ফের সিম ট্যাক্স তুলে নেওয়ার অনুরোধ অপারেটরদের
মোবাইল ফোনের উপর বিদ্যমান ২০০ টাকার ট্যাক্স তুলে নেওয়াসহ গোটা সেক্টরের শুল্ক কাঠামো ঢেলে সাজাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে অনুরোধ করেছে মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন (অ্যামটব)।
অপারেটররা বলছেন, যথাযথভাবে করনীতি সংস্কার করা হলে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) মোবাইল শিল্পের বর্তমান অবদান ৭ শতাংশ থেকে আগামীতে আরও বাড়ানো সম্ভব হবে বলে বৃহস্পতিবার (৭ মে) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেছে অ্যামটব।
চলতি সপ্তাহে আসন্ন জাতীয় বাজেটে কয়েকটি খাতে সংস্কারের জন্য একটি প্রস্তাবনা পাঠায় সংগঠনটি। যেখানে তারা বলছেন, বাংলাদেশের করকাঠামোই তাদের জন্যে সবচেয়ে বড় বাধা।
অপারেটররা বলছেন, বর্তমানে সিমের জন্য ২০০ টাকা হারে কর রয়েছে যেটি তুলে নেওয়া দরকার। এটি নিম্ন আয়ের মানুষদের টেলিকম সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের বিবেচনায় অন্যদুটি প্রধান বাধা হল- মাত্রাতিরিক্ত করপোরেট ট্যাক্স এবং ন্যূনতম টার্নওভার ট্যাক্স।
বর্তমানে দেশের মোবাইল খাতের জন্যে ৪৫ শতাংশ কর্পোরেট ট্যাক্স রয়েছে। ভারতে এটি ২২ শতাংশ, পাকিস্তান ও নেপালে ৩০ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ২৮ শতাংশ, এবং আফগানিস্তানে ২০ শতাংশ। এছাড়া দেশের অন্যান্য খাতের কোম্পানিগুলোর জন্যে যেখানে করপোরেট ট্যাক্স ৩০ শতাংশ সেখানে মোবাইল ফোন অপারেটরদের জন্যে এটি ৪৫ শতাংশ অত্যন্ত বেশি বলে মনে করেন তারা।
অ্যামটব বলছে, গত বাজেট থেকে ন্যূনতম টার্নওভার ট্যাক্স প্রবর্তন করা হয়েছে যেটি আয়করের নীতি বিরুদ্ধ।
মোবাইল অপারেটর লোকসান করলে বা মুনাফা মোট আয়ের ২ শতাংশের চেয়ে কম হলে তাদেরকে ২ শতাংশ হারে টার্নওভার ট্যাক্স দিতে হয়। এই শিল্প টিকিয়ে রাখতে ন্যূনতম টার্নওভার কর অপসারণের জন্য অনুরোধ করছে অ্যামটব।
তাদের প্রস্তাবনার বিষয়ে অ্যামটব সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে পুরো দেশ এক নজিরবিহীন সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে; মোবাইল শিল্প খাতও এর বাইরে নয়। এই পরিস্থিতিতে মোবাইল শিল্প সকল ধরনের যোগাযোগ, ব্যবসা, বিনোদন ইত্যাদির মেরুদণ্ডে পরিণত হয়েছে।
“আমরা অন্যান্য সময়ের মতো এই কঠিন সময়েও যথাযথভাবে সেবা দান করে যাচ্ছি। তবে যেহেতু এই খাতটি ইতিমধ্যেই করসহ নানা ধরনের সমস্যায় ভুগছে, তাই এখনই সময় এসব দূর করে এই খাতকে উত্সাহিত করা যেন ভবিষ্যতে আমরা জাতিকে আরও বেশি সেবা দিতে পারি,” বলেন মাহতাব।
এর বাইরে অ্যামটব নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে দ্বৈত ট্যাক্স পরিহার করার জন্যে অনুরোধ করেছে। তারা বলছেন, এমনিতেই মোবাইল অপারেটরদের মোট আয়ের ৫ দশমিক ৫ শতাংশ রাজস্বের অংশ হিসাবে এবং ১ শতাংশ সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলে বিটিআরসিকে প্রদান করে।
প্রাথমিক পর্যায়ে, রাজস্বের জন্য ভ্যাট প্রদান করা হয় যার অংশ বিটিআরসিকে দেওয়া হয়। বিটিআরসিকে দেওয়া একই রাজস্বের জন্য যখন আবার ভ্যাট প্রদান করা হয় তখন তা দ্বৈত কর হয়ে যায়। অ্যামটব রাজস্বের হার প্রদানের ক্ষেত্রে দ্বৈত কর পরিহারের প্রস্তাব করেছে।
সংগঠনটির মহাসচিব এস এম ফরহাদ বলেন, ‘বিগত সময়ে মোবাইল সেবাদাতাদের লাইসেন্স নানাভাবে বিভাজন করে তাদের ব্যবসা সংকুচিত করা হয়েছে। অপারেটরদের ব্যবসার সঙ্কোচন সরকারের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির সুযোগকেও সীমিত করেছে ‘
ফরহাদ বলেন, ‘করোনাভাইরাস এর পরিণতি কী হবে তা এখনও অনুমান করা কঠিন, তবে রেগুলেটরি, কর এবং ভ্যাট সম্পর্কিত সমস্যাগুলি অবিলম্বে সমাধান করা না গেলে খুব শীঘ্রই মোবাইল সেবা বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে অপারেটরদের রাজস্ব আয়ে ইতিমধ্যেই নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আমরা সরকারকে আমাদের প্রস্তাবগুলি বিবেচনা করার জন্য আন্তরিকভাবে অনুরোধ করছি যেন এই শিল্প তার পূর্ণ সক্ষমতা দিয়ে দেশকে সহায়তা করতে পারে ও জিডিপিতে আরও বেশি অবদান রাখতে পারে।’