ই-কমার্স খাতের উন্নয়নে ব্র্যান্ড ট্রান্সফরমেশন কেনো গুরুত্বপূর্ণ
গত দুই যুগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভূতপূর্ব বিকাশে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে যে অনন্য পরিবর্তন এসেছে তা যে কোনও কল্পকাহিনীকেও হার মানায়। চলাচল কিংবা যোগাযোগ থেকে শুরু করে কেনাকাটা পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই এখন প্রযুক্তির জয়জয়কার। মাত্র কয়েক বছর আগেও ঘরে বসে কেনাকাটা করার ব্যাপারটি সবার কাছে ছিল অনেকটাই স্বপ্নের মত কিন্তু আজ তা ধীরে ধীরে হয়ে উঠছে জীবনের নিত্যসঙ্গী। অনলাইনে অর্ডার করে বাসার দরজা থেকেই হাতে পাওয়া যাবে না এমন পণ্য এখন খুজে পাওয়া দুষ্কর।
অনেকগুলো খাতের জন্য কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারি বিপর্যয় বয়ে আনলেও ই-কমার্স খাতে তা খুলে দিয়েছে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার। লকডাউনের বিধিনিষেধে অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ থাকায় এবং সংক্রমণের ঝুকিতে মানুষ ঘর থেকে বের হতে না পারায় জনজীবনে যে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছিলো, তার সমাধানে অনেকাংশেই সফল ছিলো ই-কমার্স খাত।
ফলে বিগত বছর গুলোর তুলনায় এ খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল বিস্ময়কর। সেই সময় এই খাত সাফল্যের যে উর্ধ্বমুখী সূচকের দেখা পায়, তা এখনও বিরাজমান। গত বছর ই-কমার্স খাতে ব্যবসা বেড়েছে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ, যেখানে কোভিডের আগে এর বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ছিল ২০-২৫ শতাংশ।
এই এক বছরেই এ খাতে লেনদেন হয় প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। মহামারিতে অন্যান্য প্রায় সকল ব্যবসায়িক কার্যক্রম মন্থরিত হয়ে পড়লে সঙ্কটকালীন এ সময়ে দেশের অর্থনীতির ভারসাম্য ধরে রাখতে মুখ্য ভুমিকা রেখেছে ই কমার্স।
বর্তমান পরিস্থিতির দিকে তাকালে দেখা যায়, লকডাউনের কঠোরতা শেষেও একটি বড় অংশের ক্রেতাদের স্থায়ী ভাবে অনলাইন কেনাকাটায় অভ্যস্ত করে তুলতে ভালোভাবেই সফল ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গুলো।
এই ক্রেতাদের ধরে রাখতে ও নতুন ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে দরকার নিত্য নতুন বিপণন কৌশল। আর তাই পৃথিবীর সব বড় বড় ব্র্যান্ডগুলোর মত গ্রাহকের কাছে নিজেদের নতুনরূপে প্রকাশ করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করে ই কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোও।
একটি প্রতিষ্ঠানকে বাজারের শীর্ষস্থানে পৌঁছে দিতে এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য সম্ভাব্য ক্রেতা আকর্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ব্র্যান্ডের পুনঃসংকলন। গ্রাহককে সর্বোত্তম সেবা প্রদান করার অভিপ্রায় থেকেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়। গ্রাহকের সুবিধা, সহজবোধ্যতা ও সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে এবং গ্রাহকের মনে নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় আরও দৃঢ় করতে সময়ের পরিক্রমায় বিশ্বের অনেক সফল নামী-দামী প্রতিষ্ঠান এই প্রক্রিয়াকে গ্রহণ করে নিয়েছে।
গত কয়েক বছর ধরে অনেক বিখ্যাত ব্র্যান্ড নিজেদের নতুন করে আবিষ্কার করার চেষ্টা করেছে এবং তারা এর মধ্য দিয়ে নিজেদেরকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ম্যাকডোনাল্ড নতুন প্যাকেজিং এর সাথে স্টোরগুলো পুনরায় ঢেলে সাজায় এতে করে তাদের শপগুলোতে ক্রেতার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
মাস্টারকার্ডের মতো সুপরিচিত ব্র্যান্ডও তাদের কাঙ্খিত ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে নতুন ওয়েবসাইট গ্রাফিক্স এবং নতুন লোগো তৈরি করে। মিউজিক স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম প্যান্ডোরা, সার্চ ইঞ্জিন মজিলা, ইন্সটাগ্রাম ও হাফিংটন পোস্টও ইতিবাচক ইমেজ তৈরির ক্ষেত্রে গত কয়েক বছরে তাদের ব্র্যান্ড পুনঃনির্মাণ করেছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক উন্নতির জন্য ব্র্যান্ডের রূপান্তরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা মাথায় রেখে দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস দারাজ তাদের ক্রেতা ও ভোক্তাসহ সকল অংশীজনদের কথা বিবেচনা করে নিজেদের রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
২০১৪ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকেই ক্রেতাদের উন্নতমানের সেবা প্রদানের মাধ্যমে নিজেদের নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে প্রতিষ্ঠানটি। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির সাথে ক্রেতাদের একটি হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।
এই মার্কেটপ্লেস থেকে যারা একবার পণ্য ক্রয় করেন তারা নতুন পণ্য কেনার প্রয়োজন পড়লে এই মার্কেটপ্লেসেই ফিরে আসেন। তাই, ক্রেতাদের কেনাকাটা করার স্বাচ্ছন্দ্যময় অভিজ্ঞতা দিতে ট্রান্সফরমেশনের নতুন উদ্যোগ নিয়েছে দারাজ। এ ট্রান্সফরমেশনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের ই- কমার্স খাতে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করবে বলে আশা করা যাচ্ছে।