প্রশান্ত পশ্চিম



মাহমুদ হাফিজ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সানফ্রানসিস্কো এয়ারপোর্টের টার্মিনাল ২ থেকে সিয়াটলের উদ্দেশে আলাস্কা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নম্বর ৩১৪৮ ছেড়ে যাবে বেলা পৌণে তিনটায়। আড়াই মাস আগে টিকেট কেটে সেই ফ্লাইটের যাত্রীখাতায় নাম তুলেছি। এখন বেলা সোয়া বারোটা। হাতে আছে পাক্কা আড়াইঘন্টা। সীমান্তের ‘কাঁটাতার’ অতিক্রম সময়ের ব্যাপার! খোদা না খাস্তা কানেক্টিং ফ্লাইট যদি মিস করি! তাড়াহুড়োই্ করছি। জীবনে প্রথম বিমান মিসই হলো। দরজায় দাঁড়ানো পরাক্রান্ত সহিস ঘোড়ার পিঠে আমাদের না চড়িয়েই লাগাম ছেড়ে চলে গেছে। ভরঅপরাহ্নে বোর্ডিংগেটে কাকপক্ষীও নেই। টানা চল্লিশঘন্টার ভ্রমণক্লান্ত শরীর ফাঁকা সোফায় এলিয়ে এতোক্ষণ ঘটে যাওয়া ভজঘটের জাবর কাটছি। ভাবছেন- ‘ক্যামনে কী’!

আকাশের অসীম থেকে সানফ্রানসিস্কোর সীমান্ত সসীমে নেমেছি। ইমিগ্রেশন কাউন্টারের দিকে চাকাওলা লাগেজ টেনে হেটে যাই। মার্কিন মুলুকের সীমান্ত সুরক্ষক ফেডারেল সংস্থা ‘কাস্টমস এ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন’-সিবিপি (আমাদের কমিউনিস্ট পার্টি অব বাংলাদেশ- সিপিবি নয়)। নীল ইউনিফর্ম আর কোমরের বেল্টে গোঁজা স্বয়ংক্রিয় রিভলবারে সিবিপি কর্মকর্তারা চৌকষ। কথাবার্তায় রোবটীয় গাম্ভীর্য, অভিজাত সেনাবাহিনীর জাঁদরেল অফিসারের মতো। হলের প্রবেশমুখ গ্রিণকার্ড ও ভিসাধারী নামে দুটি লাইন রিবনবিভক্ত। আমরা দাঁড়িয়েছি ভিসা লাইনে। পকেটে মার্কিন প্রবেশের সবুজ সঙ্কেত নেই।

‘আত্মবিক্রয়ের স্বর্ণ কোনকালে সঞ্চয় করিনি’, অভিপ্রায়ণেচ্ছু হইনি কোনদিন। লাইনে দাঁড়িয়ে ভাবছি এরকম খাপছাড়া নানা কথা। ভরদুপুরে টার্কিশ এয়ারই শুধু উড়ে এসে এ পোতে নোঙর করেছে। অন্য কোন উড়োজাহাজের আগমন দেখিনি। হলঘরে যে শ’ তিনেক আবালবৃদ্ধবণিতা লাইনে দাঁড়ানো সীমান্ত অতিক্রমের অভিপ্রায়ে; তারা এখানে ইস্তাম্বুলের যাত্রী।

ইমিগ্রেশন হলে কাউন্টার আশিটির ওপরে। গোটা দশেক কাউন্টার খোলা রেখে টার্কিশ যাত্রীদের সীমান্তপ্রক্রিয়া সম্পন্নের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগে সানফ্রানসিস্কো এয়ারপোর্টেই স্বয়ংক্রিয় মেশিনে ব্যক্তিগত তথ্যের ইনপুট দিয়ে চোখের পলকে পার হয়েছি। করোনাকোভিড বিশ্বকে এমন করুণ দিন উপহার দিয়েছে যে, প্রযুক্তিশীর্ষের দেশ আমেরিকাও যন্ত্রকে আপাত: গুডবাই বলে পাশে সরিয়ে রেখেছে। আমরা যেখানে লাইন দিয়েছি, তার অদূরের দেয়ালঘেঁষে মেশিনের সারি অলস ঝিমাচ্ছে। আগে মানুষের বদলে মেশিন বসেছিল, এখন মেশিনের বদলে মানুষ।

শ্লথগতিতে আগুয়ান লাইন থেকেই স্বচ্ছ কাঁচঘেরা কাউন্টারে বসা সিবিপি কর্মকর্তা আর মার্কিনযাত্রীর কথোপোকথন স্পষ্ট শোনা যায়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার দেয়া না দেয়া সিবিপি কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত জুরিডিকশন ও অভিরুচি। ব্যক্তিভেদে সিদ্ধান্তের ইতিনেতির তথ্য প্রবেশেচ্ছুদের জানা। সিল দিয়ে ‘ওয়েলকাম টু ইউনাইটেড স্টেটস’ বললে হাসিমুখে যাত্রী বামদিকে হলঘরের দিকে লাগেজ সংগ্রহে যাচ্ছে। সিল না পড়লে ডানে হলঘরের শেষপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সবার মনে এখন একই উদ্বেগ-রোবটসদৃশ কর্মকর্তার বদলে ভাগ্যে যেন সহাস্যবদন কর্মকর্তা পড়ে। সিদ্ধান্ত সময়সাপেক্ষ ও জটিল না হয়ে সহজ হয়। ভাবি, জগতের আকাশ বাতাসে পশুপাখির উড়াল নিয়ে মানুষের মাথাব্যাথা নেই।

সীমান্তঅতিক্রমী নদীস্রোত পাড়ি দেয় এক দেশ থেকে আরেক দেশে, দুইদেশ বিস্তৃত একই বনের পশুপাখি অনায়াসে ভূগোল রেখা ভাঙে, যতো মাথাব্যথা কেবল সৃষ্টির সেরা মানুষের প্রবেশে! এ কোন কঠিন পৃথিবীতে আমাদের বসবাস? সীমান্ত নামের এই ধীরগতির লাইনে দাঁড়িয়ে মন তাই দুরু দুরু। এমন বিশ্ব ভ্রমণিয়া বোধ নেই, ইমিগ্রেশনে দাঁড়িয়ে যার চিন্তা হয়নি ভিতরের ঢুকতে দেবে তো! যে আমি একুশ বছর ধরে মার্কিন মুলুকের পূর্ব সাগরপ্রান্ত অতলান্ত আর পশ্চিমের প্রশান্ত পর্যন্ত যাওয়া আসা করছি, তার মধ্যেও আজ এক আসোয়াস্তি।

তুসু পাশের কাউন্টারে মহিলা সিবিপি কর্মকর্তার সামনে, আমি আর জলি একই বংশোদ্ভূত পুরুষের কাউন্টারে দাঁড়িয়েছি। পাসপোর্টে নাম দেখেই কর্মকর্তার জিজ্ঞাসা- মাহমুদ, তুমি টার্কি থেকে এসেছো?

জবাবের তোয়াক্কা না করেই আবার বলে – ‘তোমার কাছে খাবার, মসলা ও মিষ্টি আছে?’

সানফ্রানসিস্কো ডোমেস্টিক টার্মিনাল

ভাবলাম আমার লাগেজে কি আছে না আছে তা কে তুললো মার্কিন মুলুকের এই কর্মকর্তার কানে? ইমিগ্রেশনে বসে সে কাস্টমস কর্মকর্তার মতো প্রশ্ন করছেই বা কেন? আমার লাগেজে সবই আছে। এমনকি শুকনো করে গরুর মাংস রান্নাও থাকতে পারে স্ত্রীর লাগেজের গোপন কুঠরিতে। সরাসরি জবাব না দিয়ে একটু ডিপ্লোম্যাসির আশ্রয় নিলাম- ইউ সী, আই এ্যাম এ্যাওয়ার এ্যাবাউট ইওর বর্ডার রুলস। আই মে হ্যাভ সাম হাফ কুকড সী ফুড, ফিস, পিকেলস এটসেটরা-হুইচ আর এ্যালাওয়েবল।

কর্মকর্তার কম্পিউটার পর্দায় সিদ্ধান্ত লেখাই ছিল মনে হলো। সিল না দিয়ে সে দু’জনের চারটি পাসপোর্ট দু’টি স্বচ্ছ বক্সে ঢুকিয়ে তালা মারলো। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে তালামারা পাসপোর্ট বক্সটি বগলদাবা করে ‘প্লিজ, কাম উইথ মি’ বলে ডানদিকে হাঁটা শুরু করলো। ভাবলাম, ‘কাম উইথ মি’ বলে রিমান্ডে তলব করে কোথায় নিয়ে যেতে চায় এই মার্কিন সিবিপি স্টাফ! বুঝলাম, চলেছি সেদিকে, যেদিকে চলে গেছে পূর্ব ও উত্তরপুরুষগণ। পড়লাম-‘ ইহদিনাস সিরাত্বল মুস্তাকিম, সিরাত্বল লাজি না আনআ’মতা আলাইহিম’ ( প্রভু, সোজা পথ দেখাও, যে পথ তোমার অনুগ্রহপ্রাপ্তদের পথ)। মোদ্দাকথা, আজকের টার্কিশ এয়ারে নামা আড়াইশ’র মধ্যে একশ’য়ের মতো যাত্রীকে আমার মতো দক্ষিনপন্থী করা হয়েছে। সামনে যেন ‘পুলসিরাত’ অপেক্ষমান। যদিও দক্ষিনপন্থীদের পারের আশ্বাস স্পষ্ট। বিনাকথায় সিবিপি সিলটি মারলে বামপন্থী হতে পারতাম !

হলঘরের শেষপ্রান্তে ওয়েটিং এরিয়া। শেষপ্রান্ত লাগোয়া ছোট হলে চলছে তুসুর কাগজপত্র চেক। আমাদেরও সেই হলেই নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো, সে ঘরে লোকে টইটুম্বুর, ‘ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই ছোট সে তরী’ অবস্থা বলে সামনের ওয়েটিং এরিয়াতেও সেকেন্ডারি ইন্টারভিউ’র ব্যবস্থা। কাগজপত্র ও পরিচয়ের অস্পস্টতা দূর ও সন্দেহভাজনদের ওপর থেকে সন্দেহ অপনোদনে এই কালক্ষয়ের এন্তেজাম। ইমিগ্রেশন হলের শেষ কাউন্টারের সামনে পাতা বড় বড় সোফা। বোঝাই যায়,প্রতিদিনই তাতে নিয়মিত ডেকে আনাদের বসানো হয়।  আমাদের বসানো হলো। আগের কর্মকর্তা তালামারা বক্স হস্তান্তর করলো কাউন্টারে বসা আরেক কর্মকর্তার হাতে। নতুনজন বেঁটেখাটো, পেশিবহুল। তার শারিরী ভাষায় দৃঢ় ও কঠোরতার ছাপ। তালা খুলে পাসপোর্ট বের করে আমার কাছ থেকে কিছু তথ্য নিলেন। মিনিট দশেক পর বললেন, ‘তোমার জন্ম তো বাঙ্গালোর’। হেসে বললাম, ‘বাংলাদেশ।  ড্রপডাউন মেন্যু স্ক্রল করতে গিয়ে তোমার ভুল হচ্ছে হয়তো’।  

কর্মকর্তা যখন চুলচেরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন, অন্য কর্মকর্তাকে ডেকে এনে কম্পিউটার স্ক্রিন দেখাচ্ছেন কিংবা ঘন ঘন ভেতরের হলে তার উর্ধ্বতন কর্মকতার কাছে যাওয়া আসা করছেন, তখন জলি উদ্বিগ্নকন্ঠে বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে। আমি বেশি উদ্বেগকে পাত্তা না দিয়ে কেউ না শোনে এমনভাবে গেয়ে চলেছি ‘আমি অপার হয়ে বসে আছি, ওগো দয়াময়…পারে লয়ে যাও আমায়….আমি একা রইলাম ঘাটে, ভানু সে বসিলো পাটে…তোমা বিনে ঘোর সঙ্কটে… না দেখি উপায়…পারে লয়ে যাও আমায়…।‘

বাউলভাবনা তাড়িত আমার সম্বিত ফেরালো ওই কর্মকর্তা। ‘নো ওয়ে, নো ওয়ে, ইউ ক্যান নট গো ইন’, ইউ ক্যান নট গো ইন’ বলে আমাদের দিকে এগিয়ে আসলেন তিনি। এ স্তরে আর্গু করতে থাকি এবং সফল হই। কর্মকর্তা সিল মেরে মার্কিন মাটিতে পদার্পণের অনুমতি দিলেও পাসপোর্টগুলো পূর্ববৎ তালা মেরে  কাস্টমসের ‘বি’ লাইন দিয়ে বেরিয়ে যেতে বলেন। হলঘরে তুসু ইন্টারভিউও শেষ। আমি তাদের নিয়ে হলঘর থেকে বিজয়ীর বেশে বাইরের কাস্টমস হলে যাওয়ার সরু প্যাসেজ দিয়ে হাঁটি। তালা মারা পাসপোর্টের বক্স আমার বগলদাবা। মেজাজ ফুরফুরে। গাইতে থাকি-

‘একটা চাবি মাইরা দিছে ছাইড়া জনম ভরে ঘুরতে আছে, মন আমার দেহঘড়ি সন্ধান করি কোন মিস্তরি বানাইয়াছে….মন আমার দেহ ঘ….ড়ি।‘

বাইরে এসে দেখি লাগেজগুলো বেল্টে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত শ্রান্ত। এরা বিমান চড়েছে দুদিন আগে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে। কাপড় চোপড় ছাড়া বয়ে আনা খাদ্যের এখন চাই জিরো ডিগ্রির শীতলতা। ভাগ্যিস, পকেটে গুনে গুনে আট টাকা ছিল। তুসুর হাতে দিলে সে মেশিনে ফেলে একটা লাগেজ ট্রলি জোগাড় করে। এই ঝামেলা, যুক্তরাষ্ট্রে। লাখ লাখ ডলার কাটছে এয়ারপোর্ট খরচা বাবদ, বিনা অর্থে ট্রলির কোন ব্যবস্থা নেই। আর বাপু, এয়ারপোর্টে কি লোকজনের কাছে সে দেশের কড়ি থাকে?  তিনটি লাগেজ ট্রলিতে উঠিয়ে তুসু ঠেলতে থাকে, আমি দুটি আর জলি একটি নিয়ে অগ্রসর হই কাস্টমস হলের বি জোনে।

গানে গানে মেজাজ ফুরফুরেই ছিল। গোল বাধায় কাস্টমস কর্মকর্তারা। তিনজনের লাগেজের চালটা, মুলোটা, ডালটা, মাছ ভাজিটা, নাড়ু, বাতাসা, চানাচুর, আমসত্ত্ব যা আছে, ঘোষণা দিতে এক ফরমে। এ নিয়ে কালক্ষয় হলো অনেকখানি। এই ধাপ পেরুলে নাক বরাবর গাড়ি বারান্দা, বামে ডোমেস্টিক ট্রান্সফার ও কানেকশন্স। এবার বামপন্থী হয়ে লাগেজপত্র ঠেলেঠুলে অনেকটা পথ আসি। আলাস্কা বলতেই এক বিমানপোতকর্মী পথনির্দেশ করতে শাহাদত আঙুল ওঠায়। গিয়ে দেখি,লাগেজ ঠেলে পৌঁছে দেখি আসল আলাস্কামুখো ফ্লাইটের লাগেজ চেক ইন করছে ইএক এয়ারপোর্ট কর্মী। পরে আবার উল্টোপথে আধ কিলোমিটারে বেশি হেঁটে আলাস্কা এয়ারলাইন্সের কাউন্টারে পৌঁছি।   

নির্ধারিত ফ্লাইট টেকঅফ সময়ের তখনও কিছুটা বাঁকি। এটা তো আর বন্ধুর মোটরবাইক বা ‘পাঠাও’ না যে উঠলাম, স্টার্ট দিলাম আর পৌঁছে গেলাম। কাউন্টারকর্মী বললেন, তোমাদের ফ্লাইট মিস। ভাবতে হয়নি, কারণ একই রুটে আরও ফ্লাইট আছে কয়েকঘন্টা পর পর। পরবর্তী ফ্লাইটেও তিনজনের আসন হলো না। শেষ ফ্লাইট রাত পৌণে আটটায়। ঘন্টা চারেক এয়ারপোর্টবাস করতে হবে। আমাদের সঙ্গে প্যারিশেবল গুডস ফ্রিজের শীতলতা চাচ্ছে। যেসব মাছ মিষ্টি খাওয়া হবে সিয়াটলে। না হলে এয়ারপোর্ট থেকে সোজা আলামেদা আইল্যান্ডে সোজা বন্ধু আতিয়ার রহমান লাবুর বাড়িতে গিয়ে উঠতাম। শাহানা ভাবীর হেঁসেলের রান্নার কথা ভোলা যায় না।  

লম্বা সময় থাকার পরও কানেক্টিং ফ্লাইট মিস করায় ইমিগ্রেশন ও কাস্টসমস কর্মকর্তাদের ওপর অভিমান হলো বড়। আবার ভাবলাম, মার্কিন মুলককে সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব তো তাদের ওপরই, পেশাগত দায়িত্ব তো তারা সুচারুরূপেই পালন করবে। তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে যা পেশাদারিত্ব ও দক্ষতা বটে।

আর ঝুঁকি নিতে চাইলাম না। আমাদের বোর্ডিং গেট ডি ৭। সামনেই সিকিউরিটি চেক। নিরাপত্তা চেক করে ডোমেস্টিকে ঢুকতে জলির জন্য গোল বাধবে জানাই ছিল। ছোটবেলায় তার অপারেশন হওয়ার জেরে এয়ারপোর্টে ফুলবডি স্ক্যানিংয়ের সময় মেশিন ভুল রিডিং করে থাকে সবসময়। ম্যানুয়েল চেকিংয়ে ব্যাখ্যার পর সে  ছাড়া পায় বার বার। সেসব ঝক্কিশেষে স্ক্যানার পেরিয়ে ভেতরেই যেতেই  লাস্যময়ী হাস্যময়ীর ডাক-এই ব্যাগ কার? দেখি অধমের ব্যাগটিতেই পাশে নামিয়ে রাখা। লাস্যময়ী বলে, তোমার ব্যাগে লিকুইড আছে। আমি বলি নেই। সে বলে আছে। আমি বলি নেই। আছে নেই, আছে নেই করতে করতে কয়েক মিনিট কাটে। তারপর সে অনমুতি নিয়ে ব্যাগ খোলে। দেখা যায়, টার্কিশ এয়ারের সৌজন্য পাণীয় ব্যাগে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে এয়ারপোর্টে ঢোকার চেষ্টা করছে। এতোসব ভজঘটে ভুলেই গিয়েছিলাম তার্কিশ এয়ার পাণীয় উপহার দিয়েছিল, তা ব্যাগের কোটরে পুরেছি রেখেছি।

এবার লাস্যময়ী নিরাপত্তাকর্মীর অনুরোধ, ‘তুমি বাইরে যাও। এটা খাও, পেটে পুরে আবার স্ক্যানার দিয়ে ফিরে আসো।

তাকিয়ে দেখি পেছনে বেজায় লাইন। বেরিয়ে আবার ঢুকতে গেলে অনেক অপেক্ষার করতে হবে, এখন আর প্রহর গোণার অবস্থা শরীর ও মনের নেই।

ভ্রামণিক জাফর ভাই বলেছিলেন, এ ধরনের পরিস্থিতে আফ্রিকায় নাকি একটা টার্ম ব্যবহার হয়-‘প্লিজ মেক এ প্ল্যান’। এর পারিভাষিক অর্থ ‘একটা ব্যবস্থা করো’।

‘প্লিজ মেক এ প্ল্যান’ শব্দটি মুখ ফসকে বেরিয়ে গেলে লাস্যময়ী চীৎকার করে ওঠে ‘হোয়াট’। কোমলকন্ঠে বলি-‘যদি এখানে এটা রেখে যাই, বা তোমাকে উপহার দিই….!’

আর বাক্যব্যয় করতে হয় না।

ক্ষুৎপিপাসায় কাতর সবাই। গেটমুখে যাওয়ার পথে ছোট ছোট কফিশপ- ভারী বা হালকা খাওয়ার আয়োজন। পকেটে প্রায়োরিটি পাস নামের যে সেবিকা রয়েছে, তার এস্তেমাল করতে ব্যর্থ হই। স্থান কাল ও পাত্র ঠিক নেই। জীবনে এ তিনটি জিনিসের মেলবন্ধন বড় প্রয়োজন। অগত্যা এক কফিশপে থেকে পানি কিনি, কিছু নাস্তা অর্ডার করি। পানি পিপাসায় জলি ছাতি ফাটছে। দোকানের সামনের  ফুডকোর্টে বসে আয়েশ করে খাই। গেটমুখে গিয়ে দেখি কাকপক্ষীও নেই। এখন চারটার মতো বাজে। বোর্ডিংগেটের কাউন্টার খুলবে ফ্লাইট ছাড়ার ঘন্টাকাল আগে, পৌণে সাতটায়। তার মানে আমাদের হাতে ঘন্টা তিনেক সময় আছে। জলি সোফায় ঘুমিয়ে পড়ে।সামনে উড়োজাহাজের ওঠানামা দেখতে দেখতে আমি গত কয়েকঘন্টায় ঘটনার কার্যকারণ বের করার জন্য স্মৃতির জাবর কাটি।

এ্ই স্মৃতির জাবরে ধরা পড়ে- আমি যে টেপে প্যাঁচানো বক্সে মাছ-মিস্টি এনেছি-তাই হয়তো আজকের ভজঘট-বিড়ম্বনার নেপথ্যে। ইস্তাম্বুল এয়ারপোর্টে মার্কিনমুখো ফ্লাইটে ওঠানোর সময় আমার প্রোফাইলে রেডফ্ল্যাগ পড়ে থাকতে পারে। মানে আমি এখানে পৌঁছানোর আগেই এখানে চলে আসছে লাগেজের বিবরণ। অতএব সাধু সাবধান! বিড়ম্বনার কথা ভেবে মন খারাপ না করে আমি বরং উড়োজাহাজ টেকঅফ ও ল্যান্ডিং দৃশ্যে মনোনিবেশ করি। ওসবের চেয়ে ভ্রমণের ইতিবাচক মজা নেয়া বড় প্রয়োজন।

   

পায়ে হেঁটে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ায় শান্তা-শাওন দম্পতি



তৌফিক হাসান, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, ট্রাভেল এন্ড ট্যুর
পায়ে হেঁটে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ায় দম্পতি

পায়ে হেঁটে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ায় দম্পতি

  • Font increase
  • Font Decrease

সম্প্রতি এক প্রাণোচ্ছল ভ্রমণপিপাসু দম্পতি পায়ে হেঁটে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়াতে পৌঁছান। ‘প্রতিটি প্রাণ মূল্যবান, আত্মহত্যা নয়- বাঁচতে শিখি’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে চলতি বছরের গত ২৮ জুন পায়ে হেঁটে টেকনাফ থেকে ভ্রমণ শুরুর পর শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্টে ভ্রমণ শেষ করেন তারা।

ব্যাংকার শারাবান তহুরা শান্তা এবং আর্কিটেক্ট আল ইমরান শাওন তাদের পেশাগত ব্যস্ততার মাঝেও এই সময় বের করে আত্মহত্যা নয় বাঁচতে শেখার প্রতিপাদ্যকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছেন। দম্পতির ভাষ্যমতে তাদের এই ভ্রমণে তারা প্রচুর মানুষের সাথে বিশেষ করে তরুণ তরুণী এবং স্কুলের বাচ্চাদের সাথে কথা বলেছেন, দেশকে দেশের মানুষকে নতুন করে চিনেছেন এবং অনেককে নতুনভাবে চিনতে সাহায্য করেছেন ও সচেতন করেছেন। চলার এই পথে তারা নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। নতুন কিছু শিখতে, মানুষকে জীবন সম্পর্কে জানাতে ও সচেতন করার অভিপ্রায় তাদের পিছু হটতে দেয়নি।

ইনানীতে কয়েকজন তরুণ তাদের স্বাগত জানায়

বার্তা২৪ কে শান্তা বলেন, বিগত ২৮ জুন আমরা হাঁটা শুরু করি টেকনাফের শাহীপরীর দ্বীপ থেকে। প্রথমদিন প্রায় ২৮ কিলোমিটার পথ হেঁটে বড়ডিলের মরিসবুনিয়া স্কুলের নৈশপ্রহরীর বাড়িতে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা হয়। সেদিন রাতে আমাদের সাথে একটা ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে। মাঝরাতের দিকে হাতির পাল আমাদের থাকার ঘরে আক্রমণ করে বসে। নৈশ প্রহরীর পরিবারের সাথে দৌড় দিয়ে স্কুল ঘরে গিয়ে উঠি এবং বাকি রাতটা আমাদের সেখানেই কাটে। দ্বিতীয় দিন ছিল ঈদের দিন, সেদিন প্রায় ৩৬ কিলোমিটার হেঁটে থেকে ইনানী বিচ পর্যন্ত যাই। ঈদের ছুটিকে কাজে লাগিয়ে ১০ দিনে ৪০০ কিলোমিটার কুমিল্লার দাউদকান্দি পর্যন্ত পৌঁছাই। পরের সপ্তাহে দাউদকান্দি থেকে হেঁটে ঢাকার রামপুরা পর্যন্ত আসি। অতঃপর মায়ের অসুস্থতা, পারিবারিক সমস্যা এবং অফিসের ব্যস্ততার কারণে কয়েক সপ্তাহ বিরতি নিয়ে পুনরায় সাপ্তাহিক ছুটির দিনে হাঁটা শুরু করি। এভাবে হাঁটতে হাঁটতে আরিচা হয়ে ট্রলারে যমুনা পাড়ি দিয়ে কখনো হাইওয়ে ধরে আবার কখনো লোকাল রাস্তা দিয়ে হেঁটে উত্তরের সীমান্ত তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত পৌঁছে ভ্রমণ শেষ করি।

 পুরো ভ্রমণে কোনো সমস্যায় পরতে হয়েছিল কিনা তার জবাবে শান্তা জানান। ফেনী ক্রস করার পর আমার স্বামী আমাকে ফেলে বেশ খানিকটা এগিয়ে যাওয়ায় ৫/৬ জন বখাটে আমাকে ঘিরে ধারে নানানভাবে উত্ত্যক্ত করতে থাকে এবং অনৈতিক কথা বলতে থাকে। সেসময় আমি সাহস নিয়ে প্রতিবাদ করায় এবং উপস্থিত বুদ্ধি খাঁটিয়ে ওদের ভয় দেখানোতে ওরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। এই ঘটনা ছাড়া তেমন কোন সমস্যা হয়নি। তবে আমাদের দেশে পাবলিক টয়লেট না থাকে চলতি পথে ভ্রামনিকদের খানিকটা সমস্যায় পড়তে হয়। আমাদের দেশের মানুষজন খুব ভাল এবং সাহায্যপরায়ণ।

অনিন্দ্যসুন্দর এক রাস্তায় ভ্রামনিক শান্তা

শাওন বার্তা২৪ কে বলেন, আমরা ঐকান্তিক চেষ্টা ছিল দেশব্যাপী পায়ে হেঁটে ঘোরার এবং মানুষের মধ্যে জীবনের বানী পৌঁছে দেবার এবং শত বাধার পরেও আমরা চেষ্টা করে গেছি। ভবিষ্যতেও আমাদের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এবং মূল প্রতিবাদ্যকে মাথায় রেখে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও ভ্রমণ করার ইচ্ছে আছে আমাদের। আমি বন্ধু এবং শুভানুধ্যায়ীদের ধন্যবাদ জানাই এবং আউটডোর বিডি এর প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি এই ভ্রমণে বিভিন্ন ভাবে পরামর্শ ও সহায়তা দেবার জন্য।

স্কুলের বাচ্চাদের সাথে মতবিনিম

আউটডোর বিডির ফাউন্ডার জুয়েল রানা বার্তা২৪ কে বলেন, আমি নিজে একজন ভ্রমণপাগল মানুষ। আউটডোর বিডি’র উদ্দেশ্যেই হলো একজন পরিব্রাজক বা ভ্রমণকারী যাতে হাতের কাছেই সহজলভ্যে সকল ভ্রমণ সামগ্রী পান। শান্তা ও শাওন দম্পতি এই ভ্রমণ সম্পন্ন করায় আমরা খুশি এবং তাদের এই ভ্রমণ দেখে আরও মানুষ উদ্বুদ্ধ হোক আমরা সেটাই চাই।

;

ইন-ফ্লাইট সার্ভিস ক্যাটাগরিতে গোল্ড পুরস্কার পেলো এয়ার এ্যাস্ট্রা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম ঢাকা
গোল্ড পুরস্কার নিচ্ছেন এয়ার এ্যাস্ট্রার সিইও ইমরান আসিফ। ছবি : সংগৃহীত

গোল্ড পুরস্কার নিচ্ছেন এয়ার এ্যাস্ট্রার সিইও ইমরান আসিফ। ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘মনিটর এয়ারলাইন অব দ্য ইয়ার ২০২৩’- এর বেস্ট ইন-ফ্লাইট সার্ভিস ক্যাটাগরিতে সেরা হয়েছে এয়ার এ্যাস্ট্রা।

রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাতে বাংলাদেশ মনিটর আয়োজিত গালা অ্যাওয়ার্ড নাইটে এয়ার এ্যাস্ট্রার সিইও ইমরান আসিফের হাতে বেস্ট ইন-ফ্লাইট সার্ভিস ক্যাটাগরির গোল্ড পুরস্কার তুলে দেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, এমপি।

যাত্রী সন্তুষ্টির প্রতিশ্রুতির জন্য পরিচিত এয়ার এ্যাস্ট্রা ২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর যাত্রা শুরু করে বর্তমানে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর এবং সিলেটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

এয়ার এ্যাস্ট্রা’র বহরে বর্তমানে তিনটি এটিআর ৭২-৬০০ এয়ারক্রাফট রয়েছে, যা ফ্রান্সে নির্মিত সর্বাধুনিক প্রযুক্তির টার্বোপ্রপ এয়ারক্রাফট এবং ৭০ জন যাত্রী বহন করতে সক্ষম।

বাংলাদেশ মনিটর তাদের বাৎসরিক কার্যক্রম হিসেবে ২০০৭ সালে বাংলাদেশে ‘এয়ারলাইন অব দ্য ইয়ার’ প্রবর্তন করে। এভিয়েশন ও পর্যটন বিষয়ক প্রকাশনা ‘বাংলাদেশ মনিটর’-এর জরিপের ভিত্তিতে বিজয়ীদের নির্বাচিত করা হয়।

বিগত এক বছরে যারা কমপক্ষে তিনবার আকাশপথে ভ্রমণ করেছেন, তারা অনলাইনে নিজের পছন্দের এয়ারলাইন্সকে ভোট দিতে পেরেছেন।

;

সিলেটে একসঙ্গে ঘুরে দেখা যাবে ২৩টি পর্যটন স্পট



মশাহিদ আলী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেট। সিলেটের অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। যেদিকে চোখ যায় সেদিকে উঁকি দিয়ে ডাকছে প্রকৃতির সৌন্দর্য। আর সেই সৌন্দর্য উপভোগের জন্য দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন ভ্রমণপিপাসুরা। প্রতিদিন সিলেটে বেড়াতে আসেন হাজার হাজার পর্যটকরা।

কিন্তু পর্যটন স্পটগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব একটা ভালো না থাকায় বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয় ঘুরতে আসা পর্যটকদের। তবে এবার পর্যটক ও এই অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থানের কথা চিন্তা করে নেয়া হয়েছে উদ্যোগ। দুই দিনে এক সঙ্গে ২৩টি স্পট ঘুরে দেখতে পারবেন ভ্রমণপিপাসুরা।

জানা যায়, সিলেটের ৪ আসনের সংসদ সদস্য এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপির দিক নির্দেশনায় সিলেটের জেলা প্রশাসক এবং বিভাগীয় কমিশনার প্রেরিত ২০২৩ সালের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর হয়ে জাফলং পর্যন্ত একটি সড়ক তৈরির প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। আর সেই প্রস্তাবনা শুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। নির্দেশনা অনুযায়ী ইতোমধ্যে প্রাথমিক জরিপ সম্পন্ন করেছে সিলেট সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত এই তিনদিন সিলেটে পর্যটকদের আনাগোনা বেশি থাকে। কারণ শুক্রবার ও শনিবার সরকারি বন্ধ থাকায় চাকরিজীবিরা আসা যাওয়া করেন। তাদের অনেকেই একদিনে প্রাকৃতিক সৌন্দের্যের লীলাভূমি জাফলং ও পাথর সাম্রাজ্য সাদাপাথর ঘুরে দেখতে চান। কিন্তু সময় ও ভোগান্তির কারণে তা আর একদিনে ঘুরে বেড়ানো যায় না। কারণ যেখানে মাত্র ত্রিশ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিলে জাফলং থেকে সাদাপাথর যাওয়া সম্ভব সেখানে পাড়ি দিতে হয় ১২০ কিলোমিটার। আর এই ১২০ কিলোমিটারে পাড়ি দিতে গিয়ে হাতছাড়া হয়ে যায় আর ৫টি পর্যটন স্পট। জাফলং থেকে ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর প্রতিমধ্যে পান্তুমাই, বিছনাকান্দি, রাতারগুল, শ্রীপুর, শাপলা বিল, লাক্কাতুড়া চা বাগানসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখা যাবে।

সিলেটে বেড়াতে আসা পর্যটক দর্শনার্থীদের ভ্রমণকে সহজতর এবং আরামদায়ক করণে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশিত সড়কটি বাস্তবে রূপান্তরিত হলে এখানে আসা পর্যটকরা একটি সড়কে যাতায়াত করে ২ দিনে ২৩টি পর্যটন স্পট ঘুরে দেখতে পারবেন। সড়কটি নির্মাণ করা হলে সিলেটের পর্যটন শিল্প বিকশিত হবে। সেই সাথে পর্যটন শিল্পে সরকারি এবং বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও এই অঞ্চলের মানুষের কর্মস্থানের বিশাল সুযোগ তৈরি হবে।

জাফলং-কোম্পানিগঞ্জের সাদাপাথর পর্যন্ত সড়ক তৈরির বিষয়ে চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরকে নির্দেশনা দিয়ে পত্র পাঠানো হয়। ইতোমধ্যে প্রাথমিক জরিপের কাজ শেষ করেছে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সিলেট।

এব্যাপারে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ইতোমধ্যে তারা প্রাথমিক জরিপ কাজ শেষ করেছেন। এই প্রকল্পটির আশপাশে আরও কয়েকটি চলমান প্রকল্প থাকায় এই সড়ক নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর।

আর গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিলুর রহমান বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় জাফলং থেকে সাদাপাথর বা সাদাপাথর থেকে জাফলং যেতে হলে ভিন্ন সড়ক ব্যবহার করতে হয়।এতে করে সময় খরচ দুটিই বাড়ে।গোয়াইনঘাটের জাফলং থেকে কোম্পানিগঞ্জের সাদাপাথর পর্যন্ত একটি সড়ক নির্মাণে সরকারের প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। সড়কটি বাস্তবায়িত হলে এক সড়ক দিয়েই অনেকগুলো স্পট ঘুরে দেখতে পারবেন পর্যটক দর্শনার্থীরা।

;

থাইল্যান্ড ভ্রমণে তাপ ও বৃষ্টি থেকে সাবধান!



মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, সাউথ ইস্ট এশিয়া, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

তিন ঋতুর দেশ থাইল্যান্ড। বর্তমানে চলছে বর্ষাকাল। তবে বৃষ্টি যখন থাকে না তখন প্রচণ্ড রোদের তাপ। অন্তত গত এক সপ্তাহ ধরে প্রায়ই বিকেলের দিকে বৃষ্টি হচ্ছে এবং দিনের বেলায় গরমে অতিষ্ঠ হচ্ছে মানুষ।

এরই মধ্যে থাইল্যান্ডের আবহাওয়া অধিদফতর প্রয়োজন না হলে জনগণকে রোদে বের না হওয়ার জন্য এবং বৃষ্টিতে ভিজলে করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়েছে। 

এমন গরম আবহাওয়ায় স্থানীয় থাই জনগোষ্ঠীর পছন্দের বেড়ানো বা সময় কাটানোর জায়গা হচ্ছে বড় শপিংমলগুলো। তবে পর্যটকদের শুধু শপিং মলে ঘুরে পোষাবে না। তাই ছাতা, ক্যাপ এবং সঙ্গে পানি রাখার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।


শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে ব্যাংককের তামপাত্রা ৩২ ডিগ্রী ফারেনহাইট। তবে সেটা ৪০ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত অনুভূত হচ্ছে। এমন গরমে বিশেষত শিশুদের বারবার পানি পান করানো এবং ছায়াযুক্ত স্থানে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

জুন মাসের পর থেকে থাইল্যান্ডে পুরোপুরি বর্ষা। তবে বর্ষাতেও বৃষ্টি ছাড়াও রোদের তাপ থাকে প্রচুর। থাইল্যান্ডে বর্ষা চলবে অক্টোবর পর্যন্ত। এরপরে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আর্দ্র এবং শীতল। এ সময়টায় চিয়াং মাই বা চিয়াং রাইয়ের মতো উত্তর থাইল্যান্ডে পুরোপুরি শীত অনুভূত হয়। তবে গালফ অব থাইল্যান্ড এবং আন্দামানের তীরের ভূমিতে শীত কখনোই অনুভুত হয় না। বরং গরমই থাকে।

যেহেতু বাংলাদেশের পর্যটকরা বেশিরভাগই সাগর তীরবর্তী অঞ্চলে বেড়াতে যান, তাই সবসময় হালকা এবং উজ্জ্বল রংয়ের কাপড় পড়ার পরামর্শ থাকবে। কারণ এই অঞ্চলগুলোতে এবং দ্বীপগুলোতে বেশিরভাগ সময় গরমই থাকে।

এসব স্থানে ভ্রমণের সময় শিশু ও বয়স্কদের গরম থেকে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকতে পারে। তাই ছায়ায় থাকা, পানি পান করা, ভিটামিন সি গ্রহণ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

তবে ব্যাংকক, উত্তর, উত্তর পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে এখন বৃষ্টির পরিমাণ অনেক বেশি। ব্যাংককে বিকেল নাগাদ ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। তাই এসময় নাইট মার্কেট বা খোলা স্থানে যাওয়ার সময় সঙ্গে ছাতা বা রেইনকোট রাখা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আর এখানে সেভেন ইলেভেনের মতো সুপারশপগুলোতে একবার ব্যবহারের জন্য ছাতা এবং রেইনকোট পাওয়া যায়।

তবে বৃষ্টিতে ভিজে গেলে পরবর্তীতে গোসল করার পরামর্শ দিয়েছে শহর কর্তৃপক্ষ।

;