তিন দিনের ইন্টারনেট প্যাকেজ বন্ধ, বাড়বে ব্যয়
বন্ধ হয়ে গেল মোবাইল ফোন গ্রাহকদের সবচেয়ে জনপ্রিয় তিন দিনের ডেটা প্যাকেজ।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি) গেল মাসে নতুন এই নির্দেশিকা জারি করে। এই নির্দেশিকা মোবাইল ফোন গ্রাহকদের জন্য প্যাকেজ সংখ্যা সবোচ্চ ৪০টি নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ডেটা প্যাকেজের মেয়াদ ৭ দিন, ৩০ দিন এবং অনলিমিটেড করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
গ্রাহকদের মধ্যে বহুল ব্যবহৃত এই প্যাকেজ বন্ধের পক্ষে-বিপক্ষে নানাবিধ যুক্তি-তর্ক চলছে। একদিকে রয়েছে বিটিআরসি অন্যদিকে মোবাইল ফোন অপারেটর।
সাত দিনের প্যাকেজের দাম তিন দিন মেয়াদি প্যাকেজের চেয়ে বেশি। এতে মানুষের ব্যয় বাড়বে বলে জানিয়েছে অপারেটরগুলো।
বিটিআরসি বলছে, গ্রাহকদের স্বার্থ বিবেচনা করর তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এজন্য তারা একটি জরিপ করেছেন। ১৬৭৫ জন গ্রাহকের ওপর পরিচালিত সেই জরিপে ৬১ দশমিক ৪ শতাংশ গ্রাহক ৪০ থেকে ৫০টি প্যাকেজের পক্ষে মত দিয়েছেন। গত ২৫ মে থেকে ১২ জুন অনলাইনে পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী, মেয়াদ ৭ ও ৩০ তিন এবং আনলিমিটেড করার পক্ষে ছিলেন ৫৪.৬ শতাংশ গ্রাহক। আর ৩, ৭, ১৫, ৩০ ও আনলিমিটেড করার পক্ষে ছিলেন ৪১.৩ শতাংশ গ্রাহক।
এখন প্রশ্ন উঠছে, শুধুমাত্র এই জরিপের ওপর ভিত্তি করে গ্রাহকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় ৩ দিনের এই ডেটা প্যাকেজটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত কতটুকু যৌক্তিক। যখন সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ করার অঙ্গীকার করেছে তার সঙ্গে এই ধরনের সিদ্ধান্ত সাংঘর্ষিক।
রবি আজিয়াটা লিমিটেডর চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে অপারেটর ভেদে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ গ্রাহক ৩ দিন বা তারও কম মেয়াদের ইন্টারনেট প্যাকেজ ব্যবহার করেন। এ অবস্থায় প্যাকেজ সংখ্যা ৪০ এ বেধে দেওয়া হলে তা প্রায় ১২ কোটি গ্রাহকের পছন্দ অনুযায়ী প্যাকেজ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতাকে ক্ষুন্ন করবে। আমরা মনে করি, গ্রাহকের নিজস্ব চাহিদা ও ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে প্যাকেজ সংখ্যা নির্ধারণে কোনো সীমা থাকা উচিৎ নয়। এটি বাজার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্ধারিত হলে গ্রাহকদের জন্য তা সবচেয়ে লাভজনক হবে।
অপারেটরদের প্রধান নির্বাহীরা শুরু থেকেই তিন দিনের ডেটা প্যাকেজ বন্ধের বিরোধীতা করে আসছিলেন। নাম না প্রকাশের শর্তে মোবাইল অপারেটরের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিটিআরসি যখনই কোনো বিষয়ে আমাদের মতামতের জন্য ডাকেন সেখানে তারা আগে থেকে নেওয়া সিদ্ধান্তটিই শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করে থাকেন। তাই আমাদের মতামত কখনোই মূল্যায়িত হয় না।
অন্যদিকে বিটিআরসি বলছে, গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষা করার দায়িত্ব থেকেই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছন, মেয়াদের চক্র ও প্যাকেজের চক্র করা হয়েছে বাড়তি মুনাফার জন্য। মুনাফা কমে যাচ্ছে বলেই মোবাইল ফোন অপারেটরেরা তিন দিনের মেয়াদের ডেটা প্যাকেজ চাইছে। তাছাড়া ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মেয়াদ, অসংখ্য প্যাকেজে গ্রাহকরা বিভ্রান্ত হয়েছেন বলেই নতুন নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে যা গ্রহনযোগ্য।
গত ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে বিটিআরসি দেখেছে যে, দেশে গ্রাহকদের ৬৯.২৩ শতাংশ ৩ দিনের প্যাকেজ, ১৬.৮৪ শতাংশ ৭ দিনের প্যাকেজ, ৩.৮২ শতাংশ ১৫ দিনের প্যাকেজ এবং ১০.১১ শতাংশ ৩০ দিনের প্যাকেজ ব্যবহার করছেন।
তিন দিনের প্যাকেজে যে পরিমাণ ডেটা দেওয়া হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে গ্রাহক নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে তা ব্যবহার করতে পারে না। এতে গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে অপারেটরেরা বলছে, মানুষের পছন্দের সুযোগ যদি কমে তাহলে খরচ বাড়বে আর এতে গ্রাহকরা ডেটা ব্যবহারে অনাগ্রহী হয়ে উঠবেন, যা রাজস্ব আয়ের ওপরেও প্রভাব পড়বে।
মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস বাংলাদেশ (অ্যামটব) তিন দিনের ডেটা প্যাকেজ বাদ দেওয়ার বিষয়ে প্রথম থেকেই বিরোধিতা করে আসছে।