মোবাইল ডাটার মেয়াদহীনতার যুগে বাংলাদেশ
গ্রাহক স্বার্থ রক্ষায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিটকের ইন্টারনেট ডাটার মেয়াদের সীমাবদ্ধতা থাকবে না। অর্থাৎ যত দিন ডাটার ব্যালেন্স থাকবে ততদিন গ্রাহক তার ক্রয়কৃত ডেটা ব্যবহার করতে পারবেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার গ্রাহক স্বার্থ বিবেচনায় মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) এ ঘোষণা দেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ১৭ মার্চ থেকে টেলিটক এই ব্যবস্থা কার্যকর করবে। মন্ত্রী ঢাকায় বিটিআরসি মিলনায়তনে মোবাইল অপারেটরসমূহের ডাটা এবং ডাটা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্যাকেজ সম্পর্কিত নতুন নির্দেশনা বাস্তবায়ন বিষয়ক অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, বিশ্বে এই প্রথমবারের মতো মোবাইল ডাটার কোন মেয়াদ রাখার সীমাবদ্ধতা থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে এলো। টেলিটকের পর অন্য অপারেটরসমূহ পর্যায়ক্রমে এই ব্যবস্থা চালু করবে বলে মন্ত্রী দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আমার ডাটা আমি ব্যবহার করবো, যতদিন ব্যালেন্স থাকবে ততদিন করবো- গ্রাহকদের এটাই দাবি। আমরা সেই দাবিই বাস্তবায়ন করছি। কলড্রপের ফলে গ্রাহকদের আর্থিক ক্ষতির বিষয়টিও গুরত্বের সাথে দেখার জন্য তিনি মোবাইল অপারেটরসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল সেবা সবার জন্য সহজলভ্য এবং ন্যায় সঙ্গত হোক এটাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের লক্ষ্য।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ডিজিটাল সংযুক্তির মহাসড়ক তৈরি নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে পঞ্চম শিল্প বিপ্লবের উপযোগী করা হবে উল্লেখ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা লড়াই করছি। তিনি বলেন, এই লড়াইয়ে টেলকো ইন্ডাস্ট্রির অপরিসীম ভূমিকা রয়েছে। করোনাকালে দেশব্যাপী ফোর –জি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য অপারেটরসমূহের ভূমিকার প্রশংসা করে মন্ত্রী বলেন, কোন কিছু নির্দেশ দিয়ে নয় আমরা অপারেটরদের সাথে সব সময় এক টেবিলে বসে লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করছি এবং তা অব্যাহত থাকবে।
তিনি ইন্টারনেটকে শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে তুলনা করে বলেন, ডাটা যত বেশি সম্প্রসারণ করতে পারবো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তত বেশি সুযোগ সৃষ্টি করতে পারবো। ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের এই অগ্রনায়ক মোস্তাফা জব্বার ইন্টারনেটের সাথে প্রত্যেক শিক্ষাথীর সংযোগ নিশ্চিত করতে তিনি শিক্ষামন্ত্রীর ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার পর তা বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো। গত ১৩ বছরে বাংলাদেশ তা সফলতার সাথে অতিক্রম করে বিশ্বে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বলে উল্লেখ করেন ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার প্রবর্তক মোস্তাফা জব্বার।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব গত ১৩ বছরে টেলিযোগাযোগ খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি তুলে ধরেন। তিনি কলড্রপ সংকট সমাধানে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, যতটুকু ডাটা গ্রাহক ক্রয় করবেন তার পুর্ণাঙ্গ ব্যবহারে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ নিতে হবে।
সভাপতির বক্তৃতায় বিটিআরসি‘র চেয়ারম্যান গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করার বিষয়টিতে বিটিআরসি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। তিনি বিটিআরসি‘র চলমান বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরে বলেন, কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিশ্চিত করতে অংশীজনদের সাথে নিয়ে আমরা কাজ করছি। তিনি বলেন, জিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে বিটিআরসি‘র ওপর অর্পিত দায়িত্বটুকু স্বচ্ছতা এবং দ্রুততার সাথে বাস্তবায়নে বিটিআরসি বদ্ধপরিকর।
বিটিআরসি‘র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. খলিলুর রহমান বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে বিটিআরসি‘র ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র, টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাহাব উদ্দিন, এমটবের সেক্রেটারি জেনারেল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফরহাদ (অবসরপ্রাপ্ত) এবং গ্রামীণফোন, রবি এবং বাংলা লিংকের প্রতিনিধিগণ মোবাইল ফোনের ডেটা প্যাকেজ ব্যবস্থাপনা সহজীকরণে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এবং এ বিষয়ে বিটিআরসি‘র গাইড লাইন অনুযায়ী কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়টি অবহিত করেন। বিটিআরসি‘র মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।