একটি ‘নিশ্চিত নো বলের’ রহস্য!
বিপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচে কে জিতল?
সেটা আপনি অনেক আগেই জেনে গেছেন। তবে অবাক করার বিষয় হলো ১১ ডিসেম্বরে শুরু হওয়া বিপিএলের দুই ম্যাচের ফল নিয়ে যতবেশি না আলোচনা হচ্ছে তারচেয়ে বেশি কৌতূহল ছড়াচ্ছে উদ্বোধনী দিনের প্রথম ম্যাচের একটি নো বল!
সিলেট থান্ডারের পেসার ক্রিসমার স্যান্টোকি আলোচিত এই নো বল করেন। স্যান্টোকির সেই ওভারের বর্ণনা শুনি আগে।
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের ঘটনা। ক্রিসমার স্যান্টোকি ম্যাচে তার প্রথম ওভার করতে এলেন। প্রথম দুই বলে কোনো সমস্যা নেই। তৃতীয় যে বলটা করলেন সেটা লেগ সাইডে এত বেশি ওয়াইড হলো যে বাঁ-দিক দিয়ে সরে এসে গোলকিপারের ভঙ্গিতেই ঝাঁপিয়ে পড়ে ধরতে হলো উইকেটকিপার মোহাম্মদ মিঠুনকে।
বলের ওপর বোলার হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারালে ক্রিকেটে এতো বিশাল ওয়াইড দেখতে পাওয়া কোনো অবাক করার মতো ঘটনা নয়। আর তাই স্যান্টোকির সেই বিশাল ওয়াইড নিয়ে তেমন বাড়তি কোনো কৌতূহলের কিছু ছিল না। কিন্তু ঠিক দুই বল পরেই তিনি এবার করলেন নো বল। তার এই নো আবার বেশ বড়! শুধু বড় না, একেবারে যাকে বলে বিশাল! তেমন কিছুই!
- নো বলটা কত বড়?
-প্রায় এক ফুটেরও বেশি! অর্থাৎ পপিং ক্রিজের যে দাগের বাইরে পা পড়লে নো বল হয়, সেই দাগের চেয়ে এক ফুটের বেশি দূরে পড়ল স্যান্টোকির ডান পা! যেহেতু তিনি বাঁহাতি বোলার তাই ল্যান্ডিংয়ের সময় তার ডান-পা’টা আগে যাবে।
টিভি রিপ্লেতে স্যান্টোকির এতো বিশাল নো বল দেখে শুধু প্রেসবক্স নয়, ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট সবাই অবাক এবং একই সঙ্গে কৌতূহলীও বটে!
স্যান্টোকির এই বিশাল নো বল হঠাৎ করেই ২০১০ সালের লর্ডস টেস্টে মোহাম্মদ আমিরের নো বলের সেই দুষ্কর্মের কথা মনে করিয়ে দিল। নো বল ‘নিশ্চিত’ করতেই অত বড় ওভার স্টেপিং করে ছিলেন সেদিন মোহাম্মদ আমির। আদালতের কাছে পরে সেটা স্বীকারও করেছেন। ফিক্সিংয়ের সেই অপরাধে ক্রিকেট থেকে লম্বা সময়ের জন্য নিষিদ্ধও হয়েছিলেন পাকিস্তানি এই পেসার।
মোহাম্মদ আমিরের সেই দুষ্কর্মের পর থেকে স্পট ফিক্সিংয়ের ক্রিকেটীয় এই যুগে কোনো বোলারের বিশাল নো বল মানেই বাড়তি কৌতূহল, কানাঘুষা এবং বিতর্কের শুরু। স্যান্টোকির বিশাল নো বলও সেই তালিকায় পড়ে গেল তাহলে?
১১ ডিসেম্বর এই ম্যাচ কাভার করা রাইজিংবিডির ক্রিকেট প্রতিনিধি ইয়াসিন রাব্বী বার্তা২৪কে জানান- ‘নো বল হতেই পারে, কিন্তু তাই বলে এত বড় নো বল! দেখে তো মনে হচ্ছে নিশ্চয়ই কোনো ঝামেলা আছে। নিজের সেই ওভারেই ক্রিসমার স্যান্টোকি যে ওয়াইড বল করেন, সেটাও বিশাল! নো বলটা তো আরো বিশাল! দেখে মনে হচ্ছে এমন সব ডেলিভারির পেছনে আরও ‘‘বিশাল’’ কোনো কিন্তু আছে!’
স্যান্টোকির আলোচিত সেই নো বল প্রসঙ্গে ক্রিকইনফোর বাংলাদেশ প্রতিনিধি মোহাম্মদ ইসাম বলছিলেন- ‘এই নো বলটা মোহাম্মদ আমিরের নো বলের অপকীর্তির কথাই আমাদের মনে করিয়ে দেয়। স্যান্টোকির নো বলটা আমি দেখলাম। আমার কাছে এত বড় একটা নো বল সত্যি বলতে কি বিশাল একটা বিস্ময়ের ব্যাপার! আমি মনে করি বিসিবির কাছ থেকে এই ডেলিভারির ব্যাপারে একটা পরিষ্কার ব্যাখ্যা দেওয়া দরকার। এই ডেলিভারি নিয়ে চারধারে বেশ কৌতূহল ছড়িয়েছে। সেই ডেলিভারির মিনিট কয়েকের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি চলে এসেছে। বিপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচে কে জিতল কে হারল? কে হাফসেঞ্চুরি করল, সেসবের চেয়ে স্যান্টোকির নো বলটাই বেশি আলোচনা ছড়িয়েছে। একটা নেতিবাচক বিষয় যখন অতিমাত্রায় আলোচিত বা হাইলাইটেড হয়ে যায় তখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অবশ্যই সেই বিষয়ে একটা পরিষ্কার ব্যাখ্যা আসা উচিত। এমন সব বিষয় নিয়ে বিপিএল কর্তৃপক্ষ কেমন সিরিয়াস- সেটা তাহলে পরিষ্কার হতো।’
মনে সন্দেহ রেখে যেমন সামনে বাড়তে নেই। কার্পেটের নিচে ময়লা রেখে ঘরও পরিষ্কার করা যায় না। এই সন্দেহ-ময়লা সবকিছু পরিষ্কারের দায়িত্ব এখন বিসিবির।