পূজামণ্ডপে উপস্থিতি, সাকিবের ব্যাখ্যা ও দুঃখপ্রকাশ
ভক্তের মোবাইল ফোন ভাঙা এবং কলকাতায় পূজামণ্ডপে সাকিব আল হাসানের উপস্থিতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল হৈচৈ হচ্ছে। সেই বিতর্ক থামাতে সাকিব নিজেই ব্যাখা দিয়েছেন। জানিয়েছেন কলকাতায় তিনি পূজামন্ডবে কার্যত দৈবক্রমে কিছু সময়ের জন্য ছিলেন। তবে তার মুল কর্মসূচি ছিল অন্য। সাকিব নিজের অফিসিয়াল ফেসবুকে এই প্রসঙ্গে ৭ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের ভিডিও বার্তায় সার্বিক ঘটনার জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন। পূজামণ্ডপে উপস্থিতি প্রসঙ্গে সাকিব যা ভিডিও বার্তায় যা বলেছেন তার পুরোটা পড়ুন এখানে-
‘আমি প্রথমেই বলতে চাই আমি নিজেকে একজন গর্বিত মুসলমান বলেই মনে করি। আমি সেটাই পালন করার চেষ্টা করি। ভুল ত্রুটি হবেই। ভুলত্রুটি নিয়েই আমরা চলাফেরা করি। আমার কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনাদের মনে কোন কষ্ট দিয়ে থাকলে সেজন্যও আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি। এখন আসি পূজার বিষয়টি নিয়ে। নিউজ এসেছে দেখলাম আমি পূজা উদ্বোধন করতে গিয়েছি। যেটি আমি কখনো যাইও নি। কিম্বা করিও নি। এটির প্রমাণ অবশ্যই আপনারা পাবেন। সেখানে আমন্ত্রণ পাওয়া অনেক সাংবাদিক ভাই বোনেরা ছিলেন। অথবা সেই পূজামণ্ডপ উদ্বোধনের আমন্ত্রণ পত্র দেখলেও বোঝা যাবে কে সেই মন্ডব উদ্বোধন করেছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো সেটি উদ্বোধন হয়েছে আমি সেখানে যাবার আগেই। যে জায়গায় আমাদের অনুষ্ঠানটি হয়েছে, সেটি অবশ্যই পূজামণ্ডপ ছিল না। পাশে আরেকটি মঞ্চ ছিল সেখানেই করা হয়েছিল। পুরো অনুষ্ঠানটি সেখানে হয়। প্রায় ৪০/৪৫ মিনিট ব্যাপী সেই অনুষ্ঠানে আমি ছিলাম এবং সেখানে কোন ধরনের ধর্ম-বর্ণ কোনকিছু নিয়েই কথা হয়নি। অনুষ্ঠান শেষে যখন গাড়িতে উঠতে হবে এবং যেহেতু সেখানেই পাশেই পূজার আয়োজন ছিল, আমাকে গাড়িতে উঠতে হবে। যেহেতু পূজা হবে তাই স্বাভাবিকভাবেই অনেকগুলো রাস্তা বন্ধ ছিল। তাই মন্ডপটি ক্রস করে আমাকে যেতে হতো। যেটি আমি গিয়েছি। যাবার সময় পরেশ দা, যিনি আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তার অনুরোধে আমি প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করি। যেহেতু আমি কলকাতায় অনেকদিন খেলেছি। কলকাতার মানুষ আমাকে অনেক পছন্দ করে। সেখানকার সাংবাদিকরাও অনেক উৎসুখও ছিল। সবার অনুরোধে প্রদ্বীপ প্রজ্জ্বলনের সময় পরশ দা’র সঙ্গে দাড়িয়ে একটি ছবি তোলা হয়। ছবি তুলে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে যারা আমার নিরাপত্তা কর্মী ছিল তাদের একটু বাতবিতন্ডাও হয়। একটু হাতাহাতিও হয়। এই কারণে আমরা সুনির্দিষ্ট জায়গা দিয়ে যেতে পারিনি। পরে আবার ব্যাক করে অন্য রাস্তা দিয়ে গিয়েছি। পুরো ঘটনাটা ছিল এরকম। যার ভেতরে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট আমাদের প্রোগ্রামের জন্য যে স্টেজ করা হয়েছিল সেখানে ছিলাম। আমি আবারও বলছি সেখানে কোন ধর্ম-বর্ণ নিয়ে কোন কথা হয়নি এবং তেমন কোন প্রোগ্রামও সেখানে ছিল না। হ্যাঁ যেটা হয়েছে যে দুই মিনিটের সময় আমি পূজা মন্ডপে ছিলাম সেটা নিয়ে সবাই বলেছে এবং ধারণা করছে যে আমি পূজামণ্ডপ উদ্বোধন করেছি। যেটি আমি কখনোই করিনি এবং একজন সচেতন মুসলমান হিসেবে করবোও না। তারপরও ওখানে যাওয়াটাই আমার ঠিক হয়নি। সেটা যদি আপনারা মনে করে থাকেন তাহলে অবশ্যই আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত, ক্ষমাপ্রার্থী এবং আমি মনে করি যে আপনারা এটা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ভবিষৎতে যেন এরকম কোন ঘটনা আর যেন পুনারাবৃত্তি না হয়- আমি সেই চেষ্টাও করবো।
আমি তারপরও তথ্যটা পরিষ্কার করার জন্য বলে দেই, সেই পূজামণ্ডপের উদ্বোধক কে ছিলেন? এখানে আমার কাছে আমন্ত্রণ পত্রটাও আছে। উদ্বোধক ছিলেন ফিরহাদ হাকিম, প্রশাসনিক প্রধান কলকাতা পৌরসভা, মন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গ সরকার। আমি সেই প্রোগামে যাওয়ার আগেই তিনি পূজার উদ্বোধন করে গিয়েছেন। তারপর আমি গিয়ে আমি আমার প্রোগ্রামে গিয়েছি। আপনারা অনেকেই ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড দেখে উত্তেজনাবোধ করছেন। শুধু একটি ছবি দেখে আপনি কখনোই পুরো ঘটনা অনুমান করতে পারবেন না বলে আমার মনে হয়। তারপরও আমি আবারও বলছি, আমার কখনোই কোন ইনটেনশান ছিল না যে আমার ধর্মকে ছোট করে অন্য ধর্মকে বড় করবো। বা অন্য কোন ইস্যুই ছিল না। আমার মনে হয় ইসলাম একটি শান্তির ধর্ম। আমার যদিও জ্ঞান খুবই কম। আমি যদিও চেষ্টা করছি এবং ভবিষৎতেও চেষ্টা করবো যত ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান নেয়া যায় এবং ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী যেন আমি চলতে পারি।
আমি আরো বলবো যে এমন কিছু যেন আমরা না করি যেন মানুষ আমাদেরকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলে দেয় যে আমরা আসলে এক নাকি আলাদা। আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত এক থাকবো ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা শক্তিশালী। আমরা যারা মুসলমান আছি তারা অবশ্যই এক থাকবো। এক থাকা আমাদের জন্য খুবই জরুরি। যখনই আমরা আলাদা আলাদা হয়ে যাবো তখনই দুর্বল। যখনই এক থাকবো তখনই স্ট্রং।
সোস্যাল মিডিয়ায় কয়েকজায়গায় আমি দেখছি যে আমার নামের সামনে শ্রী শ্রী কিম্বা সিধুঁর, প্রদ্বীপ, মন্দির ইত্যাদি দিয়ে অনেকে অনেককিছু বলছেন, আসলে আমরা এতে করে ইসলামের কিম্বা আমাদের ধর্মকে কতোটা উপরে নিচ্ছি নাকি নিচে টেনে আনছি সেটা আমার বোধগম্য নয়। আশা করি আমরা সবাই আমাদের জায়গা থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবো। আমি আবারও আপনাদের সবার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমি নিজের জায়গা থেকে গর্বিত মুসলমান হিসেবে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার চেষ্টা করবো।’