্যদিয়ে জাতীয় পার্টির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। রওশনপন্থী অনেক নেতার জন্য পদসৃজন করা হয় পার্টিতে। সৃজিত এসব পদ পেয়ে জিএম কাদেরের দলে যোগদেন অনেক রওশনপন্থী নেতা। আর রওশনের জন্য প্রধান পৃষ্ঠপোষক পদ সৃজন করা হয়। অনারারি এই পদের বিষয়ে রওশন এরশাদের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। প্রকাশ্য কোনো মন্তব্যও করেননি কখনো, চিঠিপত্রেও কখনো এই পদবী ব্যবহার করতে দেখা যায়নি।

বিজ্ঞাপন

তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে রওশন এরশাদ না কাউন্সিলে হাজির ছিলেন, না এরপর পার্টির কোনো কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। তবে কাউন্সিলের পর এক চিঠি দিয়ে ছেলে সাদ এরশাদকে কো-চেয়ারম্যান এবং কয়েকজন নেতাকে পদায়ন করতে চিরকুট দিয়েছিলেন। সেই চিরকুটও সামান্যই বাস্তবায়ন হয়েছে। রওশন এরশাদ প্রকাশ্য কিছু না বললেও তিনি যে ক্ষুব্ধ এটা নেতাকর্মীদের মধ্যে কানাঘুষা রয়েছে।

পদবঞ্চিত কিছু কেন্দ্রীয় নেতা নতুন করে একত্র হওয়ার চেষ্টা করছেন। তাদের দফায় দফায় বৈঠক এখন সবার জানা। কিছু কিছু বৈঠক রওশনের বাসায় তার উপস্থিতিতে হয়েছে। এই গ্রুপটি চাইছেন রওশনকে সামনে রেখে নতুন কিছু করার। তারা জিএম কাদেরকে সরিয়ে জাপার নতুন কমিটির কথাও চূড়ান্ত করে রেখেছেন। কমিটির একটি খসড়াও ভেবে রাখা হয়েছে বলে সূত্র দাবি করেছে। সেই অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির মেয়াদ হবে ৬ মাস। সেই সময়ের মধ্যে নতুন কাউন্সিল করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে চান উদ্যোক্তারা। এই প্রক্রিয়ায় রওশনের সঙ্গে একাট্টা নাকি খোদ বিদিশাও। পাশাপাশি পরিবারের আরেক অভিমানী সন্তান আসিফ শাহরিয়ারের নামও শোনা যাচ্ছে জোরোসোরে। চারদিকে যখন এমন আলোচনা সেই সময় রওশনের এই পৃথক কর্মসূচি আলোচনার নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে জাতীয় পার্টিতে।

কে কোথায় অংশ নেবেন, এই বুঝি তারা ধরা পড়ে যান। এই নিয়ে টানাপড়েন চলছিল কয়েকদিন ধরে। একাধিক শীর্ষ নেতা দু’টি আয়োজনেই এড়ানোর কৌশল খুঁজছিলেন। শেষ পর্যন্ত বিতর্ক এড়াতে কিছুটা কৌশলী ভূমিকা নিয়েছেন। দু’দিকে যোগাযোগ রক্ষা করে চলা এসব নেতা নিজেদের অবস্থান প্রকাশ হতে দিতে চান না। তারা রওশনের অনুষ্ঠানে জিএম কাদের ও পার্টির মহাসচিবকে দাওয়াত দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এতে তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য সকালের আয়োজন বিকেলের দিকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

রওশন এরশাদের গুলশানের বাসায় এই আয়োজনে দোয়া ও সংক্ষিপ্ত আলোচনার আয়োজন করা হয়েছে। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি ঢাকাসহ সারাদেশে সীমিত আকারে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ১৪ জুলাই প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে সকালে রংপুর যাবেন কবর জিয়ারত করার জন্য। দুপুরে ফিরে কেন্দ্রীয় কার্যালয় কাকরাইল ও বনানীর পৃথক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কর্মসূচি পালনের জন্য জেলা ও উপজেলা জাতীয় পার্টিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে বিদিশার নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্ট এরশাদের বারিধারায় বাসায় দিনব্যাপী কর্মসূচির আয়োজন নিয়েছেন বলে জানা গেছে।