স্মার্টফোন ব্যবহার কমাতে বাটন ফোনে ঝুঁকছে তরুণরা
স্মার্টফোন মানুষের জীবনকে সহজ করে দিয়েছে। তবে, প্রশ্ন দেখা দিয়েছে মোবাইলে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা। এতে হৃদরোগের ঝুঁকিসহ নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এমন অবস্থায় পুরোনো সেই বাটন ফোনের দিকে ঝুঁকছে তরুণ ও বয়স্করা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
বাটন ফোন ব্যবহার করার বিষয়ে কানাডার নাগরিক ১৬ বছর বয়সী লুক মার্টিন বলেন, আমি যখন স্মার্টফোন ব্যবহার শুরু করলাম, তখন দেখলাম আমি সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছি। কারণ আমি মোবাইলে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতাম। বিশেষ করে আমি যখনই ইন্সটাগ্রাম ব্যবহার শুরু করেছি তখনই আমার অবনতি ঘটেছে।
তবে লুক একা নয়, তার মতো এখন বেশিরভাগ তরুণের একই অবস্থা।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করার ফলে মস্তিষ্কে আঘাত করে। যা একটি আসক্তিযুক্ত পদার্থ গ্রহণ করার সময়ও ট্রিগার হয়। এটি তরুণদের মধ্যে ফোনের ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
যুক্তরাজ্যে পাঁচ থেকে সাত বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রায় এক-চতুর্থাংশের হাতে এখন নিজস্ব স্মার্টফোন রয়েছে। যুক্তরাজ্যের অফিস অব কমিউনিকেশনের (অফকম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সোশাল মিডিয়ার ব্যবহার মানসিক স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলছে , বিশেষত শিশুদের ওপর । কিছু ক্যাম্পেইনার চাচ্ছে মোবাইল ব্যবহারের বয়স নির্ধারণ করে দিতে।
অন্যদিকে লুকের মতো অনেকেই বাটন ফোনের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে। লুক বলেন, বাটন ফোন ব্যবহার করার ফলে এখন ২০ মিনিটের বেশি মোবাইল ব্যবহার করা হয় না তার। তার বন্ধুদেরও একি অবস্থা, বলে জানায়।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সন্তানদের পাশাপাশি অভিভাবকরাও বাটন ফোনে উৎসাহী হচ্ছে, তারা আত্মীয় স্বজনদেরও উপহার দিচ্ছে।
লিজি ব্রাটনের পাঁচ বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। তিনি নিজের জন্য একটি নকিয়ার ফ্লিপ ফোন কিনেছেন বলে জানান। বলেন, শুধু নিজের অভ্যাস পরিবর্তনের জন্য নয়, আমার ছেলকে যেন পর্যাপ্ত সময় দিতে পারি তার জন্য।
সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, উত্তর আমেরিকতে বাটন ফোনের বিক্রি বেড়ে গিয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ডাম্বওয়্যারলেসের স্টোর-মালিক ডেইজি ক্রিগবাউম বলে, গ্রাহকরা নিম্ন প্রযুক্তির ডিভাইস খুঁজছেন। অনেক অভিভাবক তাদের বাচ্চার জন্য বাটন ফোন চাইছেন। তারা চান তাদের সন্তানরা যেনো ভার্চুয়াল দুনিয়া থেকে দূরে থাকুক।
মিডিয়া এবং অনলাইন জগতের সঙ্গে শিশুদের সম্পর্কের বার্ষিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মেসেজিং পরিষেবা ব্যবহার করে এমন পাঁচ থেকে সাত বছর বয়সী শিশুদের সংখ্যা ৫৯ থেকে বেড়ে ৬৫ শতাংশ হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী এই বয়সী শিশুর সংখ্যা ৩০ থেকে বেড়ে ৩৮ শতাংশ হয়েছে। লাইভস্ট্রিমের জন্য এ হার ৩৯ থেকে বেড়ে ৫০ শতাংশ হয়েছে। মাত্র ৪০ শতাংশ অনলাইনে গেম খেলে, যা গত বছর ছিল ৩৪ শতাংশ। ১৩ বছরের কম বয়সী অর্ধেকেরও বেশি শিশু সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছে। এটি বেশিরভাগ বড় প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের নীতিমালার লঙ্ঘন।