বিজয় মঞ্চে স্বর্ণ জয়ী সুমা বিশ্বাসের আনন্দাশ্রু
সাফল্যের আনন্দে বিজয় মঞ্চে দাঁড়িয়েই অঝোরে কাঁদলেন সুমা বিশ্বাস।
তার যে এই গেমসে প্রতিযোগী হিসেবে অংশ নেওয়ারই কথা ছিল না! তিনি ছিলেন দলের সেরা খেলোয়াড়ের তালিকায় চতুর্থ স্থানে। মূল প্রতিযোগিতায় তার লড়াইয়েই নামার কথা না! অথচ সেই তিনিই তীরধনুক হাতে নিয়ে দাঁড়ালেন। পারফেক্ট টার্গেট করলেন। এনে দিলেন দলকে স্বর্ণপদক! আকস্মিক এই সাফল্যের আনন্দাশ্রু লুকিয়ে রাখার কোনো চেষ্টাই করলেন না আর্চারিতে নারীদের কম্পাউন্ড এককের স্বর্ণ জয়ী সুমা বিশ্বাস।
স্বর্ণ জয়ের পর কথা বলছেন। কিন্তু চোখের কোণ বেয়ে অঝোর ধারায় জল গড়িয়ে পড়ছে। এ যে আনন্দের অশ্রু। চোখের এই জলে লেখা সাফল্যের খুশি!
সুমা বলছিলেন- ‘কখনোই ভাবতে পারিনি যে আমি এতদূর পর্যন্ত আসব। অনেক কষ্ট করেছি। ফেডারেশনের স্যাররা সমর্থন দিয়েছেন। পরিবার আমাকে সমর্থন যুগিয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে আল্লাহ স্বয়ং যেন আমাকে সহায়তা করেছেন। আমি এখানে আসার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। ইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা ছিল আমার। লম্বা পথ পার হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হতো। প্রাকটিস-পরীক্ষা সবকিছুতে সময় দেওয়াটা আমার জন্য খুব কষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। সত্যি বলতে কি আমি কখনো ভাবিওনি যে এখানে ফাইনাল পর্যন্ত উঠব। শুধু তাই না, আমি যে দলে খেলার সুযোগও পাব সেটাই যে চিন্তায় ছিল না। কারণ আমি তো দলের চার নম্বর খেলোয়াড়। আমার আগে তো আরো সেরা খেলোয়াড়রা আছে। তাই দলে সুযোগ পাব কিভাবে?’
অথচ বাস্তবতা হলো আর্চারির ফাইনালের শেষ দিনের সকালে বাংলাদেশকে প্রথম স্বর্ণপদক এনে দিলেন সেই সুমা বিশ্বাসই।
ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো বড় কোনো আসরে আর্চারির ফাইনালে খেললেন। এবং স্বর্ণ জিতলেন! সাফল্যের এই নতুন সম্ভাবনাকে আরও অনেক দূর নিয়ে যেতে চান সুমা বিশ্বাস- ‘আমি যেন সামনের সব গেমসে সুযোগ পেতে পারি সেভাবেই নিজেকে এখন তৈরি করব। আরও অনেক গেমসে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের জন্য, এদেশের মানুষের জন্য যেন কিছু করতে পারি সেটাই এখন আমার স্বপ্ন!
আর্চারিতে বাংলাদেশ এবার নজির গড়া সাফল্য দেখিয়েছে। দশ ইভেন্টের মধ্যে দশটিতেই স্বর্ণপদক জয়। গেমসের এই সাফল্যকে আর্চারির এগিয়ে যাওয়ার পথে অনেক বড় ইতিবাচক একটা দিক হিসেবে দেখছেন সুমা বিশ্বাস- ‘এই সাফল্য আর্চারির জন্য অনেক বড় ব্যাপার। ক্রিকেট বা ফুটবলের মতো আমাদের দেশে আর্চারি ঠিক তেমন ভাইরাল (জনপ্রিয় বা পরিচিত) না, তবে এই গেমসে আমাদের জয়ী পদকগুলো এবার আর্চারি সম্পর্কে দেশের মানুষদের ধারণা কিছুটা হলেও বদলে দিতে পারে। মানুষ হয়তো এখন নিশ্চয়ই চিনবে যে-নাহ্ আর্চারির মতো একটা খেলাও বাংলাদেশে আছে!’