গ্রামীণফোনের ১০০ কোটি টাকার চেক ফিরিয়ে দিলো বিটিআরসি

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

পাওনা পরিশোধের জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) ১০০ কোটি টাকার চেক দিতে গিয়েছিলো গ্রামীণফোন। তবে চেক গ্রহণ না করে ফিরিয়ে দিয়েছে সংস্থাটি।

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকালে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ চেক নিয়ে বিটিআরসি’র কার্যালয়ে যায়। পরে বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানায় কোম্পানিটি।

বিজ্ঞাপন

এ সময় গ্রামীণফোনের পরিচালক ও হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত জানান, আমরা পে-অর্ডার নিয়ে গেলে বিটিআরসি নিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এখনকার পরিস্থিতিতে বিটিআরসি টাকা নিতে পারে না বলে আমাদের জানানো হয়।

গ্রামীণফোন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে তাদের অডিটকৃত দাবির প্রেক্ষিতে প্রথম দফায় কত টাকা দেবে তার ভাগ্য নির্ধারণ হওয়ার কথা রয়েছে বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি)। তার একদিন আগেই পাওনা পরিশোধ করতে ১০০ কোটি টাকার চেক নিয়ে বিটিআরসিতে গেল গ্রামীণফোন। তবে সেই চেক বিটিআরসি গ্রহণ করেনি। 

বিজ্ঞাপন

এদিকে আপিল বিভাগ গত বছরের ২৪ নভেম্বর আদেশ দিয়েছে ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দুই হাজার কোটি টাকা দিতে হবে। আর ২৬ জানুয়ারি গ্রামীণফোন আদেশের বিপরীতে রিভিউ আবেদন করে ৫৭৫ কোটি টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করে।

এদিকে ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে যদি গ্রামীণফোন বিটিআরসিকে টাকা পরিশোধ না করে তাহলে বিটিআরসি আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারবে বলে আপিল বিভাগের রায়ে উল্লেখ রয়েছে। সে অনুসারে প্রশাসক বসানোর প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বিটিআরসি।

এই প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবারের রিভিউ আবেদনের শুনানিকেই ধরা হচ্ছে অডিট বিষয়ে গ্রামীণফোনের ভাগ্য নির্ধারণের দিন।

আপিল বিভাগের রায়ের বিপরীতে গ্রামীণফোন যে আবেদন করেছে সেখানে ৫৭৫ কোটি টাকা এক বছরে সমান বারোটি কিস্তিতে পরিশোধ করার প্রস্তাব করেছে অপারেটরটি।

দুই পক্ষে আইনজীবীরা বলছেন, বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের পূর্ণ বেঞ্চে শুনানির অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, যেখানে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মহমুদুল হোসাইনসহ আপিল বিভাগের বিজ্ঞ বিচারপতিরা উপস্থিত থেকে আগে দেওয়া তাদের রায়ের বিষয়ে গ্রামীণফোনের রিভিউ প্রস্তাব শুনবেন।

এর আগে ১৯৯৭ সালে গ্রামীণফোনের জন্ম থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে হিসেব নিয়ে বিটিআরসির করা অডিটে মোট ১২ হাজার ৫৮৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পাওনা হিসেবে দাবি করা হয়। যার মধ্যে বিটিআরসির অংশ ৮ হাজার ৪৯৪ কোটি আর এনবিআরের অংশ ৪ হাজার ৮৬ কোটি টাকা।

বিটিআরসির পাওনা দাবির ৮ হাজার ৪৯৪ কোটির টাকার মধ্যে মূল দাবি ২ হাজার ২৯৯ কোটি টাকার ওপর। আর বাকি ৬ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা হিসেব করা হয়েছে ১৫ শতাংশ বিলম্ব ফি ধরে, যেটি মূল টাকার ওপর চক্রবৃদ্ধি হারে হিসেব করা হয়েছে।

গত ২৬ জানুয়ারি বিটিআরসি আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আপিল করে। সেখানে বিটিআরসি’র দাবিকৃত মূল টাকার ২৫ শতাংশ হিসেবে ৫৭৫ কোটি টাকা জমা দেয়ার আবেদন করে।

রিভিউ পিটিশান দাখিল করার দিনে বিষয়টি সম্পর্কে গ্রামীণফোনের হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত সাংবাদিকদের জানান, উচ্চ আদালতে নির্দেশনায় দুই হাজার কোটি টাকা দেওয়ার নির্দেশনায় অংকটি তাদের কাছে অনেক বেশি মনে হয়েছে, যেটি মূল দাবির ৮৭ শতাংশ। আর সে কারণেই বিষয়টি তারা পুনঃবিবেচনার জন্যে আবেদন করেছে বলেও জানান তিনি।

গত বছরের ২৪ নভেম্বর আপিল বিভাগ গ্রামীণফোনকে দুই হাজার কোটি টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশনা দিলেও তারা এর সার্টিফাইড কপি পায় ২৯ ডিসেম্বর। আর নিয়ামানুযায়ী এক মাসের মধ্যে রিভিউ আপিল দাখিল করেন তারা।

এর আগে পাওনা দাবি আদায়ে গত বছরের ২২ জুলাই অপারেটরটিকে সকল রকমের অনুমোদন দেওয়া বন্ধ করে দেয় বিটিআরসি, যেটি এখনো বিদ্যমান আছে।

এর আগে রবি’র কাছে বিটিআরসি’র ৮৬২ কোটি টাকা অডিট দাবির প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট তাদেরকে প্রতি মাসে ২৭ কোটি টাকা করে পাঁচ মাসে ১৩৭ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশনা দেন। সে অনুসারে প্রথম কিস্তি তারা পরিশোধও করেছে।

ফলে তাদের সকল অনুমোদনও গ্রামীনফোনের সঙ্গে বন্ধ করা হলেও সেটি পরে তুলে নেওয়া হয়।

এর আগে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে দুই অপারেটরের ব্যন্ডউইথ কমিয়ে দেওয়া হলেও সেটি আবার তুলে নেয় বিটিআরসি।

আরও পড়ুন: জিপি’র অডিট: রিভিউ শুনানিতে ভাগ্য নির্ধারণ বৃহস্পতিবার