পুরুষরা কখনো নারীর প্রতিদ্বন্দ্বী নয়

  • তাসকিন আল আনাস,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবিঃ বার্তা২৪.কম

ছবিঃ বার্তা২৪.কম

পুরুষরা কখনো নারীর প্রতিদ্বন্দ্বী নয় নয়, পুরুষরাই নারীর পথকে সহযোগী হিসেবে সহজ করবেন এমন মানসিকতা রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন  বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। তিনি বলেন  কর্মক্ষেত্রে নারী আর পুরুষে ভেদাভেদ করার সুযোগ নেই। জননেত্রী শেখ হাসিনা সর্বক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছেন। দেশ পরিচালনার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও এখন নারীদের হাতে 

শনিবার (৩৫ মে) বিসিএস ইনোভেশন সেন্টারে ‘প্রযুক্তির কর্মক্ষেত্রে নারী’ শীর্ষক মুক্ত সংলাপ এবং প্রকল্প উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন , আজকে যারা সংলাপে এসেছেন, তারা সবাই নিজেদের ক্ষেত্রে রোল মডেল। একজন নারী পথ প্রদর্শককে দেখে অনেক নারীর যাত্রা শুরু হয়েছিল। তেমনি আজকে যারা এসেছেন, তারাও অন্য নারীদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা হবেন। প্রথা ভাঙ্গতে হবে। মেয়েরা পারবে না এমন চিন্তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। 

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মহীবুল হাসান চৌধুরী এম.পি। তিনি বলেন, আজ থেকে ১০ বছর আগেও নারীদের নিয়ে যা ভাবা যেতো না, সেই ভাবনাকেও অতিক্রম করে নারীরা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি উন্নতি সাধন করেছে। বর্তমান সরকার নারীদের কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা এবং সুযোগ সুবিধা দিতে বদ্ধ পরিকর। এরই আলোকে আজ নারীরা দিন রাত কাজ করার উৎসাহ পাচ্ছে। বিমান চালানো থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও নারীদের অংশগ্রহণের হার উল্লেখযোগ্য। আজ আমরা যেসব সমস্যা শণাক্ত করতে পেরেছি, এসব সমস্যা সমাধানে সরকারের পাশাপাশি নারীদেরকেও আগ্রহী হতে হবে। তাহলেই সব বাধা অতিক্রম করা সম্ভব।

মুক্ত সংলাপে বিশেষ অতিথি হিসেবে স্কিল ফল এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক জালাল আহমেদ  এবং জনতা ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও দোহাটেক নিউমিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা লুনা সামসুদ্দোহা উপস্থিত থেকে বক্তব্য প্রদান করেন। কর্মক্ষেত্রে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি মানসিকভাবে নারীদের শক্তি প্রদানের জন্য পরিবারের সহযোগিতা, কর্মক্ষেত্রের পরিবেশকে শিশুবান্ধব করাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে আলোকপাত করেন বক্তারা।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্পটির আওতায় সারাদেশে নারী গ্রাজুয়েটদের অংশগ্রহণে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করবে বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক। মুক্ত সংলাপটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান। বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সঙ্গে যৌথ আয়োজনে মুক্ত সংলাপের সভাপতিত্ব করেন বিসিএস  সভাপতি মো. শাহিদ-উল-মুনীর। তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তিতে নারীদের অংশগ্রহনের হার প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। একটা সময় আইসিটি ব্যবসায় নারীর অংশগ্রহণ ছিল হাতে গোণা। সেই পরিসংখ্যানকে পিছনে ফেলে কম্পিউটার সায়েন্সে অধ্যাপক থেকে শুরু করে এমআইটিতে পড়া নারী শিক্ষার্থীরাও এখন নারীদের অগ্রযাত্রার সহযোগী। বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) আইসিটিতে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান করবে। বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কসহ নারীদের জন্য নেয়া ইতিবাচক সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বিসিএস প্রযুক্তিতে নারীদের অগ্রযাত্রায় পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে. 

মুক্ত সংলাপে প্যানেলিস্ট হিসেবে গ্রীন ডেল্টা ইনসিওরেন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান কার্যনির্বাহী ফারজানা চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারপার্সন ড. লাফিফা জামাল, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. নোভা আহমেদ, এমআইটি-১৬ তামান্না ইসলাম ঊর্মি, গিগাটেক লিমিটেডের প্রধান কার্যনির্বাহী সামিরা জুবেরি এবং গ্রামীণ ফোনের মহাব্যবস্থাপক শায়লা রহমান।

গনিত অলিম্পিয়াডে মেয়েদের সীমিত অংশগ্রহণ এবং তথ্য প্রযুক্তিতে নারী শিক্ষার ভূমিকা সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলচনা হয় এই সংলাপে। এছাড়াও বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন) এর মিসিং ডটার আয়োজনের আওতায় বিগত বছরে দেশের নারী শিক্ষার্থীদের তথ্য প্রযুক্তির সাথে সংযুক্ত করার বিভিন্ন আয়োজনের উপর আলোকপাত করে প্রদর্শিত হয় একটি উপস্থাপনা। তথ্য-প্রযুক্তি খাতে নারীদের অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি কে সামনে রেখে ‘ইনক্রিসিং ওম্যান পার্টিসিপেশন ইন দ্য আইসিটি সেক্টর অব বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে শুরু হচ্ছে ‘এনাবলিং সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস অব বাংলাদেশ ফর ২০৩০-বিডিওএসএন’ শীর্ষক প্রকল্প।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের প্রস্তাবনায় নেদারল্যান্ড ভিত্তিক একটি দাতা সংস্থার অনুমোদনকৃত এই প্রকল্পটি সার্বিক তদারকি করছে ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’। ২০২১ সালের মধ্যে সারা দেশে ৪০০০জন নারী শিক্ষার্থীকে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্প, ক্যারিয়ার টক, আইসিটি উদ্যোক্তা উন্নয়ন সহায়তা, মেন্টরশিপ, ইন্টার্নশিপ, কাজের ক্ষেত্রে সংযুক্তি সহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। এই প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়ন বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশকে অনেকটাই এগিয়ে নেবে বলে মনে করেন প্রকল্পের আয়োজকরা।