কলরেট কমাতে গণশুনানির দাবীসহ বিএমপিসিএ’র ৯ দফা
ভয়েস কলরেট বাড়ানোর প্রতিবাদ ও বাড়নোর ব্যাখ্যার দাবিতে বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মুক্ত সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন (বিএমপিসিএ) নামের সংগঠন।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি কলরেট কমাতে ৯ দফা প্রস্তাবনা পেশ করে। লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইইটিইউ) সহায়তায় বিটিআরসি ভয়েস কলের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন রেট বেঁধে দেয়।
ওই ময় নিয়ন্ত্রক সংস্থা একটি রেটও নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু গত ১৪ আগস্ট ২০১৮ হঠাৎ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি প্রজ্ঞাপন জারী করে গ্রাহকদের ম্যাসেজের মাধ্যমে জানায়- এখন থেকে কলরেটে অন নেট অফ নেট থাকবে না।
রেট হবে পূর্বের সর্বনিম্ন রেট ২৫ পয়সার স্থলে ৪৫ পয়সা আর সর্বোচ্চ কলরেট ২ টাকা থাকবে। এর মধ্যে অপারেটররা যার যার সুবিধা দিতে পারবে। কারণ একটি অপারেটরের ৯০ শতাংশ কল হচ্ছে অন নেটে। অন্য অপারেটরদের ৭০ শতাংশ।
আর রাষ্ট্র মালিকানাধীন টেলিটকের ১০ শতাংশ। যুক্তি হিসাবে বলা হয়- অন নেট, অফ নেট এক হওয়াতে মনোপলি ভাঙা যাবে।
মনোপলি ভাঙার কাজ এই নিয়ন্ত্রক সংস্থার নয় উল্লেখ করে মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, দেশে প্রতিযোগিতা কমিশন থাকা সত্ত্বেও তাদের এই যুক্তি অত্যন্ত হাস্যকর এবং প্রজ্ঞাপনে ফাঁক-ফোকর থাকায় চরমভাবে অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়বে গ্রাহকরা। কারণ আপনি ২৫ পয়সার জায়গায় ৪৫ পয়সা করেছেন। আর সর্বোচ্চ ২ টাকা নিতে বলেছেন। তাহলে কেউ যদি ১.৮০ পয়সা বা সর্বোচ্চ ২ টাকায় নেয় তার জন্য তাকে কি দায়ী করা যায়?
কলরেট কমাতে ৯ দফা প্রস্তাবনা ও দাবী জানিয়েছে মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন। দাবীগুলো হলো-
১. অফ নেট, অন নেট প্রথা বাতিল করে সরাসরি একক কল লাইন চালু করা।
২. কলরেট পূর্বের ২৫ পয়সা বা তারও কম করা যায় কিনা তার জন্য গণশুনানি ও নতুন করে কল রেট নির্ধারণের ব্যবস্থা করা।
৩. টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে গ্রাহক সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আলাদা আইন ও কমিশন করা।
৪. কলরেটের ক্ষতিপূরণ গ্রাহককে দ্রুত ফেরৎ দেওয়ার ব্যবস্থা।
৫. নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা আগামী ১ মাসের মধ্যে ঠিক করা।
৬. বাজেটে পাশ হওয়া ইন্টারনেটের ওপর ১০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের ঘোষণা কেন বাস্তবায়িত হলো না- তা ব্যাখ্যাসহ বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া।
৭. যখন তখন প্রমোশনাল ম্যাসেজ পাঠানো বন্ধের নির্দেশ কেন বাস্তবায়ন করছে না অপারেটররা তার ব্যাখ্যা ও এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৮. এমএনপি চালুর পূর্বে অপারেটর পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ৩০ টাকা আদায়ের সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত ১০০ টাকা ভ্যাট কে দেবে এবং কীভাবে এ অর্থ আদায় হবে সেটার স্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান করতে হবে।
৯. ফোরজি-চালুর ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার চুক্তি অনুযায়ী মোবাইল ইন্টারনেটের গতি ২০ এমবিপিএস আগামী ৬ মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে।
বিটিআরসির তথ্যমতে দেশে বর্তমানে সক্রিয় সিমের সংখ্যা ১৫ কোটি ২৫ লাখ। গ্রামীণফোনের ৭ কোটি ২ লাখ, রবির ৪ কোটি ৫৩ লাখ, বাংলালিংকের ৩ কোটি ৩৪ লাখ, টেলিটকের ৩৭ লাখ। বিটিআরসির হিসাবমতে গ্রামীণফোনের অন নেট কল হয় ৯০ শতাংশ, রবির ৭১ শতাংশ, বাংলালিংকের ৬৯ শতাংশ ও টেলিটকের ১০ শতাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবির, বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, দুর্নীতি প্রতিরোধ আন্দোলনের আহ্বায়ক হারুন অর রশিদ খান, বাংলাদেশ মোবাইল ফোন রিচার্জ ব্যবসায়ী এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আমিনুল ইসলাম বুলু।
এছাড়া অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের সভাপতি কবির চৌধুরী তন্ময়, পোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর কাজী আমান উল্যাহ মাহফুজ, বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন’র সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম, অর্থ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. শামছুল মনির, প্রচার সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাকসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, পেশাজীবি ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।