সিলেট-মাস্কাট রুটে সরাসরি ফ্লাইট চালু করছে বেসরকারি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। এ রুটে সপ্তাহে ২টি ফ্লাইট পরিচালনা করবে এয়ারলাইন্সটি।
যাত্রা শুরু করার পূর্বে সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক জনাব হাফিজ আহমেদ ফিতা কেটে প্রথম সিলেট-মাস্কাট ফ্লাইটের উদ্বোধন করা হয়।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উদ্বোধনী ফ্লাইটটি ছেড়ে যাবে মাস্কাটের উদ্দেশে। ওমানের স্থানীয় সময় রাত ১০টা ৩০ মিনিটে মাস্কাটে অবতরণ করবে ফ্লাইটটি।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, সপ্তাহের প্রতি মঙ্গল ও শুক্রবার রাত ৭টা ৩০মিনিটে সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে উড্ডয়ন করবে ও স্থানীয় সময় রাত ১০টা ৩০ মিনিটে মাস্কাটে অবতরণ করবে। প্রতি মঙ্গল ও শুক্রবার মাস্কাট থেকে স্থানীয় সময় রাত ১১ টা ৩০ মিনিটে উড্ডয়ন করে পরদিন সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে সিলেটে অবতরণ করবে।
বিজ্ঞাপন
সিলেট ছাড়াও ইউএস-বাংলা ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করে আসছে। এই প্রথম বারের মতো সিলেট থেকে আন্তর্জাতিক রুটে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করতে যাচ্ছে এয়ারলাইন্সটি।
বর্তমানে মাস্কাট ছাড়াও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স আন্তর্জাতিক রুট গুয়াংজু, সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুর, দোহা, কলকাতা ও চেন্নাই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। বর্তমানে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, যশোর, সৈয়দপুর, রাজশাহী, বরিশাল রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট আটাবের সিলেট জোনের চেয়ারম্যান জনাব মোতাহার হোসেন, সেক্রেটারী জনাব গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, হাব এর সিলেট জোনের সেক্রেটারী জনাব জহিরুল কবির চৌধুরী শিরু, সিলেট এফবিসিসিআই এর পরিচালক জনাব খন্দকার শিপার আহমেদ ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স এর কর্মকর্তাবৃন্দ।
বিশ্বের দীর্ঘতম অবিচ্ছেদ্য সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। কক্সবাজারকে বলা হয় পর্যটন রাজধানী। এ জেলায় ঘুরতে আসলেই কলাতলী, সুগন্ধ্যা, লাবণী, হিমছড়ি, ইনানী ও পাটুয়ারটেকে ঘুরতে যান সবাই। কিন্তু এর বাইরেও দীর্ঘ ৮০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভের কোনায় কোনায় লুকিয়ে রয়েছে সৌন্দর্য। মেরিন ড্রাইভের এমন ৫টি অপরিচিত জায়গা নিয়ে এই রিপোর্টে আলোচনা করা হল-
১. ভাঙ্গার মোড়
কক্সবাজার শহরের কলাতলী থেকে মেরিন ড্রাইভ সড়কে উঠতেই যে মোড় সেটার নাম ভাঙ্গার মোড়। অনেকেই আবার চিনেন মেম্বার ঘাটা নামে। এই সমুদ্র সৈকতে থাকে না তেমন বেশি পর্যটকের ভিড়। তাই মেরিন ড্রাইভ যেতে এই জায়গাতে ঘুরে যেতে ভুলবেন না।
২. দরিয়ানগর
দরিয়ানগর। ভাঙ্গার মোড় থেকে কিছুদূর গেলেই এই পয়েন্টের অবস্থান। দরিয়ানগর ব্রিজ থেকেই দেখা যায় সমুদ্রের অপররূপ সৌন্দর্য। অপর পাশে দেখা যায় সুউচ্চ পাহাড়। এই সৈকতে রয়েছে প্যারাসেলিং করার সুযোগ। এছাড়া দরিয়ানগরে রয়েছে একটি পার্ক। পার্কটিতে প্রবেশ করতে হয় হাঙ্গের ভাস্কর্যের ভেতর দিয়ে। এই পার্কে রয়েছে একটি গুহাও। এছাড়া পাহাড়ের উপর থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
৩. প্যাচারদ্বীপের কাঁকড়া বিচ
হিমছড়ির পরে রামু উপজেলায় প্যাচারদ্বীপের অবস্থান। হিমছড়ি থেকে কিছুদূর গেলেই মাঝখানে প্যাচারদ্বীপ কাঁকড়া বিচের অবস্থান। এই বিচে যাওয়ার জন্য রয়েছে একটি বাঁশ-গাছের তৈরি কাঁকড়া ব্রিজ। বিচে প্রবেশপথে দুপাশে ঝাউবন। আপনার মনে হবে যেন মিনি সুইজারল্যান্ড। এই সৈকতেও প্যারাসেলিং করার সুযোগ রয়েছে।
৪. সোনারপাড়া বিচ
রেজুখাল ব্রীজের পরেই সোনারপাড়া বিচের অবস্থান। এই বিচে ঝাউগাছ বাড়িয়েছে বাড়তি সৌন্দর্য। এই বিচে গেলেই দেখা মিলবে ভাইরাল মোবাইল ফটোগ্রাফার কাজলের দেখা। যেখানে খাওয়া যাবে ফ্রেশ ডাব। এছাড়া রয়েছে হ্যামকে চড়ার সুযোগ।
৫. টেকনাফ সাগরপাড়ের প্রাচীন মসজিদ
মেরিন ড্রাইভ হয়ে যেতে যেতে যেতে দেখা মিলবে প্রাচীন একটি মসজিদের। মসজিদটির অবস্থান টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের মাথাভাঙ্গা এলাকায়। মসজিদটি এক গম্বুজবিশিষ্ট। এর দেয়াল ঘেঁষে একটি বড় মিম্বার রয়েছে। মসজিদটিতে একটি মেহরাব রয়েছে এবং দেয়ালে ছোট ছোট কয়েকটি খোপ রয়েছে। এটি পোড়া ইট, বালু, চুণ এবং সুরকি দিয়ে নির্মিত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি দর্শনীয় স্থান যা সম্পর্কে সবার অজানা।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান বলেছেন, পর্যটন শিল্পে দক্ষ জনবল তৈরি করার জন্য ভবিষ্যতে বাংলাদেশে একটি ট্যুরিজম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার পরিকল্পনা আমাদের আছে।
আমরা আশা করি, আমাদের এই উদ্যোগকে সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পর্যটনের সব অংশীজন আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসবেন।
তিনি আরো বলেন, ট্রাভেল এজেন্টরা কানেক্টিভিটি বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
রোববার (১৪ জুলাই) ‘অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ’-এর ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউশনের প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে সনদ বিতরণ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পর্যটনমন্ত্রী এ সব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমান কানেক্টিভিটির এই পৃথিবীতে ট্রাভেল এজেন্টদের কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে তারা মানুষের যোগাযোগ করিয়ে দেয়।
সুতরাং ট্রাভেল এজেন্টদের সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কোনো গ্রাহক যাতে প্রতারিত না হন, বিদেশে যেতে কোনো সমস্যায় না পড়েন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শুধু নিজেরা সৎ থাকলেই হবে না, অন্য কোনো ট্রাভেল এজেন্টও যাতে গ্রাহকদের কোনো প্রকার হয়রানি না করতে পারেন, সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে সবার।
মন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার জনগণের সরকার। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো, জনগণের সেবা নিশ্চিত করা। জনগণের সেবার কাজে ট্রাভেল এজেন্টরা আমাদের সহযোগিতা করছেন, সমর্থন করছেন। আপনারা আপনাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবেন। সরকার আপনাদেরকে সর্বতোভাবে পলিসি সাপোর্ট (নীতিগত সমর্থন) প্রদান করবে।
ফারুক খান বলেন, পর্যটনখাতে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা তৈরির পাশাপাশি প্রশিক্ষণার্থীদের ভাষাগত দক্ষতা তৈরির দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। তাদের এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে তারা পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় কাজ করার জন্য উপযুক্ত হিসেবে গড়ে ওঠে। পর্যটন শিল্পে দক্ষ জনবল তৈরি করার জন্য ভবিষ্যতে বাংলাদেশে একটি ট্যুরিজম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার পরিকল্পনাও আমাদের আছে।
আমরা আশা করি, আমাদের এই উদ্যোগকে সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পর্যটনের সব অংশীজন আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসবেন।
মন্ত্রী বলেন, অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সিগুলোকে নিয়ে প্রায়ই নানা অনিয়ম ও অভিযোগের কথা শোনা যায়। সবাইকেই নিয়ম মেনে কাজ করতে হবে। অন্যথায় নিয়ম ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অনুষ্ঠানে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের মহাসচিব আসফিয়া জান্নাত সালেহ-এর সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক, আটাব-এর প্রেসিডেন্ট আবদুস সালাম আরেফ প্রমুখ।
সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের লীলাভূমি পর্যটন নগরী কুয়াকাটায় ছোট বড় মিলিয়ে ১৮-২০টি পেশার ব্যবসায়ী রয়েছেন, যারা পর্যটন শিল্পের ওপর নির্ভরশীল।
দীর্ঘ এক মাস রমজান উপলক্ষে পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। আর এতে করে অর্থনৈতিক মন্দায় পড়তে হয়েছে কুয়াকাটার পর্যটকনির্ভর ব্যবসায়ীদের। রমজানের পর এই মন্দা এবার কাটতে শুরু করেছে। এবারের ঈদ ও বাংলা নববর্ষের দীর্ঘ ছুটিতে অর্থনৈতিক লোকসান কাটিয়ে লাভের মুখে কুয়াকাটার পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
গত কয়েক দিনের মতো মঙ্গলবারও (১৬ এপ্রিল) দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন জায়গায় পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সৈকতের চায়ের দোকানি থেকে শুরু করে হোটেল-মোটেলসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর মধ্যে ছিল ব্যস্ততার ছাপ। দম ফেলানোর সময় নেই কারোরই। যে যার মতোন করে পর্যটকদের সেবায় সময় কাটাতে দেখা গেছে।
স্থানীয় শুঁটকি মাছ ব্যবসায়ী মো. রাসেল মৃধা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ঈদের আগে আমার দোকানে প্রায় ১০ লাখ টাকার মাছ উঠাইছি। রমজানে বেচাকেনা না হওয়ার কারণে কিছুটা চিন্তিত ছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ, ঈদের দিন থেকে এই পাঁচ, ছয় দিনে আমার ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি হয়েছে! মহাজন কিছু টাকা পেতো দিয়া দিছি। এখন আমি চিন্তামুক্ত’!
এ রকমই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রাসেল মৃধার পাশাপাশি ঝিনুক দোকানদার মো. শাহিন, আচারের মো. মহিবুল্লাহ, ফ্রাইয়ের মোহাম্মদ তৈয়ব আলিসহ সৈকতের ফটোগ্রাফার মোহাম্মদ শাওন দীর্ঘ ১ মাস পর লাভের মুখ দেখতে পারায় খুশি। আনন্দিত কুয়াকাটার ব্যবসায়ীরা।
সৈকতের ফটোগ্রাফার মো. শাওন আলী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমি সৈকতের ছবি তুলে জীবিকা নির্বাহ করি। একমাস আয় বাণিজ্য বন্ধ ছিল। বাচ্চাদের জন্য ঈদের কেনাকাটা তেমন করতে পারিনি। যেটুকু কিনছিলাম, অর্ধেক টাকা বাকি রেখে আসছি। আলহামদুলিল্লাহ, ঈদের দিন থেকে এখন পর্যন্ত আমি প্রায় ৯ হাজার টাকা ইনকাম করেছি। দোকানে কিছু টাকা পেতো, পরিশোধ করেছি। এখনো কয়েকজন লোক আছেন। এখন যা ইনকাম করবো, তার থেকে কিছু সঞ্চয় করতে পারবো, ইনশাল্লাহ’!
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ব্যস্ত সময় পার করছেন আবাসিক হোটেল এবং খাবার হোটেলের কর্মচারীরা। শতভাগ বুকিং ছিল কুয়াকাটার ১ম শ্রেণির হোটেলগুলোতে এবং ২য় শ্রেণির হোটেলগুলোতেও ৬০ থেকে ৭০ পার্সেন্ট বুকিং ছিল।
আবাসিক হোটেল খান প্যালেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খান রাসেল বার্তা২৪.কে বলেন, রমজান মাস জুড়ে হোটেল খালি ছিল। রমজানে স্টাফ বেতন ও বিদ্যুৎ বিলসহ লাখ লাখ টাকা লোকসান। তবে ঈদের পরদিন থেকেই পর্যটকের সংখ্যা ছিল অনেক। ঈদের ছুটিতে আমাদের শত ভাগ রুম বুকিং হয়েছে। এ সপ্তাহের পুরোটাই শতভাগ বুকড।
হোটেল কানসাই ইনের ম্যানেজার মো. জুয়েল ফরাজী বলেন, ‘আমার হোটেলে সিঙ্গেল, ডাবল মিলিয়ে প্রায় ২০টি রুম রয়েছে। আমি ঈদের এই চার পাঁচদিনে গড়ে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ হাজার করে প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা মালিক পক্ষকে দিয়েছি। এটা আমাদের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সাহায্য করবে’।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা’র (টোয়াক) সাধারণ সম্পাদক কে এম জহিরুল ইসলাম বলেন, পর্যটকদের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো। পর্যটননির্ভর ব্যবসায়ীদের বিক্রি বেড়েছে। সবাই এখন লাভের মুখে।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মোতালেব শরীফ বলেন, ‘প্রতিটি হোটেল- মোটেলের প্রায় ৮০ শতাংশ রুম বুকিং ছিল। রমজানের ঘাটতি শত ভাগ পুষিয়ে উঠতে না পারলেও আমরা শতকরা ৭০ ভাগ সমস্যা কাটিয়ে উঠছি। এখনো পর্যটকেরা ফোনে রুম বুকিং দিচ্ছেন। আশা করি, এ সপ্তাহেই দীর্ঘ এক মাস রমজানের সময়টাতে যে লোকসান ছিল, সেটা শত ভাগ কাটিয়ে উঠতে পারবে আমাদের হোটেল-মোটেলগুলো’।
পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ, থানা পুলিশ, নৌপুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের পুলিশ সুপার মো. আনসার উদ্দিন বলেন, ‘কুয়াকাটাতে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে আসা পর্যটকরা যাতে কোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখীন না হন, সে ব্যাপারে আমরা সর্বদা সতর্ক অবস্থায় ছিলাম। যে সব পর্যটক কুয়াকাটাতে এসেছেন, তাদের জন্য নিশ্চ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এখানে পোশাকে এবং সাদা পোশাকেও আমাদের লোকজন দায়িত্ব পালন করছেন। কুয়াকাটার সি-বিচকে (সমুদ্র সৈকত) সুরক্ষিত রাখার জন্য এবং পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর’!
তিনি আরো বলেন, ‘ইতোপূর্বে, বিচ ম্যানেজমেন্টের (সমুদ্র সৈকত ব্যবস্থাপনা) একটু সমস্যা ছিল। আমরা সেটাকে সুন্দরভাবে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট করেছি। আমরা পুরা বিচটাকে সিসি ক্যামেরার আওতায় এনে, নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি।
এখানে যারা স্টেক হোল্ডার রয়েছেন, আমরা তাদের সুন্দর-সুশৃঙ্খলার ভেতরে নিয়ে এসেছি। দেশি-বিদেশি সব পর্যটককে নিরাপদ ভ্রমণের নিশ্চয়তায় কুয়াকাটায় আসার আহ্বান জানাচ্ছি’!
অবাক লাগছে নিশ্চয়ই। দু'দুটো বিপরীতমুখী বিশেষণ দেখে! আসলেই তাই ছিল যে। শুনুন তাহলে। সাধারণত ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর নিয়ে কিছু লিখি না। তার একটি কারণ আমাদের দেশ থেকে বলতে গেলে অনেকেই বিভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে সকাল-বিকাল ব্যাংককে আসেন। শুধু ব্যাংকক শহরেই নয়, থাইল্যান্ডের সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ অগুনতি দ্বীপে বেড়াতে যান অনেকে। এবারে দীপ্ত (পুত্র) আর মাম্পির (পুত্রবধূ) সঙ্গে সময় কাটাতে এলাম সপ্তাহ তিনেকের জন্য। এর আগে এত লম্বা সময়ের জন্য ব্যাংককে কখনো আসা হযনি। মেয়ে জামাইও আমরা থাকাকালীন তাদের পরীদের নিয়ে এলো সপ্তাহখানেকের জন্য। অনেক বছর পর এক ছাদের নিচে দুর্দান্ত সময় কাটালাম পুরো পরিবার।
ব্যাংকক বেশ গোছানো শহর। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। তবে একেক সময় রাস্তায় ট্র্যাফিক জ্যাম বিরক্তির উদ্রেক করে। অবশ্য যারা ঢাকা থেকে আসেন, তাঁদের জন্য এই জ্যাম কিছুই না। বলতেই হয় থাইল্যান্ডের আসল সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে সহস্রাধিক দ্বীপে। তবে সব দ্বীপই এখনো বাসযোগ্য নয়। আবার বাসযোগ্য দ্বীপের সংখ্যাও নিতান্ত কম নয়। এর বাইরে রয়েছে ব্যাংককের আশেপাশেই সুন্দর ছোটো ছোটো অতুলনীয় সৌন্দর্যমন্ডিত শহর। এইরকম দুই একটা শহরে গিয়ে সবুজের সমারোহ দেখে মোহিত হয়েছিলাম।
লিখছি এখানকার দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রদেশ চিয়াংমাই শহরের কথা। চিয়াংমাই পি কে ডি’র (প্রদীপ কুমার দত্ত) সঙ্গে আগেও একবার গিয়েছিলাম। তবে সময়টা কিছুতেই মনে করতে পারলাম না। কোথায় কোথায় গিয়েছিলাম তার কতক মনে আছে, আবার কিছু কিছু জায়গার কথা মনে নেই। গোল্ডেন ট্রায়াংগেল ট্যুর এবং অনিন্দ্যসুন্দর হোয়াইট টেম্পলের কথা ভুলিনি। এবার এর বাইরে যা দেখেছি সেটি যেন রূপকথাকেও হার মানায়।
মূল প্রসঙ্গে যাওয়ার পূর্বে চিয়াংমাই সম্পর্কে দু’এক কথা না বললে অবিচার করা হবে। চিয়াং মাই নামের অর্থ হলো নতুন শহর। এটি ব্যাংককের উত্তরে সাতশত কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আবার দেশটির সর্বোচ্চ পর্বতমালার নিকটবর্তী। নতুন শহর মানে এই নয় যে, খুব বেশি সময় হয়নি শহরটির উত্থান ঘটেছে। চিয়াংমাই প্রাক্তন রাজধানী চিয়াং রাইয়ের উত্তরসূরি, ল্যান না- এর নতুন রাজধানী হিসাবে ১২৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মূলত গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ু অঞ্চল। এখানে সারা বছর তাপমাত্রা উষ্ণ থেকে গরমের হলকার মতো হয়ে থাকে। ব্যাংককেও যেমন দিনের বেলায় প্রচন্ড গরম থাকে, তবে অনেক সময় বিকেল হতে হতে তাপমাত্রা কমে আসে, চিয়াংমাইতেও অনেকটা তাই। এই গরমের কারণে প্রথমদিন দিনের প্রথমার্ধে বের হইনি। শ্বশুর আর পুত্রবধূ ঘুরে এসেছিল। পরে পি কে ডি জানাল ঐসব জায়গায় আগে যখন এসেছিলাম, তখন গিয়েছিলাম। আমার অবশ্য সেসব কিছুই মনে পড়েনি। গত বছর মাম্পিরা ইংরেজি নববর্ষের ছুটি কাটাতে গিয়েছিল। ওখানে পৌঁছানোর পরপরই দীপ্ত খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। সে এক দুঃসহ সময় গিয়েছিল, যেমন ওদের জন্য চিয়াংমাইতে, তেমনি আমাদের নিজ বাসায়। দুইদিনের মধ্যে ওরা ফিরে এলো ব্যাংককে। সে এক বিরাট ইতিহাস।
ব্যাংকক থেকে চিয়াংমাই যেতে আকাশপথে লাগে ষাট মিনিটের কিছু বেশি। হোটেল আগেই বুকিং দেয়া ছিল। গোল্ডেন ট্রায়াংগেল, হোয়াইট টেম্পল, ব্লু টেম্পল মিলে একটা ট্যুরের বুকিংও দেয়া ছিল। এগুলো অবশ্য মাম্পির ডিপার্টমেন্ট। ওই গুগল ঘেঁটে কয়েকটা ট্যুর কোম্পানির ট্যুর প্ল্যান দেখে কনফার্ম করে নিল। যাওয়ার তারিখ ছিল ২২ মার্চ। শুক্রবার। দীপ্ত অফিস করে ওখান থেকেই এয়ারপোর্টে চলে যাবে। আমরা বাসা থেকে চারটা নাগাদ বের হবো। কুড়ি তারিখে পি কে ডি হৈচৈ শুরু করে দিল। চিয়াংমাই তো একবার গিয়েছি। আবার যাওয়ার কী হলো? চব্বিশ তারিখ আমার ওয়েবিনার আছে। ঠিক সময়মতো যদি পৌঁছাতে না পারি তাহলে কী হবে?
দীপ্ত জানাল টিকেট হয়ে গেছে। আর তোমার প্রোগ্রামের অনেক আগেই পৌঁছে যাব বাসায়। এই কথায় নটরাজ হতে গিয়েও হতে পারল না পি কে ডি। নির্দিষ্ট দিনে পৌঁছে গেলাম চিয়াং মাই’তে। হোটেলে যেতে যেতে মাম্পি পি’কে ডিকে বলছিল বাবা আগামীকাল সকালে ব্রেকফাস্ট করে আমি আর আপনি বের হয়ে যাব। ওদিকে একটা মন্দির আছে। অনেকগুলো সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হবে। মা পারবেন না ( আহা বধূ মাতা এত্তো ভালো! দারুণ হবে। ব্রেকফাস্ট সেরে আর এক রাউন্ড ঘুমিয়ে নেয়া যাবে)। দীপ্ত রয়ে গেল হোটেলে। তবে প্রথমদিনের আরাম বধূমাতা তুলে নিল পরের দিন সকাল সাড়ে ছয়টায় ট্যুর বুক করে। কেমন লাগে বলুন তো?
রাতেই রিসেপশনে বলে রাখল সাথে ক্যারি করার মতো কিছু খাবার যেন আমাদের জন্য তৈরি করে রাখে। কেননা ব্রেকফাস্ট করার সময় পাওয়া যাবে না। জীবনে মনে হয় এই প্রথম সাড়ে পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে পড়লাম কোনোরকম ন্যাকামি ছাড়া বা গাল না ফুলিয়ে। নিজেই অবাক হলাম। স্নানটান সেরে পুরো তৈরি। পি কে ডি’কে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে। গোল্ডেন ট্রায়াংগেল এবং হোয়াইট টেম্পল আগেই দেখা ছিল। ব্লু টেম্পলের নামই শুনিনি। গাড়ি ডেকে আমরা ট্যুর কোম্পানির অফিসে গেলাম। বেশ ঝকঝকে দুটো গ্রে কালারের গাড়ি দেখলাম দাঁড়ানো। শুনলাম আমরা ছাড়াও আরও দুজন যাবে এই গাড়িতে। কেমন হবে সহযাত্রী কে জানে?
ট্যুর কোম্পানি আমাদের নাম ঠিকানা পাসপোর্ট নাম্বার লিখে রাখল। শেষ পর্যন্ত বাকি দুজন এলো না৷ এর আগেই আমরা গাড়িতে উঠে বসলাম। গাড়ি দেখেই ভোরে ওঠার কষ্ট নিমেষে কেটে গেল৷ আর ভিতরে উঠে বসার পর তো মনে হলো আহা জীবন কী সুন্দর! দশ সিট বিশিষ্ট Hiace Microbus আমাদের দেশে যেমন দেখা যায়। এতবড়ো গাড়িতে আমরা চারজন। এখানে সব গাড়িই ঝাঁ চকচকে। কোনো গাড়ি দেখলাম না গায়ে দাগ বা থোবড়ানো দেহ নিয়ে। সামনে ড্রাইভারের পাশের সিটে বসলেন ট্যুর গাইড। ভদ্রমহিলার বয়স পঞ্চাশও হতে পারে,আবার ষাটও হতে পারে। মঙ্গোলীয় বর্ণের মানুষদের এই এক সুবিধে। বয়স বোঝার উপায় নেই।
প্রথমেই দু'হাত জোড় করে নমষ্কার জানালেন থাই সিস্টেমে এবং বয়স ভেদে দু'হাত জোড় করে কোথায় আঙুল রাখতে হয় ... আর মন্দিরে গৌতম বুদ্ধকে কীভাবে প্রণাম করতে হয় তার নিয়মও বিস্তারিত বললেন। গাড়ি ছুটে চলল নখের পিঠের মতো মসৃণ রাস্তা দিয়ে। আমার তো অস্বস্তিই লাগছিল গর্ত নেই, স্পিড ব্রেকারে ড্রাইভারের অসতর্কতার জন্য গাড়ি লাফিয়ে উঠছে না... আমাদের মাথা ঠুকে যাচ্ছে না বা হার্ড ব্রেক করতে হচ্ছে না ... এ কেমন দেশ! এই দেশের ইঞ্জিনিয়াররা কোথায় পড়াশোনা করেছে? কী পড়েছে ওরা? ধ্যাত্তেরিকা! কোনো মানে হয় এমন রাস্তা বানানোর? ঠিকাদাররাও কেমন পানসে টাইপের। সব কাজ ঠিকঠাক মতো করে রেখেছে!
ঘন্টা খানেক পরে থামলাম একটা জায়গায়। ওখানে হট স্প্রিং রয়েছে। সকালে জানাতে ভুলে গিয়েছিলাম। ও হ্যাঁ, আমাদের বাড়বকুন্ডে একটা মিহি বেগে নেমে আসা উষ্ণ প্রস্রবণ আছে কিন্তু। আমাদের আগে অনেক ট্যুরিস্ট ওখানে পৌঁছে গেছেন। আর সবাই জুতো খুলে গরম জলে পা ডুবিয়ে বসে আছে। এক যাত্রায় পৃথক ফল কেন হবে? আমরাও জুতো ছেড়ে ওখানে পা ডোবাতে বসে পড়লাম। আর আমার খুব ভালো লাগে গরম জলে পা ডুবিয়ে বসে থাকতে। ভাইরে ঠ্যাকায় পড়ে রে। ঠ্যাকায় পড়ে। এমনি এমনি এমন রাজসখ জন্মায়নি। পায়ের আঙুলে ক্র্যাম্পে প্রায় কষ্ট পাই। এই কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে... বেশ কিছুক্ষণ গরম জলের তাপ নিয়ে চনমনে মুড নিয়ে উঠলাম। ট্যুর গাইড পা মোছার জন্য টিস্যু পেপার এগিয়ে দিলেন।
গরম পা নিয়ে মনে বেশ একটা উৎসব উৎসব ভাব নিয়ে আবার গাড়িতে উঠে বসলাম। এবারের যাত্রা হোয়াইট টেম্পলের দিকে। হোয়াইট টেম্পল বা বাংলায় সাদা মন্দির, এই মন্দিরকে থাই ভাষায় বলা হয় 'ওয়াট রং খুন '। এটা চিয়াং রাই প্রদেশে অবস্থিত। চিয়াং মাই থেকে এর দূরত্ব ১৮৫ কিলোমিটার। উষ্ণ প্রস্রবণ থেকে যেতে দু'ঘন্টা সময় নিল। এই সাদা মন্দিরে অনেক বছর আগে এসেছিলাম। সূর্যের আলোয় পুরো মন্দির চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছিল।
এবারে ওয়ার্কশপে গিয়ে দেখলাম কীভাবে মন্দিরের স্ট্রাকচার বানানো হয়। কয়েকটি ছবি দিচ্ছি। সাদা সিমেন্ট দিয়ে পাতলা কাঠের ওপর ডিজাইন অনুযায়ী স্ট্রাকচার বানিয়ে নেয়। কাঠের পিছনে কয়েকটি জায়গায় এক ইঞ্চি করে কেটে রাখে। যখন সিমেন্ট শুকিয়ে যায় তখন ঐ কাঠের কাটা জায়গার ওপর চাপ দিয়ে সিমেন্টের স্ট্রাকচার আলাদা করে নেয়। (ক্রমশঃ)