পঞ্চাশেই চলে যাওয়া জিয়ার জীবনের গল্প
দাবা দিয়েই পরিচিতি, যশ-খ্যাতি। দাবা খেলাটিই ছিল তার নেশা এবং পেশা। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন যে, দাবাই তার পরিবার, দাবা ফেডারেশন ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ তার দ্বিতীয় ঘর। সেই দাবার বোর্ডেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন গ্র্যান্ডমাষ্টার জিয়াউর রহমান। আজ (শুক্রবার) সন্ধ্যা ৬টার দিকে মৃত্যুবরণ করেছেন তিনি।
জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপের ৪৮ তম আসরে আজ আরেক গ্র্যান্ডমাস্টার রাজীবের বিপক্ষে ১২তম রাউন্ড খেলছিলেন জিয়া। সেখানেই অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে হঠাৎ মাথা ঘুরে চেয়ার থেকে পড়ে যান তিনি। পরে সবাই তাকে রাজধানীর পল্টনের ফেডারেশন ভবন থেকে নিচে নামিয়ে দ্রুতই নেয় হাসপাতালে। তবে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা প্রায় ১৫ মিনিট পর্যন্তও তার কোনো পালস খুঁজে পাননি। এতেই আরও কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণের পর জিয়াকে মৃত ঘোষণা করে চিকিৎসকরা।
প্রাথমিক কারণ হিসেবে তার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল বলে জানা যায়।
কেবল পঞ্চাশ বছর বয়সে অকাল মৃত্যু ঘটল বাংলাদেশের দ্বিতীয় গ্র্যান্ডমাস্টারের। তার মৃত্যুতে ক্রীড়াঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তার পরিবার-পরিজনরা মেনে নিতে পারছেন না জিয়ার এই আকস্মিক মৃত্যু।
জিয়ার অনাকাঙ্ক্ষিত এই মৃত্যুর সময়ও তার স্ত্রী তাসমিন সুলতানা লাবণ্য ছিলেন সেখানেই। খেলা দেশ-বিদেশের যেখানেই হোক সকল টুর্নামেন্টেই তিনি উপস্থিত থাকতেন জিয়ার সঙ্গে। খারাপ-ভালো সবসময়ই তাই স্ত্রীকে পাশে পেয়েছেন এই গ্র্যান্ডমাস্টার। মৃত্যুর সময়ও হাসপাতালেই উপস্থিত ছিলেন লাবণ্য। স্বামীর মৃত্যুর সংবাদ জানার পর আঝোরে কাঁদতে থাকেন তিনি। কোনোভাবেই তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বোঝানো যাচ্ছিল না।
দেশের ক্রীড়াঙ্গনের এই তারকার জন্মটা ১৯৭৪ সালের পহেলা মে। ১৯৯৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার ও ২০০২ সালে গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব অর্জন করেন। তিনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় গ্র্যান্ডমাস্টার। জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপের উন্মুক্ত ইভেন্টে সর্বোচ্চ ১৪ শিরোপা জেতেন এই গ্র্যান্ডমাস্টার। বাংলাদেশি দাবাড়ুদের মধ্যে অক্টোবর ২০০৫ সালেই সর্বোচ্চ (২৫৭০) ফিদে রেটিং অর্জন করেছিলেন জিয়া।
এদিকে জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপের উন্মুক্ত ইভেন্টে সর্বোচ্চ ১৪ শিরোপা জিতেছেন এই গ্র্যান্ডমাস্টার। ১৯৮৮ সালে প্রথমবার জাতীয় দাবায় চ্যাম্পিয়ন হন। সবশেষ হয়েছেন ২০১৮ সালে। এই টুর্নামেন্টে রেকর্ড ১৪ বারের চ্যাম্পিয়নও তিনি। যেখানে অন্য চার গ্র্যান্ডমাস্টার সম্মিলিতভাবে জিতেছেন ১৬ বার।
সাদা-কালো বোর্ডের এই দাবা খেলা যেন তার রক্তেই মিশে ছিল। তার বাবা পয়গাম উদ্দিনের হাত ধরেই তিনি দাবার জগতে এসেছিলেন। অর্জন করেছেন একাধিক সম্মাননা ও পুরষ্কার। তার ছেলে তাহসিন তাজওয়ার জিয়াও একই পথে হেঁটেছেন। তিনিও হয়েছে ফিসে মাস্টার। যে দাবা খেলাকেই জীবনের প্রথম ও প্রধান ভালোবাসার জায়গায় রেখেছিলেন, সেই দাবা খেলার বোর্ডেই মৃত্যু হলো তার।
বয়সে ‘হাফ-সেঞ্চুরি’ করা জিয়া নিঃসন্দেহেই চিরকাল অমর হয়ে থাকবেন বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে। থাকবেন সকল দাবাড়ুর আদর্শ হয়ে। তার এমন আকস্মিক মৃত্যুর খবরে পুরোদস্তুর শোকাহত বাংলাদেশ ক্রীড়াঙ্গন। চোখের জল ফেলে সবাই একটাই কথা বলছেন, বড় ভালো মানুষ ছিলেন তিনি, বড্ড দ্রুত চলে গেলেন জিয়া।