ঢাকার চেয়ে জামালপুরে মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশন কম

  • ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

প্রতীকী

প্রতীকী

ঢাকার চেয়ে জামালপুর জেলায় মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশনের (বিকিরণ) মাত্রা কম। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) এক পরিবীক্ষণে এ তথ্য উঠে এসেছে। রেডিয়েশন নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন ও শঙ্কার প্রেক্ষাপটে দেশের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা সম্প্রতি এই পরিবীক্ষণ পরিচালনা করে।

ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, যশোর, জামালপুর, সুন্দরবন, মংলা, ফেনী এলাকায় বিটিআরসির দল ইতিমধ্যেই তাদের জরিপ সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে নিয়ন্ত্রক সংস্থা দেশের আরো কিছু স্থানে জরিপ পরিচালনা করছে।

বিজ্ঞাপন

পরিবীক্ষণে দেখা গেছে, রাজধানীর রমনায় মোবাইল টাওয়ারে ০.১০৬১ মাত্রার রেডিয়েশনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। আর জামালপুর সদরে রেডিয়েশনের মাত্রা পাওয়া গিয়েছে ০.০২৬৮। ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অন নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশন প্রোটেকশন (আইসিএনআইআরপি) এর স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী রেডিয়েশনের স্বাভাবিক মাত্রা টাওয়ার থেকে ৫ মিটারের মধ্যে ২.১০৬। আন্তর্জাতিক এই মাত্রার চেয়ে রাজধানীর রমনায় মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশনের মাত্রা অনেক কম। তবে এর চেয়ে জামালপুরে রেডিয়েশনের মাত্রা পাওয়া গিয়েছে আরো কম।

জরিপে দেখা যায়, বাগেরহাটের সুন্দরবন এলাকায় মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশনের মাত্রা ০.০০১৫, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিটকবর্তী ভবনের ছাদের টাওয়ারে রেডিয়েশনের মাত্রা ০.০৪৪৬, যশোরের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাদে রেডিয়েশনের মাত্রা ০.০৫৩৭। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এর অস্তিত্ব মিলেছে ০.৩০৮ মাত্রার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ০.৫৬, ফেনীতে ০.৪০৩৯ মাত্রা আর রাজশাহীতে ০.১১৭২ মাত্রার রেডিয়েশন পাওয়া গিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বিটিআরসির একজন পদস্থ কর্মকর্তা জানান, তাদের বিশেষ টিম সারাদেশে, বিশেষ করে জনবহুল ও বিভাগীয় শহরে মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশন পরীক্ষা করে স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর কিছু পায়নি।

তিনি বলেন, মোবাইল টাওয়ারগুলোর রেডিয়েশন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আইটিইউ বা আইসিএনআইআরপি (ইন্টারন্যাশনাল নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশন প্রোটেকশন)-এর বেঁধে দেওয়া মানের চেয়ে অনেক নিচে রয়েছে।

বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহফুজুল করিম মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, রেডিয়েশনের কারণে মোবাইল টাওয়ার সরিয়ে নেওয়ার জন্য অপারেটরদের কাছে অনেকেই অনুরোধ করেন। কিন্তু জরিপে দেখা গেছে, দেশের অপারেটরদের টাওয়ারের রেডিয়েশন আইটিইউ বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেওয়া মানের অনেক নিচে আছে।

রেডিয়েশনের কারণে বন্ধ্যাত্ব বাড়ছে বা ডাব গাছে পানি আসে না- এমন শঙ্কা প্রসঙ্গে বিটিআরসি মহাপরিচালক জানান, তিনি সিলেট শহরে একটি টাওয়ারের ওপরে চিলের বাসা দেখেছেন। ওই চিল বছরের পর বছর ধরে সেখানে আছে এবং বংশ বৃদ্ধি করে যাচ্ছে।

রেডিয়েশনের কারণে ক্ষতি হলে চিল বংশ বৃদ্ধি করতে পারতো না জানিয়ে মাহফুজুল করিম মজুমদার বলেন, ওই ভবনেরই ছাদে বাগান করা হয় এবং খুব ভালো মানের সবজি উৎপাদিত হচ্ছে।

মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (এমটব) মহাসচিব, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফরহাদ (অব.) বলেন, মূলত দুই ধরনের রেডিয়েশন হয়—আয়োনাইজড ও নন-আয়োনাইজড। এদের মধ্যে নন-আয়োনাইজড রেডিয়েশন মানবদেহ, প্রাণী বা পরিবেশের কোনো ক্ষতি করে না। মোবাইল টাওয়ারের ক্ষেত্রে নন-আয়োনাইজড রেডিয়েশন প্রযোজ্য। অর্থাৎ এতে ক্ষতিকর কিছু পাওয়া যায়নি।

এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, শুধু অনুমানের ভিত্তিতে ছড়ানো হচ্ছে—মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশন মানুষ বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এটা একেবারেই সত্য নয়। কিছু কিছু মানুষ মনে করছেন ছাদে থাকা টাওয়ারের কারণে তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে এবং কেউ কেউ টাওয়ার সরিয়ে নিতে বলছেন। আমি তাদের আশ্বস্ত করছি, মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশন কোন ক্ষতি করে না। সারা দুনিয়ায় মোবাইলে যে প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয় বাংলাদেশের মোবাইল অপারেটরগুলোও সেই প্রযুক্তিই ব্যবহার করে, বলেন এমটব মহাসচিব এস এস ফরহাদ।