‘দেশ-সমাজের সামগ্রিক উন্নয়ন নির্ভর করে মানুষের কর্মদক্ষতার ওপর’
বাংলাদেশে বৈশ্বিক মানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন নিয়ে বার্তা ২৪ এর প্রতিবেদকের সাথে কথোপকথনে নাসিমা আক্তার নিশা, ই-ক্যাবের (ই-কমার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং উইমেন এ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) এর স্বপ্নদ্রষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা
প্রশ্ন: প্রগতি ও উন্নয়ন নির্ভর করে কর্মদক্ষতার ওপর, যা একমাত্র মানসম্মত উচ্চশিক্ষার মাধ্যমেই সম্ভব। একটি উন্নয়নশীল দেশে উচ্চশিক্ষার বিকাশের জন্য প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। আপনার মতে গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থা এবং আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার পার্থক্যগুলো কী কী?
একটি দেশ, জাতি কিংবা সমাজের সামগ্রিক উন্নয়ন নির্ভর করে এর মানুষের কর্মদক্ষতার ওপর। সঠিক, যুগোপযোগী, মানসম্মত শিক্ষা ও প্রাযোগিক জ্ঞানের মাধ্যমেই এ কর্মদক্ষতা অর্জন সম্ভব। কোন একটি দেশ বা সমাজকে সামনে এগিয়ে যেতে হলে প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থাকে বিদায় জানিয়ে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে গ্রহণ করতে হবে। কারণ, গতানুগতিক ও আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। প্রতিযোগিতামূলক এ বিশ্বে টিকে থাকতে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় একজন শিক্ষার্থীকে গ্লোবাল কম্পিট্যান্সি অর্জনে অনুপ্রাণিত করা হয়। গ্লোবাল কম্পিট্যান্সি হলো এমন জ্ঞান, দক্ষতা ও গুণাবলিকে নির্দেশ করে, যার মাধ্যমে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিষয় জানা, বোঝা বা ব্যবহারের মাধ্যমে একজন মানুষ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করতে পারে। বিশ্বায়নের এ যুগে সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় নিজেকে এগিয়ে রাখতে শুধু আশপাশের এক-দুটি দেশ নয়, সারা বিশ্বের সব দেশ, দেশের মানুষ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই পর্যাপ্ত জ্ঞান রপ্ত করতে হবে, হতে হবে ‘গ্লোবালি কম্পিট্যান্ট’। অন্যদিকে, গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থায় অ্যাকাডেমিক বা পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞানের ওপর বেশি আলোকপাত করা হয়।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা একটি তীব্র রূপান্তরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়ায় প্রথাগত শিক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন এসেছে; আপনার মতে কি কি পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে এই ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়াটিকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিতে। তরুণ উদ্যোক্তা ও করপোরেট জনশক্তি তৈরিতেও কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?
বিশ্বায়নের এ যুগে রূপান্তরিত শিক্ষা ব্যবস্থায় আমাদের শিক্ষা ও শেখার পদ্ধতিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এ পরিবর্তন গতানুগিক শিক্ষা পদ্ধতিকে আরো উন্নত ও ত্বরাণ্বিত করেছে। আমাদের দেশে তরুণ উদ্যোক্তা ও করপোরেট জনশক্তি তৈরি করতে হলে পিপলস স্কিলস বা সফট স্কিলসের ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ সেন্টারের একটি সমীক্ষা বলছে, আমরা আমাদের ক্যারিয়ারে কতটুকু সফল তার ১৫ শতাংশ নির্ভর করে আমাদের টেকনিক্যাল বা বিষয়ভিত্তিক দক্ষতার ওপর আর বাকি ৮৫ শতাংশ নির্ভর করে আমাদের পিপল স্কিলস বা সফট স্কিলসের ওপর। বাংলাদেশে নারী উদ্যোক্তাদের একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু হয় “উই” । সংস্থাটি গড়ে তুলতে, শিক্ষার সুযোগ তৈরি করতে এবং মহিলা উদ্যোক্তাদের তাদের নৈপুণ্যকে ব্যবসায় পরিণত করতে অনুপ্রাণিত করেছি সফট স্কিলসের ওপর ভিত্তি করে । বর্তমানে আমরা বিভিন্ন সফ্ট স্কিলস এর উপর প্রশিক্ষণসহ উদ্যোক্তাদের প্ল্যাটফর্ম প্রদান, জ্ঞান পরিসর বৃদ্ধি ও উদ্যোক্তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছি ।
আমার মতে, শিক্ষা পদ্ধতিতে আধুনিকায়নের সাথে সাথে সফ্ট স্কিলস থাকা উচিত এতে এই সবকিছুর সমন্বয়ে আমরা আরো তরুণ উদ্যোক্তা ও করপোরেট জনশক্তি তৈরি করতে পারবো।
প্রশ্ন: আপনার কি মনে হয় আমাদের বর্তমান শিক্ষা পাঠ্যসূচি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিকাশের জন্য সহায়ক?
আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিকাশে শিক্ষা পাঠ্যসূচিতে যুগোপযোগী বেশ কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পাঠ্যক্রমে এমন কিছু বিষয় সংযুক্ত করতে হবে যেনো শিক্ষার্থীরা নিজের ও অন্য দেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারে, ভিন্ন সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় ঘটাতে পারে এবং টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে সবার সমৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণে আগ্রহী হতে পারে। এছাড়া, নতুনের সঙ্গে নিজেদের সহজে মানিয়ে নেয়ার মানসিকতা তৈরি করার লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শী বিশেষজ্ঞের দ্বারা পরিচালিত কর্মশালায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের দক্ষতারও তারা বিকাশ ঘটাতে পারবে।
প্রশ্ন: বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত শিক্ষাব্যবস্থা কীভাবে শিক্ষার্থীদের বেড়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে?
বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা বিশ্বমানের না হলে গ্লোবাল কম্পিট্যান্সি অর্জন প্রায় অসম্ভব। তবে, এ বিষয়গুলো নিয়ে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে কাজ করছে। একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টিকে তুলে ধরা যাক, কিছুদিন আগে একজন মোনাশ এর সাবেক শিক্ষার্থী আমিদ হোসাইন চৌধুরীর একটি লেখা আমার নজরে পরে যেখানে এক অনন্য প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে জানতে পারি। বিস্তারিত পড়ে জানতে পারলাম মোনাশ কলেজ, অস্ট্রেলিয়ার একমাত্র অংশীদার ইউনিভার্সাল কলেজ বাংলাদেশ (ইউসিবি) দেশে বসেই শিক্ষার্থীদের বিশ্বমানের শিক্ষালাভের সুযোগ করে দিয়েছে। এছাড়া, ইউসিবি বৈশ্বিক পাঠ্যক্রম অনুসরণ করে শিক্ষা প্রদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের গ্লোবাল কম্পিট্যান্সি অর্জনে বিভিন্ন সফট স্কিলের ওপর বিনামূল্যে কর্মশালা আয়োজন করছে। এতে যোগদান করে শিক্ষার্থীরা বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারেন এবং অন্যান্য দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে সহজে ধারণা লাভ করতে পারেন, যা গ্লোবাল কম্পিট্যান্সি অর্জনে অত্যন্ত সহায়ক। গ্লোবাল কম্পিট্যান্সি অর্জনের মাধ্যমে দেশের শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজের ও দেশের পরিচিতি উজ্জ্বল করবে বলে আমি প্রত্যাশা করছি।
প্রশ্ন: বৈশ্বিক পাঠ্যক্রমে উচ্চশিক্ষা কর্মক্ষেত্রে কেমন ভূমিকা রাখে বলে আপনি মনে করেন? আপনার মতে দেশে এরূপ পাঠ্যক্রমে শিক্ষা লাভের সুযোগ শিক্ষর্থীরা কিভাবে পেতে পারে?
বৈশ্বিক পাঠ্যক্রমে উচ্চশিক্ষা কর্মক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশে বসে শিক্ষার্থীরা যাতে এ ধরনের শিক্ষা লাভ করতে পারেন, সে লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাজও করছে। একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি তুলে ধরা যাক, এ দেশের সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থীরা যাতে দেশে বসেই তাদের মোনাশ ডিগ্রি অর্জনের যাত্রা শুরু করতে পারেন, এ ধরনের সুযোগ তৈরিতে প্রতিষ্ঠানটি তাদের জন্য কাজ করছি। ইউসিবি বাংলাদেশে মোনাশ কলেজ অস্ট্রেলিয়ার একমাত্র অংশীদার হিসেবে কাজ করছে। শিক্ষার্থীরা তাদের ও লেভেল/এস লেভেল/এ লেভেল/ এইচ এস সি প্রথম বর্ষ ও লেভেল/এস লেভেল/এ লেভেল/ এইচ এস সি পর পরই ঢাকায় ইউনিভার্সাল কলেজ বাংলাদেশে ফাউন্ডেশন ইয়ার এবং মোনাশ ইউনিভার্সিটি ১ম বর্ষের ডিগ্রি সমমানের প্রোগ্রামে যোগ দিয়ে তাদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের পথে যাত্রা শুরু করতে পারেন। তরুণ ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য এটি সত্যিই একটি চমৎকার সুযোগ। আর এভাবেই তারা দেশে বসে বৈশ্বিক পাঠ্যক্রমের উচ্চ শিক্ষা লাভের সুযোগ পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের জন্য আপনার কিছু পরামর্শ এবং উপদেশ যা তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করতে পারে?
বিশ্বায়নের এ যুগে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে নেতৃত্বের গুণাবলী, যোগাযোগ দক্ষতা, দূরদর্শিতা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতার মতো সফট স্কিল অর্জন করতে হবে। আজকের তরুণ শিক্ষার্থীরাই যেহেতু ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দেবেন, তাই তাদের গ্লোবাল কম্পিট্যান্সি অর্জন করতেই হবে; এর কোন বিকল্প নেই।