৪ হাজার কোটি টাকার অবৈধ হ্যান্ডসেটের বাজার
অবৈধ পথে আমদানি করা মোবাইল হ্যান্ডসেটের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে দেশীয় উৎপাদনকারীরা। বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইম্পোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) এক হিসাবে জানা যায়, দেশের মোবাইল হ্যান্ডসেটের বাজারের প্রায় ৩৫ ভাগ অবৈধ পথে আমদানি হওয়া ব্যবসার দখলে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।
অবৈধ পথে আসা নিম্নমানের পণ্যে বাজার সয়লাব হয়ে যাওয়ায় বৈধ পণ্যের বিক্রি কমে যাচ্ছে। ফলে মোবাইল হ্যান্ডসেট কারখানার শত শত কোটি টাকার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হুমকির মুখে পড়েছে।
২০১৯-২০ অর্থবছরে স্মার্টফোন আমদানির উপর সরকার টোটাল ট্যাক্স ইনসিডেন্ট বা টিটিআই ৩২% থেকে বাড়িয়ে ৫৭% নির্ধারণ করে। এতে করে মোবাইল হ্যান্ডসেটের দাম বেড়ে যায়। এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণেই বিগত কয়েক বছরের তুলনায় গত বছর থেকে অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেটের বাজার বেড়েছে।
২০১৬ সালে সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে দেশেই মোবাইল হ্যান্ডসেট কারখানা করার জন্য মোবাইল ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দেয়। সরকারের এই পদক্ষেপের ফলে প্রধান মোবাইল ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিজেদের কারখানা গড়ে তোলে। এতে আমদানি নির্ভরতা কমার পাশাপাশি দেশে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে বাড়ে বিদেশি বিনিয়োগ।
ইতিমধ্যে দেশে ৯টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদনের উদ্দেশ্যে কারখানা তৈরি করেছে। আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। দেশের চাহিদার প্রায় ৫০-৬০ ভাগ মোবাইল হ্যান্ডসেট এখন দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে।
অবৈধ পথে আসা মোবাইল হ্যান্ডসেটের কারণে ভোক্তারা নন-ওয়ারেন্টি পণ্য কিনে প্রতারিত হচ্ছেন। ওয়ারেন্টি ছাড়া অবৈধ ও রিফারবিশড পণ্য কেনার ফলে ভোক্তা ফোন নষ্ট হওয়ার পরে অথরাইজড সার্ভিস পাচ্ছে না। এতে করে নষ্ট ফোনের ত্রুটি সারাতে গুনতে হচ্ছে অনেক টাকা। এতে কাস্টমারের বিপুল সময় নষ্ট হচ্ছে উপরন্তু ফোনটি ঠিক হবে কিনা সেটার নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা, প্রশাসন এবং র্যাবের যৌথ অভিযানে মাঝে মাঝে বিপুল পরিমাণ অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেট জব্দ করলেও মূল হোতারা ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। যে কারণে এ ধরনের অভিযানেও বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ হ্যান্ডসেটের ব্যবসা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে উৎপাদিত মোবাইল হ্যান্ডসেটের মান এবং চীনে তৈরি মোবাইল হ্যান্ডসেটের গুনগতমান সমপর্যায়ের। দেশে উৎপাদিত মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে অভিযোগও কম।
বিটিআরসি ও বিএমপিআইএ এর যৌথ উদ্যোগে শুরু হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি নাম্বার ডাটাবেইজ বা সহজ কথায় মোবাইল ফোন রেজিস্ট্রেশন। বৈধ পথে আসা ও দেশে তৈরি হওয়া সব মোবাইল ফোন এখন এই ডাটাবেইজে রেজিস্ট্রিকৃত।
ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার বা এনইআইআর প্রযুক্তিটির মাধ্যমে বাজারে থাকা আসল বা নকল মোবাইল হ্যান্ডসেট পরীক্ষা সহজেই করা যাবে। এরই মধ্যে এ প্রযুক্তির প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংগ্রহ ও পরিচালনার জন্য বিটিআরসি দরপত্র আহবান করেছে। এনইআইআর স্থাপনের কাজ শেষ হলে বিটিআরসি অবৈধ পথে আসা নকল ও অবৈধ হ্যান্ডসেট তাৎক্ষনিকভাবে বন্ধের ব্যবস্থা করতে পারবে।