৫জি-তে বদলে যাবে দেশের অর্থনীতি

  • ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: প্রতীকী

ছবি: প্রতীকী

বিশ্ব অর্থনীতির তালিকায় বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ৪১তম। তবে অচিরেই বিশ্বের বড় ২৫টি অর্থনীতির দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে বাংলাদেশ। আর এটি ঘটবে আগামী ২০৩২ সালের মধ্যেই।

বলা হচ্ছে, বড় অর্থনীতির দেশ হওয়ার সম্ভাবনা বাংলাদেশের রয়েছে। যে হারে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে তাতে আগামী ১৫ বছর ৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি যোগাযোগ প্রযুক্তি, জ্বালানির অবকাঠামোর দ্রুত উন্নয়ন করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

সেন্টার ফর ইকোনোমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের এক প্রতিবেদনে সম্প্রতি এই তথ্য উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি মূলত জিডিপির আকার বিবেচনায় এনে অর্থনীতির মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে আগামী ২০৩৩ সাল নাগাদ সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভিয়েতনামকে পেছনে ফেলে দেবে।

উপরোল্লিখিত বিষয়ের মধ্যে যোগাযোগ প্রযুক্তির অবকাঠামোর উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যোগাযোগ প্রযুক্তির অবকাঠামো শক্তিশালী করতে দ্রুত গতিসম্পন্ন ইন্টারনেটের বিকল্প নেই। আর দ্রুত গতির ইন্টারনেট সেবা দিতে পঞ্চম প্রজন্মের প্রযুক্তি ৫জি চালু করা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৫জি প্রযুক্তি চালুর পর অর্থনীতিতে এর প্রভাব নিয়ে একাধিক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও বাংলাদেশ নিয়ে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়নি। তবে এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৫জি প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করা গেলে এটি চালুর পর দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এক শতাংশ বেড়ে যাবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের বর্তমান জিডিপি ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।

বিজ্ঞাপন

এক গবেষণায় দেখা গেছে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও ৫জি চালুর ফলে পরবর্তী ১৫ বছরের মধ্যে তাদের অর্থনীতিতে অতিরিক্ত এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার রাজস্ব যুক্ত হবে। ভারতে এ বছরেই ৫জি চালু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

বিশেষ করে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পে বছরে ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে। ৫জি প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার করতে পারলে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন আসবে। বার্কলেস এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫জি প্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাজ্য বছরে অর্থনীতিতে আরো ১৫.৭ বিলিয়ন পাউন্ড রাজস্ব যুক্ত করতে পারবে এবং এটি সম্ভব হবে আগামী ৫ বছরের মধ্যে। মূলত ডিস্ট্রিবিউশন খাতের ৩.৬ বিলিয়ন পাউন্ড, ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে ২ বিলিয়ন পাউন্ড, প্রফেশনাল সার্ভিসেসে ১.১ বিলিয়ন পাউন্ড এবং বিজনেস সার্ভিসেসে ১ বিলিয়ন পাউন্ড রাজস্ব আয় করবে।

৫জি নেটওয়ার্কে শুধু সাধারণ ব্রাউজিং/স্ট্রিমিং বা সামাজিক নেটওয়ার্কিং ডেটা সক্ষমতা বৃদ্ধিই করবে না বরং ডেটা পরিষেবাগুলির বৃহত্তর উপযোগিতার মাধ্যমে শিল্প খাতে নতুন নতুন সেবা ও পরিচালন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাবে।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ৩৪টি দেশে বাণিজ্যিকভাবে ৬১ টি অপারেটর ৫জি সেবা চালু করেছে। তার মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ অপারেটরকেই সেবা দিয়ে যাচ্ছে হুয়াওয়ে। নভেম্বরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ৫জি পেটেন্ট রয়েছে হুয়াওয়ের কাছে।

গত ১৬, ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা ২০২০। সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এই মেলার আয়োজন করে। আগামী বছর সারাদেশে ৫জি প্রযুক্তি চালু করতে যাচ্ছে সরকার। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। ডিজিটাল প্রযুক্তির মহাসড়ক বিনির্মাণের অগ্রগতি, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা এবং পরিবর্তিত বিশ্বে নতুন সভ্যতার রূপান্তরে আইওটি, রোবটিক্স, বিগডাটা, ব্লকচেইন প্রযুক্তির মহাসড়ক ৫জি‘র বিস্ময়কর কার্যক্রম তাক লাগিয়ে দেবে গোটা বিশ্বকে।

মেলায় হুয়াওয়ে, নকিয়া, এরিকসন ও জেডটিই ৫জি ও তার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি প্রদর্শন করেছে। মেলায় শিশুদের প্রোগ্রামিং ও রোবোটিক্স শিক্ষা, টেলিমেডিসিন ও টেলিকম বিভাগের প্রতিষ্ঠানসমূহের সেবা প্রদর্শিত হয়েছে। দেশের সাধারণ মানুষ ৫জি অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পেয়েছে।

মানুষের সচেতনতা তৈরির চমৎকার একটি প্ল্যাটফর্ম ছিল এই মেলা। তবে সচেতনতা তৈরি ও ৫জি অভিজ্ঞতা মেলায় অর্জনের মাধ্যমেই সবকিছু সফলতার সাথে শেষ হচ্ছে না। আগামী বছর ৫জি চালু হলে ব্যবহারিক ক্ষেত্রে যদি এর শতভাগ সুফল না মেলে তাহলে সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে যাবে।

টেলিযোগাযাগ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের বর্তমান স্পেকট্রাম কাঠামো এবং এর মূল্যে পরিবর্তন আনতে হবে। ৪জির মতো স্পেকট্রামের দাম বেশি হলে কোনো উদ্যোগই কাজে আসবে না। কারণ ৫জি এর ক্ষেত্রে মোবাইল অপারেটরদের অনেক বেশি স্পেকট্রামের প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে যদি ৪জি নিলামের মতোই দাম নির্ধারণ করা হয় তাহলে কেউই ৫জি খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে না।

৫জি বাস্তবায়ন পর্যায়ে কোটি কোটি গ্রাহকের কাছে সুফল পৌছাতে স্পেকট্রাম, অপটিক্যাল ফাইবার আর অবকাঠামো উন্নয়নে অপারেটরের বিনিয়োগ সক্ষমতাই বড় হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন এ খাতের বিশেষজ্ঞরা।