রবি-জিপি দ্বন্দ্ব চরমে, নতুন ঠেলাঠেলি স্পেকট্রাম নিয়ে
দেশের প্রধান দুই মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবি’র মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছে। আগে থেকেই ব্যবসায়িক কারণে দেশের শীর্ষ এবং দ্বিতীয় শীর্ষ অপারেটরের মধ্যে নানা বিষয়ে ঠেলাঠেলি থাকলেও এবারকার বিষয়টি অন্য পর্যায়ে চলে গেছে।
দ্বন্দ্বের এ পর্যায়ে রবি অবশ্য পাশে পাচ্ছে বাংলালিংক এবং টেলিটককে। অন্যদিকে শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন একাই লড়াই করার হুংকার দিচ্ছে।
দুই পক্ষ মুখোমুখি হয়ে লড়াইয়ে না নামলেও যারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন, তারা ভালোই বুঝতে পারছেন বিষয়টি।
মোবাইল ফোন অপারেটর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন করে দ্বন্দ্বের শুরু হয়েছে করোনা পরিস্থিতিতে সরকারকে সহায়তা করতে রবি’র এগিয়ে আসাকে কেন্দ্র করে।
করোনাকালে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স এবং বিগডেটা এনালাইসিস করে কীভাবে করোনা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা নিরূপণ করা যায়, সে বিষয়ে সরকারকে বিশেষ সহায়তা দিচ্ছে রবি।
কিন্তু বিষয়টিকে মোটেই সহজভাবে নিতে পারেনি গ্রামীণফোন। সেই দফায় গ্রামীণফোন বাংলালিংককে পাশে টানার চেষ্টা করলেও লাভ হয়নি।
বরং গ্রামীণফোন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীকে দিয়ে একটি হ্যাকাথনের আয়োজন করাতে মাঠে নেমে পড়ে বলে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
এর মধ্যে করোনার কারণে যখন স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত বন্ধ হয়ে গেল; মানুষ ঘরবন্দী হয়ে পড়ায় ইন্টারনেট ডেটার ব্যবহার হু হু করে বাড়তে শুরু করল, তখন রবি চাইছিল বহুকাল পড়ে থাকা স্পেকট্রামের খানিকাও যদি মোবাইল অপারেটররা অল্প সময়ের জন্যে পায়, সেটি দিয়ে ভালো ইন্টারনেট সেবা দেওয়া যাবে। এ ইস্যুতে আবার গ্রামীণফোন বিপক্ষে অবস্থান নিল। কিন্তু রবি পাশে পেয়ে গেল বাকি দুই অপারেটরকে।
বিষয়টি নিয়ে তারা অ্যামটবে (অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ) তর্ক-বিতর্কও করেছেন। রবি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহতাব উদ্দিন আহমেদ এখন অ্যামটবের সভাপতি হয়েও গ্রামীণফোনের বিরোধীতার কারণে স্পেকট্রাম চাওয়ার বিষয়টি পাস করতে পারেননি।
পরে রবি, বাংলালিংক এবং টেলিটক মিলে যৌথ চিঠি দিয়ে সরকারের কাছে তিন মাসের জন্যে স্পেকট্রাম চেয়েছে। কিন্তু গ্রামীণফোন তাদের সঙ্গে তো থাকেইনি বরং এখন এ আবেদনের বিরোধিতা করছে। বিরোধিতা এমন পর্যায়ে গেছে যে এ তিন অপারেটর যাতে স্পেকট্রাম না পায়, সেটি ঠেকাতে তারা উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেও এ বিষয়ে নানা কথা বলছে বলে জানা গেছে।
এর আগে রবি এবং এয়ারটেল যখন একীভূত হয়ে নিজেদের শক্ত অবস্থান জানান দিল, তখন থেকেই আসলে রবি এবং গ্রামীণফোনের দ্বন্দ্ব নতুন মাত্রা পেতে থাকে। তবে দুই অপারেটরই যখন অডিট সংক্রান্ত ঝামেলায় পড়েছিল, তখন কিছু দিনের জন্য দ্বন্দ্ব কিছুটা স্তিমিত হয়ে থাকলেও এখন আবার তা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে।
তবে অডিট সংক্রান্ত বিষয়ের মধ্যেও মোবাইল নম্বর পোর্টাবিলিটি (এমএনপি) প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রাহকরা আগের নম্বরসহই রবিতে ছুটতে থাকে, তখনও গ্রামীণফোন নানা রকম নিত্যনতুন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে গোটা এমএনপিকেই জটিল করে ফেলে। ফলে বাংলাদেশে এমএনপি এক রকম ব্যর্থ হতে যাচ্ছে বলেও মনে করছেন বিটিআরসি সংশ্লিষ্টরা।