নীল নিঃস্ব হলুদের আলোয়
দুই বেলার দুই দৃশ্য। দুটোতেই সেকি বৈসাদৃশ্য!
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এমন বেলায় নীল জার্সি পরা ভারতের সমর্থকরা আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ছুটছে। ছেলে-বুড়ো-তরুণ-তরুণী-শিশু-কিশোর-কে নেই? হাতে ভারতের তিনরঙ্গা জাতীয় পতাকা। মুখে রং। গায়ে নীল জার্সি। খেলা শুরুর পর গোটা স্টেডিয়াম যেন নীল সমুদ্রের ঢেউ! এই মহা ভিড়ের মধ্যে মাত্র জনাকয়েককে দেখা গেল হলুদ জার্সি পরা। তারা অস্ট্রেলিয়ার সমর্থক। বেশিরভাগই চুপচাপ। কোন ধরনের হুল্লোড় নেই।
রাতে ম্যাচ শেষে দুপুরের এই দৃশ্য পুরো বদলে গেল।
মন খারাপ করা ভঙ্গি নিয়ে নীল জার্সিধারীরা মাঠ থেকে বেরুচ্ছে। মুখে কোন কথা নেই। দলের হারে বেদনার ভার অবয়ব জুড়ে। গালে আঁকা পতাকার রং মুছে গেছে চোখের পানিতে! আর হলুদ জার্সি পরা অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার এবং গ্যালারিতে সামান্য জনাকয়েক অজি সমর্থকরা আনন্দ-উৎসবে মাতোয়ারা। বিশ্বকাপ ট্রফি জিতেছে তারা। ভারতের মাটি থেকে। ভারতের দর্শকদের সামনে থেকে। ভারতের চেনা কন্ডিশনে। যে ফাইনালে ভারত ছিল হট ফেভারিট। সেই ফাইনাল অস্ট্রেলিয়া যে দুর্দান্ত এবং দাপুটে ভঙ্গিতে জিতল সেটা আরেকবার মনে করিয়ে দিল, অস্ট্রেলিয়া সবসময়ে বড় ম্যাচের দল!
আহমেদাবাদের গ্যালারিতে এক লাখ ২০ হাজার ভারতীয় সমর্থকদের অস্ট্রেলিয়া কি করে সামাল দেবে-তা নিয়ে অনেক চর্চা হয়েছিল ফাইনালের আগে। কিন্তু পুরো ফাইনাল জুড়ে অস্ট্রেলিয়া প্রথমে বোলিং-ফিল্ডিং এবং পরে ব্যাটিংয়ে এমন কৃতিত্বই দেখালো যে গ্যালারির লাখো দর্শক তেমন হুল্লোড় তোলার সুযোগই যে পেলো না।
রৌদ্রজ্জ্বল ফাইনালে মাঠের ক্রিকেটে দুপুরে অস্ট্রেলিয়া যে দাপুটে বোলিং করল তাতেই গ্যালারির নীলকে আর খুঁজে পাওয়া গেল না। মনে হচ্ছিল রোদের আলোয় হলুদের তীব্র ঝলকানিতে নীল যে নিঃস্ব হয়ে গেল।
শুরুতেই অস্ট্রেলিয়ার তেজি ও বুদ্ধিদীপ্ত গতিময় বোলিংয়ের কাছে হাঁটু গাড়ল ভারত ব্যাটিং!
হাটুগাড়াই তো বটে! যে দল পুরো বিশ্বকাপ জুড়ে দামাকা ব্যাটিং করলো অনায়াসে তিনশ, সাড়ে তিনশ ও চারশো রান তুললো স্কোরবোর্ডে। সেই দলই ফাইনালে ২৪০ রানের মামুলি সঞ্চয়ে আটকে গেল! ফাইনালের উইকেট খানিকটা স্লো ছিল কিন্তু তাই বলে আড়াইশ’র নিচে আটকে যাওয়ার মতো কোনোকিছু এখানে ছিল না!
অতিমাত্রায় সতর্ক হতে গিয়ে ভারত আক্রমণাত্মক মেজাজটাই হারিয়ে ফেলে। ব্যাটিংয়ে কোনো সময় খোলস ছেড়ে বেরুতেই পারেনি। বিরাট কোহলি ও কেএল রাহুল হাফসেঞ্চুরি করলেও কেউ নিজের ইনিংসটা ‘বড়’ করতে পারেনি। সবচেয়ে বড় ব্যর্থ হন সূর্যকুমার যাদব। ২৪০ রানের যৎসামান্য সঞ্চয় নিয়ে ফাইনালে হয়তো সামান্য লড়াই করা যায় কিন্তু ট্রফি জেতা যায় না!
সেই অভিজ্ঞতা পেল ভারত ৬ উইকেটে ফাইনালে হেরে। যে উইকেটে ভারত রান তুলতে হাঁসফাঁস করছিলো সেখানেই অস্ট্রেলিয়া শুরুতে ৩ উইকেট হারিয়েও ম্যাচ জিতল প্রায় অনায়াস ভঙ্গিতে। মারনাস লাবুসানে ও ট্রাভিস হেডের ১৯২ রানের জুটিতে ফাইনাল পুরো একপেশে করে দিল অস্ট্রেলিয়া।
গোটা টুর্নামেন্টে একপেশে একরোখা ভঙ্গিতে জিতে ফাইনালে এসে ভারতের স্বপ্নভঙ্গ। আহমেদাবাদের সবুজ মাঠের চারধারের অস্ট্রেলিয়া যখন বিশ্বকাপ জয়ের উৎসব করছিল তখন গ্যালারিতে নীল জার্সিধারীদের রাজ্য হারানোর মাতম!
পুরো টুর্নামেন্টে যে গতি ও মেজাজ নিয়ে রোহিত শর্মার দল ফাইনালে উঠে এসেছিলো তাকে মনে হচ্ছিলো ফাইনালের মঞ্চও সেজেছে ভারতের জন্যই। পুরো বিশ্বকাপ শাসন করলো ভারত আর ফাইনালে জিতে ‘রাজ্য’ জিতল অস্ট্রেলিয়া!