আফগানিস্তানের সম্ভাব্য জয়ে প্রতিপক্ষ বাংলাদেশের ব্যাটিং নয়, বৃষ্টি!
চট্টগ্রাম টেস্টে জয়ের জন্য বাংলাদেশের টার্গেট ৩৯৮ রান। চতুর্থদিন শেষ বিকালে সেই লক্ষ্য কমে দাঁড়ালো ২৬২ রানে। কিন্তু তাতে স্বস্তি কই? উইকেট যে হারিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ ছয়টি। জেনুইন ব্যাটসম্যান বলতে বাকি কেবল সাকিব আল হাসান ও সৌম্য সরকার। শেষের ৪ উইকেটে বাংলাদেশ জয়ের টার্গেট টপকে যাবে-এমন আশার পেছনে তেমন কোনো যুক্তি নেই। বরং আফগানিস্তান কতো রানে জিতবে নাকি পঞ্চম এবং শেষদিন পুরোটাই বৃষ্টিতে ভিজে ড্র হবে চট্টগ্রাম টেস্ট আটকে আছে এখন এই দুই প্রশ্নেই!
চতুর্থদিনের সকালের শুরুর সঙ্গে শেষ বিকালের বেশ ভালো একটা মিল খুঁজে পাওয়া গেলো এই টেস্টে। সকালে বৃষ্টির কারণে খেলা শুরু হলো দু’ঘন্টা দেরিতে। আর শেষ বিকেলের বৃষ্টিতেও আগে ভাগে খেলা বন্ধ হলো। এর মাঝে আরো বার তিনেক বৃষ্টি ঝাপটায় খেলার সময় নষ্ট হলো।
তবে আপাতত কোনোকিছুতেই বাংলাদেশের ভাগ্য ফিরলো না। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় দফায়ও বাংলাদেশের ব্যাটিং শৃঙ্খলাবিহীন! দায়িত্বের অভাব স্পষ্ট। সামর্থ্যের সঙ্কট। রশিদ খান ও জহির খানের স্পিন সামাল দেয়ার অদক্ষতাই জানান দিচ্ছে আমাদের ব্যাটসম্যানদের সামর্থ্যেরও অভাব আছে!
সকালে আফগানিস্তান তাদের দ্বিতীয় ইনিংসের বাকি অংশ বেশি দীর্ঘায়িত করতে পারেনি। মাত্র ২৩ মিনিট খেলে। যোগ করে ২৩ রান। হারায় শেষ দুই উইকেট। বাংলাদেশের সামনে তারা ৩৯৮ রানের টার্গেট দাঁড় করায়।
রান তাড়ায় নেমে বাংলাদেশ লাঞ্চ পর্যন্ত কোনো উইকেট না হারিয়ে ৩০ রান তুলে। কিন্তু দ্বিতীয় সেশনেই শুরু হয় ইনিংস ধসের। লিটন দাস ফিরলেন ৯ রানে। উইকেটের পেছনে তার ক্যাচের আপিল করেন জহির খান। আম্পায়ার সেই আপিলে সাড়া দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে লিটন দাস রিভিউ নিলেন। রিভিউ জানালো-বল ব্যাটে লাগেনি। আম্পায়ারকে তার সিদ্ধান্ত বদল করতে হলো। কিন্তু সেই ওভারে শেষ হাসি হাসলেন জহির খানই। সেই ওভারে একবল বাদে তৃতীয় বলেই এলবি হলেন লিটন। পেছনের পায়ে খেলতে গিয়ে পুরোদুস্তর হার মানলেন তিনি।
মোসাদ্দেক হোসেন প্রথম ইনিংসে ভালোভাবে স্পিন সামাল দেয়ায় দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়ানডাউনে প্রমোশন পান। কিন্তু তাকে ঘিরে থাকা অধিনায়কের উচ্চাশা ও ইচ্ছের মূল্য দিতে পারলেন কই মোসাদ্দেক?
চরম বাজে কায়দায় টি-টুয়েন্টি স্টাইলে ব্যাট চালাতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এলেন। রশিদ খানের স্পিন বুঝতে পারলেন না মুশফিক। ২৩ রানে এলবি হলেন। রিভিউ নিয়েও রক্ষা হলো না মুশফিকের। উইকেটের সঙ্গে রিভিউটা গেলো!
মমিনুল হকও খানিকবাদে রশিদ খানের বলে একই কায়দায় শিকার। দিনের দ্বিতীয় সেশনে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। স্কোরবোর্ডে জমা তখন মাত্র ১০২ রান। শেষ সেশনের শুরুতে ফিরলেন সাদমান। ১১৪ বল খেলে ৪১ রানে সাদমান অফস্পিনার মোহাম্মদ নবীর বলে আউট হলেন। আরেকটি এলবিডব্লু বাংলাদেশের ইনিংসে। আউট হওয়া ছয় ব্যাটসম্যানের মধ্যে চারজনই এলবি! আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের রানে ফেরা হলো না এই ম্যাচে। রশিদ খানের তৃতীয় শিকার হয়ে শর্টে ক্যাচ তুলে ফিরলেন মাহমুদউল্লাহ।
সাকিব ও সৌম্য অপরাজিত থেকে দিনটা শেষ করেন। পঞ্চম এবং শেষদিন এই ম্যাচে অন্তত লড়াই করতে হলেও এরাই শেষ ভরসা!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান: ৩৪২/১০ (১১৭ ওভারে, রহমত শাহ ১০২, আসগর আফগান ৯২, আফসার ৪১, রশিদ খান ৫১, তাইজুল ৪/১১৬) ও ২৬০/১০ ( ৯০.১ ওভারে, ইব্রাহিম জাদরান ৮৭, আসগর আফগান ৫০, আফসার ৪৮, রশিদ খান ২৪, সাকিব ৩/৫৮)।
বাংলাদেশ: ২০৫/১০ (৭০.৪ ওভারে, লিটন ৩৩, মমিনুল ৫২, মোসাদ্দেক ৪৮*, রশিদ খান ৫/৫৫, নবী ৩/৫৬) ও ১৩৬/৬ (৪৪.২ ওভারে, সাদমান ৪১, মুশফিক ২৩, সাকিব ৩৯*, সৌম্য ০*, রশিদ ৩/৪৬) #চতুর্থদিন পর্যন্ত।