প্রশান্ত পশ্চিম



মাহমুদ হাফিজ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

পর্ব-৮

বড় ভাইয়ের সঙ্গে মাছ ধরতে যাবো আটলান্টিকে। পূর্বরাতে আনুষ্ঠানিক নৈশাহার সেরে তিনি বিলম্বে ফেরায় পরিকল্পনায় দোনোমোনো ছিল। সকাল হলেও কোমল বিছানায় গড়াগড়ি করছি। খবর এলো, নিচে মান্যবর বড় ভাই ব্রেকফাস্ট সেরে তৈরি। ফিশিংয়ে গেলে এখনই তৈরি হয়ে নামতে হবে।

ঘড়িতে বেলা এগারোটা। পোটোম্যাক নদীবিধৌত মার্কিন মুলুকের অতলান্তিক পূব ভ্রমণে এ্যাক্টভিটি চাই আমার, একপায়ে খাড়া আমি। ধড়মড়িয়ে বিছানা ছেড়ে ত্রস্তহাতে তৈরি হতে গিয়ে দশা হলো মিস্টার বিনের দন্ত চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার মতো । ব্রাশে পেস্ট লাগাতে গিয়ে হাতে লাগিয়ে ফেললাম। সেভ করতে গিয়ে জায়গায় জায়গায় শ্রুশ্মূগুম্ফ থেকেই গেল। গায়ে প্যান্ট টিশার্ট গলাতে গিয়ে  দৌড়ে নিচে নামি। ডাইনিং টেবিলে ব্রেকফাস্ট দেয়াই ছিল। ডিম রুটি নাকে মুখে গুঁজে বড় ভাইর অফিসে হাজির হই-

আই এ্যাম রেডি।

‌ওহ, আপনি তৈরি ! দ্যাটস ফাইন।  চলুন, বেরোই’।

নীল গ্যাবার্ডিন প্যান্টের ওপর ছাইরঙা টিশার্ট চাপিয়েছি। চুলটুল ঠিকঠাক নেই। আটলান্টিকে মাছ ধরার ড্রেসকোড সম্পর্কে আমি অজ্ঞ। জিজ্ঞেস করি, চলবে কী না!

এর চেয়ে খারাপ কিছু নাই আপনার। আমার মতো ব্যাগি প্যান্ট দেবো নাকি?

বললাম- না এতেই আমি সই।

আমি মাছ আরি, আর আলাউদ্দীন মাছ তুলে আইসবক্সে ভরে

গৃহসহকারী জসীম দুটি কাউবয় ক্যাপ এনে দিয়েছে, তাতে কোরিয়ার গল্ফ ক্লাবের মনোগ্রাম। টুপি দুটি নতুনই। মার্কিন মুলুকে কোরিয়া কোত্থেকে এলো এ নিয়ে ভাবতে গিয়ে দেখি   তিনি  সঙ্গে সঙ্গেই মাথায় পরে নিয়েছেন। তাকে লাগছে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট দলের সাবেক ক্যাপ্টেন অর্জুনা রানাতুঙ্গার মতো। আমারটা হাতে নিয়েই গাড়িতে উঠে বসলাম ফিশিংস্পটে গিয়ে পরবো বলে। আসনবহুল নতুন হোন্ডাগাড়িতে চেপে বসতেই চালক আলাউদ্দিন হুশ করে সবুজ প্রাঙ্গণের পিচঢালা বঙ্কিমপথ ঘুরে এ্যালাওয়ে কোর্ট সড়কে উঠলো। সোয়া ঘন্টার ড্রাইভের লক্ষ্যে তারপর উঠে গেল এ্যালাওয়ে ড্রাইভে- গন্তব্য বাল্টিমোর সাগরপ্রান্তের ফিশিং ঘাট ।

ওয়াশিংটন ডিসিকে বেড় দিয়ে রাখা ইন্টারস্টেট ক্যাপিটাল ৪৯৫ বেল্টওয়ে ধরে গাড়ি উঠলো ৯৫ নম্বর সড়কে। এই সড়ক ধরে বাল্টিমোর কেন নিউইয়র্ক হয়ে আমেরিকার আরও আরও নানা রাষ্ট্রে চলে যাওয়া যায়। ভেতরে শুরু হয়েছে নানারকম গল্প। পথের সবুজ, দূরের পাখি, পোটোম্যাক এলাকার ঝর্ণা, যুক্তরাষ্ট্রের সড়ক নেটওয়ার্ক, ড্রাইভিংয়র নানা রীতি এসব। গল্প এসে ঠেকেছে ভূরাজনীতি ও  সাদা কালো তামাটে বর্ণবৈষম্যে। বড় ভাই’র একটা কথা খুব মনে ধরলো আমার –

‘দেখুন বিশ্বজুড়ে যতো রকমের শাসন আছে, সেসব শাসন জাতি বা দেশের নামে যেমন মার্কিন শাসন, বৃটিশ শাসন, ফরাসি শাসন ইত্যাদি। একমাত্র ইসলামবিশ্বাসী জাতিগোষ্ঠির শাসনকে চিহ্নিত করতে মুসলিম শাসন নামে অভিহিত করা হয়। আমাদের অঞ্চলে ঘোরি, মামলুক, খিলজি, লোদী, তুর্কি মোগল আমলের শাসনকে বিদেশি দৃষ্টিকোণ থেকে মুসলিম বা ইসলামী শাসন নামে অভিহিত করা হয়। তারা বাংলাসহ ভারতবর্ষ শাসন করতে গিয়ে ইসলামের আলোকে কিছু করে নাই। তাই এটা একধরনের চিন্তাগত বন্ধাত্ব।

মাছ ধরা

বিশ্বরাজনীতি নিয়ে আমার জ্ঞান ও আগ্রহ সীমিত বলে হা হু করে শুনে যাই। এ পর্যায়ে বলি-

আমাদের নিজেদের ইতিহাসবিদরাই তো মুসলিম বা ইসলামী শাসন নামে অভিহিত করেছে।‘

গাড়ি বড় সক ধরে বাল্টিমোর উপত্যকা, তারপর শহর নানা সড়ক ধরে আবারও সড়কে উঠে যায়। উপত্যকা ধরে ঢুকে বনবনানীময় একটি এলাকায়। দু’দিকে ঘনবনের মধ্য দিয়ে নির্জন সড়ক। তারপর গাড়ি আমাদের নিয়ে থামায় কানা রাস্তার মাথার এক নির্জন ডুপ্লেক্স বাড়ির চত্বরে। আমি খানিক্ষণ আগেই ভাবছিলাম গাড়ি হয়তো ভুল পথে যাচ্ছে। গাড়ির বনেটে বন্দুক নাই, খেয়াজাল। আমরা হরিণ বাঘ নয়, যাচ্ছি আটলান্টিক উপকূলে মাছ ধরতে!

আমার কথায় ঠিক। চালক আলাউদ্দিন বললো, পূর্বদিন যার কাছ থেকে জাল কেনা হয়েছিল। তার কার্ডের নম্বরটি গুগলম্যাপে দেয়ায় গুগল আমাদের এখানে নিয়ে এসেছে। ভাবলাম, গুগল ম্যাপ তো আর আমাদের মনের খবর জানে না। আমরা জালবিক্রেতার বাড়িতে যাবো না, যাবো জাল নিয়ে সমুদ্র মাছ ধরতে।

এ নিয়ে খানিক্ষণ হাসাহাসি হলো। আলাউদ্দিন বললো-

সরি স্যার। উই আর গোনা টেন মিনিট লেট অনলি।

এ্যাবাউট টার্ন করে সে আবার বড় রাস্তায় উঠলো।

ছয় পাউন্ডের রুই

১৫০ ইস্টার্ণ বুলুভার্ড থেকে এক্সিট নিয়ে গাড়ি  উপত্যকার তীর চলতে শুরু করলো। এটা রিভারসাইড ড্রাইভ। বামে শহরের ঘরবাড়ি, ডানো উপত্যকা তীর। উপত্যকায় নৌ হারবার। এখানে দেখা যায় স্পিডবোট, সৌখিন মাছ ধরার ট্রলার আর মাঝে মধ্যে কাঠের পিয়ের বা ঘাট। বুঝে যাই এবার ঠিকপথে এগুচ্ছি। রিভারসাইড ড্রাইভের শেষ মাথা গিয়ে শেষ হয়েছে বৃত্তাকার এক ভূমিতে। যার পাশে আদিগন্ত সবুজ জলরাশি। এখানে সামুদ্রিক সবুজ বৃক্ষরাজি আর সামুদ্রিক উন্মুক্ত বায়ুকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে পার্ক। মধ্যে মধ্যে বসার বেঞ্চি, বার বি কিউ করার উন্মুক্ত অঙ্গণ আর বৃক্ষছায়া ঘেরা জায়গাটিতে সামুদ্রিক বাতাস নিয়ত সঙ্গ দিচ্ছে। এই ভরদুপুরেও এখান সময় কাটাতে এসেছে দুয়েকটি পরিবার। মাছ ধরে পার্কেই বারবি কিউ করছে কেউ কেউ। জায়গাটি পেশাদার ও সৌখিন মৎস্যশিকারীদের প্রিয় গন্তব্য দেখেই বুঝে যাই। পার্কের শেষপ্রান্তে বৃত্তাকার তীরে পাথরের চাঁই। একপ্রান্তে কাঠের প্রশস্ত ঘাট। সৌখিন মৎসশিকারীরা পাথরে বসে কিংবা ঘাটের পাটাতনে বসে ছিপ ফেলে মাছ ধরায় নিমগ্ন। জায়গাটির নাম কক্সপয়েন্ট। আমাদের প্রিয় দরিয়ানগর কক্সবাজারের কথা মনে করিয়ে দেয়।

বড় ভাই সবুজ প্রাঙ্গণ দেখেই বাচ্চাদের মতো উৎফুল্ল হয়ে উঠলেন। ভাবলাম, এই মাছ ধরার বাহানা নিজস্ব ঘেরাটোপ থেকে বের হয়ে বড় ভাই উদার সমুদ্রপারে এসেছেন, নিজের ভেতরের চাপ ঝাড়তে-যাকে পোশাকী ভাষায় বলে – আনউইন্ডিং।  

দুপা দুই কনুইয়ের ওপর করে করে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লেন। কোমর, উদর, ঘাড়, মস্তক সমান্তরাল। বললেন-

আসুন ব্যায়াম করি।

বোকার মতো ভাবলাম, সমুদ্রে নামার আগে এ বোধ হয় এক প্রিপারেশন। একই আসনে ব্যায়ামের ভঙ্গি করতে গিয়ে একমিনিটও থাকতে পারলাম না। বললাম-

চলুন। আপনাকে ইয়োগা শিখিয়ে দিই।

ইয়া বড় মাছ দেখতে ছুটে এলো ক্রিশ্চিয়ানো, ম ... শ্চিয়ান, ছেলে ক্রিস্টোফার ও দুই কন্যা

আলাউদ্দিন গাড়ির বনেট খুলে বারোহাত লম্বা দেশি খেয়াজাল, চারহাত লম্বা মার্কিন কারেন্ট জাল, মাছ রাখার আইসবক্স নিয়ে ঘাটে উপস্থিত। আমরা ব্যায়াম সেরে ঘাটে যাই। পাইনগাছের লম্বা কাঠ দিয়ে বানানো ঘাটের পাটাতন। চারদিকে মোটা মোটা খাম্বা পানির নিচ থেকে পাটাতন হয়ে বুকসমান উঁচু করে স্থাপন করা। পাটাতনের বিভিন্ন প্রান্তে দুই বাচ্চাসহ এক ভদ্রমহিলা, জার্মান কবি গুন্টাগ্রাস চেহারার এক বুড়ো আর শশ্রুমন্ডিত এক মধ্যবয়স্ক ছিপ ফেলে বসে আছে। ছিপ ফেলে সামুদ্রিক রোদে বসে উপত্যকার ঢেউ গুণতে গুণতে গুন্টারগ্রাসের ফর্সা চেহারা লাল টকটকে হয়ে গেছে। বয়সে ভাটার ছাপ পড়লেও তার আগ্রহে কোন ভাটা নেই। জানা গেল, সকালেই তারা ছিপ ফেলেছে। এখন বেলা দুইটা আড়াইটা পর্যন্তও কোন একটি মাছও তুলতে পারেনি। এদিকে সঙ্গের বাচ্চারা মাছ দেখার জন্য পাগলপারা। বুড়ো পেশাদার মৎস্যশিকারীর মতো বড়শি, ছিপ ও মৎস্যখাদ্য সম্ভারসহ একটি বিশেষ এ্যাঙলিং বক্স নিয়ে এসেছেন। জাল বের করে মৎস্যশিকারে আমাদের যোগারজন্ত বুড়ো দুটি শিশু দুটিকে দেখাচ্ছেন। বুঝে যাই, তিনটি ছিপ ফেললেও তারা আসলে একই পরিবারের। বাচ্চাকে মাছ ও মাছ ধরা দেখাতে নিয়ে এসেছেন।

সমুদ্রের বিস্তীর্ণ জলরাশির সামনে দাঁড়াতেই বুক ভরে দেয় স্বতঃশ্চল সামুদ্রিক বাতাস। এ জলরাশির একটি নাম আছে। আটলান্টিক পূর্ব উপকূলের সিজাপিক উপত্যকায় মিশেছে আশপাশের পাহাড়পুঞ্জে উৎপন্ন দেড়শর বেশি নদী। এই স্রোতময় এই নদীর নাম ব্যাক রিভার। রোজডেল কমিউনিটি অধ্যূষিত রোজডেল থেকে উৎপন্নের পর মাত্র ৯ মাইল পাড়ি দিয়েই বাল্টিমোর শহরের দুই মাইল পূর্বে তা আত্মাহুতি দিয়েছে অতলান্তদুহিতা সিজাপিক উপত্যকায়। আমরা ব্যাক রিভারের মোহনায় ফিশিং করতে নেমেছি।

খেয়া জাল ফেলা

পানির ওপরে খুব নিচু হয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে কয়েকটি  ঈগল। পাখি দেখেই আমি বুঝতে পারি এই নদীতে মাছ আছে। ছোটবেলায় আমার গ্রামের খন্দকার পাড়ার অগ্রজতুল্য বাকপ্রতিবন্ধী আমিনের সঙ্গে খেয়াজালে মাছ ধরেছি খুব। পানি দেখেই আমিন বুঝে যেতো পানির নিচে মাছ আছে কিনা। বড়শি হোক বা খেয়াজাল, মাছ ধরায় আমিনকে কেউ কোনদিন হারাতে দেখেনি। যাহোক, বড় ভাই সিগারেট ধরিয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে সামুদ্রিক বাতাস উপভোগ করছেন। আলাউদ্দিন ছয়হাতি কারেন্ট জালটি বাম হাত দিয়ে ফেলার চেষ্টা করছে। মান্যবর  জালের ধারে কাছেও আসছেন না, অথচ সকাল থেকে মাছ ধরায় বেরোতে তার তোড়জোড়ে ছিল অন্তহীন। হয় তিনি জাল মারতে পারেন না, নয় আমাকে সুযোগ দেয়ার জন্য এই কৌশল। আমি খেয়াজালে হাত দিতে গেলে বললেন-

জসিমই ফেলবে। উয়ো চিজ আপকে লিয়ে নেহি, আপনি পারবেন না।

আনকোরা জাল আর নদীর পানি দেখে আমার ভেতরে নষ্টালজিয়া উথলে ওঠে। কোন উত্তর না দিয়ে জাল বাগিয়ে কাঠের পাটাতনে ঝুঁকে সজোরে পানিতে ফেলি। জালটি এমন গোলাকার বৃত্ত আঁকে যা দেখে বড় ভাই উল্লাসে ফেটে পড়ে একের পর ছবি তুলতে থাকেন। বলি-

ভিডিও, ভিডিও। ইউটিউবে মাছ মারার প্রচুর ভিডিও দেখেছি। খুব জনপ্রিয়।

বললেন-

আগে পারফরেমেন্স ভাল হোক, তারপর ভিডিও আর রেওয়ার্ড।

প্রথম খ্যাওয়ে কয়েকটি মাছ উঠলো। আমাদের কই মাছের চেয়ে বড়, তেলাপিয়ার চেয়ে ছোট। হলুদাভ গা। স্থানীয় নাম ইয়েলো পার্সার।

পরিব্রাজক যখন মৎস্যশিকারী

সূর্য মাথার ওপর জ্বলছে অসীম তেজে। পাটাতনের সামনের দিকে বড়শি ফেলে অপেক্ষমান গুন্টারগ্রাসের পরিবার। পেছনের পানিতে ছায়া পড়েছে। আমি কৈবর্ত্যপ্রিয় মানুষ। দক্ষ ধিবরের মতো ভাবি, এখানে মাছ যা আছে, তা ছায়ার দিকেই আছে। সমুদ্রের দিকে পিছন ফিরে আমি পাটাতনের ছায়ার দিকে জাল ফেলি। মূহুর্তেই টের পাই বড় কিছু একটা বাধিয়েছি। রশি ধরে টান দিতেই বড় মাছ লাফাতে থাকে। সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে বড় ভাই মোবাইল ক্যামেরা তাক করেন। জাল তুলতেই পুরো নদীপার জসিম, বড় ভাই আর গুন্টারগ্রাসের পরিবারের উল্লাসে ফেটে পড়ে। অবাক হয়ে দেখি জালে লাফাচ্ছে তিন কেজির বেশি ওজনের গ্রাসকার্প, এক কেজি ওজনের এলওয়াইফ-যা দেখতে একদম পদ্মার ইলিশের মতো। সাত আটটা ইয়েলো পার্সও উঠেছে জালে। আমি হৎবিহ্বলতা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। জসিম মাছগুলো বের করে বক্স রাখতে থাকে, বড় ভাই ছবি তোলায় ব্যস্ত। গুন্টারগ্রাস ততক্ষণে নাতি-নাতনিদের নিয়ে বিস্ময় বিমুগ্ধ চোখে আমাদের ফিশ বক্সের ওপর ঝুঁকে পড়েছে। পিয়েরে চলতে থাকা আমাদের এসব কাণ্ড দেখে ছিপ রেখে  ছুটে আসে অদূরের এক এ্যাঙলার।  মাছ দেখে হতবাক হয়ে আনন্দ করে করতে করতে ফিরে যায়।

বিশেষ জাল দিয়ে মাছ ধরার খবর  কক্সপয়েন্ট এলাকায় রাজ্য হয়ে যায়। এ্যাঙলাররা একের পর এক পাটাতনে এসে মাছ দেখে ওয়াও ওয়াও বলে উল্লাস করতে থাকে। সকাল থেকে অর্ধদিন কাটিয়েও যারা  পানি থেকে তুলতে পারেনি চুনোপুটি, কয়েক মিনিটের মধ্যে অর্ধবক্স মাছ ধরা তাদের কাছে অবাকবিস্ময়।  কয়েকজন এ্যাঙলার অনুমতি নিয়ে আমাদের মাছে ছবি তোলে। অনেকে তাদের মোবাইলের ছবি গ্যালারি থেকে পূর্বে ধরা মাছের ছবি দেখায়। একজন বলে- দিস ইজ রেয়ার ফিশ। এসব উল্লাসে পার্কে বেড়াতে আসা একটি পরিবারকে বেঞ্চ আটকে রাখতে পারেনি। ছুটে এসে বক্সের ওপর ঝুঁকে পড়ে দারা পরিবার। কর্তার নাম ক্রিশ্চিয়ানো। জাতিতে মেক্সিকান। সঙ্গে মিসেস ক্রিশ্চিয়ানো, ক্রিস্টোফার নামের তাদের কনিষ্ঠপুত্র আর পিঠেপেঠি বয়সের দুই কন্যা। বড় মেয়েটি কৈশোরে পা দিতে চলেছে। ওয়াও বলে মাছের বক্সের দিকে ঝুঁকে থাকে সে। পরিবারটির আগ্রহ দেখে বড় ভাইয়ের ইশারায় কিছু মাছ উপহার দেয়ার প্রস্তাব দিই। ক্রিশ্চিয়ানো সম্মত হলেও মিসেস ক্রিশ্চিয়ানো তাকে নিরস্ত করেন। বোঝা যায়, তাজা মাছ কেটে বেছে রান্নার ঝামেলায় যেতে নারাজ এই মেক্সিকান বধু।

অতি উৎসাহী দুয়েকজন এ্যাঙলার তো এই্ সাফল্যে আমেক কোলে তুলে নাচায় আর কী! ব্যাক রিভারের পাটাতনে দাঁড়িয়ে আমি সিজাপিক উপত্যকার ওপর দিয়ে আটলান্টিক মহাসমুদ্রের তাকিয়ে থাকি। চোখের কোণায় অশ্রু। আব্বার স্মৃতি মনে ভেসে উঠে কান্না এলো বড়। আব্বা আজ নেই। ছেলেবেলায় তাঁর শেখানো খেয়াজাল ফেলার কসরত জীবনের প্রান্তবেলায় সাতসমুদ্র তেরোনদী পারে দেশিবিদেশিদের আনন্দ জোগালো! আব্বার সখের অন্যতম ছিল নিজস্ব খেয়াজাল দিয়ে মাছ ধরা, খাওয়া ও বিতরণ।

সাগরে পাখি ওড়াওড়ি করে্। দ্রুতবেগে মোটরবাইক ও স্পিডবোডে অনেকে মাছ ধরে। সকালে বের হওয়া মাছ ধরার বোটগুলো অদূরের বোটঘাটে ফিরে আসতে থাকে। সম্মানিত আমাকে বলেন-

পরেরবার স্পিডবোট ভাড়া নিয়ে আমরা সাগরের গভীরে যাবো, দ্বীপে যাবো। আপনার যে দক্ষতা দেখবেন মাছ কাহাকে বলে।

আমরা বিরতি নিই। সেভেন ইলেভেন থেকে আনা হটডগ আর বোতলজাত ডাবলশট কোল্ড কফিতে এনার্জিজাইজড হই। আরও খানিক্ষণ মাছ ধরে প্রতি খ্যাওয়ে মাছ ওঠার সংখ্যা কমতে থাকে। তখন ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিই। মাছের বক্সটির সামনে হাতল, পেছনে চাকা লাগানো। হাতল ধরে টেনে নিতে থাকেন বড় ভাই। আমি পানির বোতল আর কফির ক্যান হাতে পেছনে পেছনে হাটি। জাল দুটি নিয়ে আগে আগে হাটতে থাকে আলাউদ্দিন। কক্সপয়েন্ট পার্ক ও সাগরতীরে যতো মানুষ ছিল- তারা বাঙালির দীপ্ত, দৃঢ় ও বীর পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে থাকে।

ব্যাক রিভারকে ব্যাকে রেখে গাড়ি ছুট পোটোম্যাক রিভারের দিকে। আমরা চিকের গরম চিকেন র‍্যাপে কামড় দিয়ে কোল্ড কফিতে চুমুক দিই। আমেরিকায় গরম ও ঠান্ডা একসঙ্গে চলে।

   

পায়ে হেঁটে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ায় শান্তা-শাওন দম্পতি



তৌফিক হাসান, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, ট্রাভেল এন্ড ট্যুর
পায়ে হেঁটে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ায় দম্পতি

পায়ে হেঁটে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ায় দম্পতি

  • Font increase
  • Font Decrease

সম্প্রতি এক প্রাণোচ্ছল ভ্রমণপিপাসু দম্পতি পায়ে হেঁটে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়াতে পৌঁছান। ‘প্রতিটি প্রাণ মূল্যবান, আত্মহত্যা নয়- বাঁচতে শিখি’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে চলতি বছরের গত ২৮ জুন পায়ে হেঁটে টেকনাফ থেকে ভ্রমণ শুরুর পর শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্টে ভ্রমণ শেষ করেন তারা।

ব্যাংকার শারাবান তহুরা শান্তা এবং আর্কিটেক্ট আল ইমরান শাওন তাদের পেশাগত ব্যস্ততার মাঝেও এই সময় বের করে আত্মহত্যা নয় বাঁচতে শেখার প্রতিপাদ্যকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছেন। দম্পতির ভাষ্যমতে তাদের এই ভ্রমণে তারা প্রচুর মানুষের সাথে বিশেষ করে তরুণ তরুণী এবং স্কুলের বাচ্চাদের সাথে কথা বলেছেন, দেশকে দেশের মানুষকে নতুন করে চিনেছেন এবং অনেককে নতুনভাবে চিনতে সাহায্য করেছেন ও সচেতন করেছেন। চলার এই পথে তারা নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। নতুন কিছু শিখতে, মানুষকে জীবন সম্পর্কে জানাতে ও সচেতন করার অভিপ্রায় তাদের পিছু হটতে দেয়নি।

ইনানীতে কয়েকজন তরুণ তাদের স্বাগত জানায়

বার্তা২৪ কে শান্তা বলেন, বিগত ২৮ জুন আমরা হাঁটা শুরু করি টেকনাফের শাহীপরীর দ্বীপ থেকে। প্রথমদিন প্রায় ২৮ কিলোমিটার পথ হেঁটে বড়ডিলের মরিসবুনিয়া স্কুলের নৈশপ্রহরীর বাড়িতে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা হয়। সেদিন রাতে আমাদের সাথে একটা ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে। মাঝরাতের দিকে হাতির পাল আমাদের থাকার ঘরে আক্রমণ করে বসে। নৈশ প্রহরীর পরিবারের সাথে দৌড় দিয়ে স্কুল ঘরে গিয়ে উঠি এবং বাকি রাতটা আমাদের সেখানেই কাটে। দ্বিতীয় দিন ছিল ঈদের দিন, সেদিন প্রায় ৩৬ কিলোমিটার হেঁটে থেকে ইনানী বিচ পর্যন্ত যাই। ঈদের ছুটিকে কাজে লাগিয়ে ১০ দিনে ৪০০ কিলোমিটার কুমিল্লার দাউদকান্দি পর্যন্ত পৌঁছাই। পরের সপ্তাহে দাউদকান্দি থেকে হেঁটে ঢাকার রামপুরা পর্যন্ত আসি। অতঃপর মায়ের অসুস্থতা, পারিবারিক সমস্যা এবং অফিসের ব্যস্ততার কারণে কয়েক সপ্তাহ বিরতি নিয়ে পুনরায় সাপ্তাহিক ছুটির দিনে হাঁটা শুরু করি। এভাবে হাঁটতে হাঁটতে আরিচা হয়ে ট্রলারে যমুনা পাড়ি দিয়ে কখনো হাইওয়ে ধরে আবার কখনো লোকাল রাস্তা দিয়ে হেঁটে উত্তরের সীমান্ত তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত পৌঁছে ভ্রমণ শেষ করি।

 পুরো ভ্রমণে কোনো সমস্যায় পরতে হয়েছিল কিনা তার জবাবে শান্তা জানান। ফেনী ক্রস করার পর আমার স্বামী আমাকে ফেলে বেশ খানিকটা এগিয়ে যাওয়ায় ৫/৬ জন বখাটে আমাকে ঘিরে ধারে নানানভাবে উত্ত্যক্ত করতে থাকে এবং অনৈতিক কথা বলতে থাকে। সেসময় আমি সাহস নিয়ে প্রতিবাদ করায় এবং উপস্থিত বুদ্ধি খাঁটিয়ে ওদের ভয় দেখানোতে ওরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। এই ঘটনা ছাড়া তেমন কোন সমস্যা হয়নি। তবে আমাদের দেশে পাবলিক টয়লেট না থাকে চলতি পথে ভ্রামনিকদের খানিকটা সমস্যায় পড়তে হয়। আমাদের দেশের মানুষজন খুব ভাল এবং সাহায্যপরায়ণ।

অনিন্দ্যসুন্দর এক রাস্তায় ভ্রামনিক শান্তা

শাওন বার্তা২৪ কে বলেন, আমরা ঐকান্তিক চেষ্টা ছিল দেশব্যাপী পায়ে হেঁটে ঘোরার এবং মানুষের মধ্যে জীবনের বানী পৌঁছে দেবার এবং শত বাধার পরেও আমরা চেষ্টা করে গেছি। ভবিষ্যতেও আমাদের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এবং মূল প্রতিবাদ্যকে মাথায় রেখে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও ভ্রমণ করার ইচ্ছে আছে আমাদের। আমি বন্ধু এবং শুভানুধ্যায়ীদের ধন্যবাদ জানাই এবং আউটডোর বিডি এর প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি এই ভ্রমণে বিভিন্ন ভাবে পরামর্শ ও সহায়তা দেবার জন্য।

স্কুলের বাচ্চাদের সাথে মতবিনিম

আউটডোর বিডির ফাউন্ডার জুয়েল রানা বার্তা২৪ কে বলেন, আমি নিজে একজন ভ্রমণপাগল মানুষ। আউটডোর বিডি’র উদ্দেশ্যেই হলো একজন পরিব্রাজক বা ভ্রমণকারী যাতে হাতের কাছেই সহজলভ্যে সকল ভ্রমণ সামগ্রী পান। শান্তা ও শাওন দম্পতি এই ভ্রমণ সম্পন্ন করায় আমরা খুশি এবং তাদের এই ভ্রমণ দেখে আরও মানুষ উদ্বুদ্ধ হোক আমরা সেটাই চাই।

;

ইন-ফ্লাইট সার্ভিস ক্যাটাগরিতে গোল্ড পুরস্কার পেলো এয়ার এ্যাস্ট্রা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম ঢাকা
গোল্ড পুরস্কার নিচ্ছেন এয়ার এ্যাস্ট্রার সিইও ইমরান আসিফ। ছবি : সংগৃহীত

গোল্ড পুরস্কার নিচ্ছেন এয়ার এ্যাস্ট্রার সিইও ইমরান আসিফ। ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘মনিটর এয়ারলাইন অব দ্য ইয়ার ২০২৩’- এর বেস্ট ইন-ফ্লাইট সার্ভিস ক্যাটাগরিতে সেরা হয়েছে এয়ার এ্যাস্ট্রা।

রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাতে বাংলাদেশ মনিটর আয়োজিত গালা অ্যাওয়ার্ড নাইটে এয়ার এ্যাস্ট্রার সিইও ইমরান আসিফের হাতে বেস্ট ইন-ফ্লাইট সার্ভিস ক্যাটাগরির গোল্ড পুরস্কার তুলে দেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, এমপি।

যাত্রী সন্তুষ্টির প্রতিশ্রুতির জন্য পরিচিত এয়ার এ্যাস্ট্রা ২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর যাত্রা শুরু করে বর্তমানে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর এবং সিলেটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

এয়ার এ্যাস্ট্রা’র বহরে বর্তমানে তিনটি এটিআর ৭২-৬০০ এয়ারক্রাফট রয়েছে, যা ফ্রান্সে নির্মিত সর্বাধুনিক প্রযুক্তির টার্বোপ্রপ এয়ারক্রাফট এবং ৭০ জন যাত্রী বহন করতে সক্ষম।

বাংলাদেশ মনিটর তাদের বাৎসরিক কার্যক্রম হিসেবে ২০০৭ সালে বাংলাদেশে ‘এয়ারলাইন অব দ্য ইয়ার’ প্রবর্তন করে। এভিয়েশন ও পর্যটন বিষয়ক প্রকাশনা ‘বাংলাদেশ মনিটর’-এর জরিপের ভিত্তিতে বিজয়ীদের নির্বাচিত করা হয়।

বিগত এক বছরে যারা কমপক্ষে তিনবার আকাশপথে ভ্রমণ করেছেন, তারা অনলাইনে নিজের পছন্দের এয়ারলাইন্সকে ভোট দিতে পেরেছেন।

;

সিলেটে একসঙ্গে ঘুরে দেখা যাবে ২৩টি পর্যটন স্পট



মশাহিদ আলী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেট। সিলেটের অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। যেদিকে চোখ যায় সেদিকে উঁকি দিয়ে ডাকছে প্রকৃতির সৌন্দর্য। আর সেই সৌন্দর্য উপভোগের জন্য দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন ভ্রমণপিপাসুরা। প্রতিদিন সিলেটে বেড়াতে আসেন হাজার হাজার পর্যটকরা।

কিন্তু পর্যটন স্পটগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব একটা ভালো না থাকায় বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয় ঘুরতে আসা পর্যটকদের। তবে এবার পর্যটক ও এই অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থানের কথা চিন্তা করে নেয়া হয়েছে উদ্যোগ। দুই দিনে এক সঙ্গে ২৩টি স্পট ঘুরে দেখতে পারবেন ভ্রমণপিপাসুরা।

জানা যায়, সিলেটের ৪ আসনের সংসদ সদস্য এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপির দিক নির্দেশনায় সিলেটের জেলা প্রশাসক এবং বিভাগীয় কমিশনার প্রেরিত ২০২৩ সালের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর হয়ে জাফলং পর্যন্ত একটি সড়ক তৈরির প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। আর সেই প্রস্তাবনা শুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। নির্দেশনা অনুযায়ী ইতোমধ্যে প্রাথমিক জরিপ সম্পন্ন করেছে সিলেট সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত এই তিনদিন সিলেটে পর্যটকদের আনাগোনা বেশি থাকে। কারণ শুক্রবার ও শনিবার সরকারি বন্ধ থাকায় চাকরিজীবিরা আসা যাওয়া করেন। তাদের অনেকেই একদিনে প্রাকৃতিক সৌন্দের্যের লীলাভূমি জাফলং ও পাথর সাম্রাজ্য সাদাপাথর ঘুরে দেখতে চান। কিন্তু সময় ও ভোগান্তির কারণে তা আর একদিনে ঘুরে বেড়ানো যায় না। কারণ যেখানে মাত্র ত্রিশ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিলে জাফলং থেকে সাদাপাথর যাওয়া সম্ভব সেখানে পাড়ি দিতে হয় ১২০ কিলোমিটার। আর এই ১২০ কিলোমিটারে পাড়ি দিতে গিয়ে হাতছাড়া হয়ে যায় আর ৫টি পর্যটন স্পট। জাফলং থেকে ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর প্রতিমধ্যে পান্তুমাই, বিছনাকান্দি, রাতারগুল, শ্রীপুর, শাপলা বিল, লাক্কাতুড়া চা বাগানসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখা যাবে।

সিলেটে বেড়াতে আসা পর্যটক দর্শনার্থীদের ভ্রমণকে সহজতর এবং আরামদায়ক করণে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশিত সড়কটি বাস্তবে রূপান্তরিত হলে এখানে আসা পর্যটকরা একটি সড়কে যাতায়াত করে ২ দিনে ২৩টি পর্যটন স্পট ঘুরে দেখতে পারবেন। সড়কটি নির্মাণ করা হলে সিলেটের পর্যটন শিল্প বিকশিত হবে। সেই সাথে পর্যটন শিল্পে সরকারি এবং বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও এই অঞ্চলের মানুষের কর্মস্থানের বিশাল সুযোগ তৈরি হবে।

জাফলং-কোম্পানিগঞ্জের সাদাপাথর পর্যন্ত সড়ক তৈরির বিষয়ে চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরকে নির্দেশনা দিয়ে পত্র পাঠানো হয়। ইতোমধ্যে প্রাথমিক জরিপের কাজ শেষ করেছে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সিলেট।

এব্যাপারে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ইতোমধ্যে তারা প্রাথমিক জরিপ কাজ শেষ করেছেন। এই প্রকল্পটির আশপাশে আরও কয়েকটি চলমান প্রকল্প থাকায় এই সড়ক নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর।

আর গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিলুর রহমান বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় জাফলং থেকে সাদাপাথর বা সাদাপাথর থেকে জাফলং যেতে হলে ভিন্ন সড়ক ব্যবহার করতে হয়।এতে করে সময় খরচ দুটিই বাড়ে।গোয়াইনঘাটের জাফলং থেকে কোম্পানিগঞ্জের সাদাপাথর পর্যন্ত একটি সড়ক নির্মাণে সরকারের প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। সড়কটি বাস্তবায়িত হলে এক সড়ক দিয়েই অনেকগুলো স্পট ঘুরে দেখতে পারবেন পর্যটক দর্শনার্থীরা।

;

থাইল্যান্ড ভ্রমণে তাপ ও বৃষ্টি থেকে সাবধান!



মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, সাউথ ইস্ট এশিয়া, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

তিন ঋতুর দেশ থাইল্যান্ড। বর্তমানে চলছে বর্ষাকাল। তবে বৃষ্টি যখন থাকে না তখন প্রচণ্ড রোদের তাপ। অন্তত গত এক সপ্তাহ ধরে প্রায়ই বিকেলের দিকে বৃষ্টি হচ্ছে এবং দিনের বেলায় গরমে অতিষ্ঠ হচ্ছে মানুষ।

এরই মধ্যে থাইল্যান্ডের আবহাওয়া অধিদফতর প্রয়োজন না হলে জনগণকে রোদে বের না হওয়ার জন্য এবং বৃষ্টিতে ভিজলে করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়েছে। 

এমন গরম আবহাওয়ায় স্থানীয় থাই জনগোষ্ঠীর পছন্দের বেড়ানো বা সময় কাটানোর জায়গা হচ্ছে বড় শপিংমলগুলো। তবে পর্যটকদের শুধু শপিং মলে ঘুরে পোষাবে না। তাই ছাতা, ক্যাপ এবং সঙ্গে পানি রাখার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।


শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে ব্যাংককের তামপাত্রা ৩২ ডিগ্রী ফারেনহাইট। তবে সেটা ৪০ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত অনুভূত হচ্ছে। এমন গরমে বিশেষত শিশুদের বারবার পানি পান করানো এবং ছায়াযুক্ত স্থানে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

জুন মাসের পর থেকে থাইল্যান্ডে পুরোপুরি বর্ষা। তবে বর্ষাতেও বৃষ্টি ছাড়াও রোদের তাপ থাকে প্রচুর। থাইল্যান্ডে বর্ষা চলবে অক্টোবর পর্যন্ত। এরপরে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আর্দ্র এবং শীতল। এ সময়টায় চিয়াং মাই বা চিয়াং রাইয়ের মতো উত্তর থাইল্যান্ডে পুরোপুরি শীত অনুভূত হয়। তবে গালফ অব থাইল্যান্ড এবং আন্দামানের তীরের ভূমিতে শীত কখনোই অনুভুত হয় না। বরং গরমই থাকে।

যেহেতু বাংলাদেশের পর্যটকরা বেশিরভাগই সাগর তীরবর্তী অঞ্চলে বেড়াতে যান, তাই সবসময় হালকা এবং উজ্জ্বল রংয়ের কাপড় পড়ার পরামর্শ থাকবে। কারণ এই অঞ্চলগুলোতে এবং দ্বীপগুলোতে বেশিরভাগ সময় গরমই থাকে।

এসব স্থানে ভ্রমণের সময় শিশু ও বয়স্কদের গরম থেকে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকতে পারে। তাই ছায়ায় থাকা, পানি পান করা, ভিটামিন সি গ্রহণ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

তবে ব্যাংকক, উত্তর, উত্তর পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে এখন বৃষ্টির পরিমাণ অনেক বেশি। ব্যাংককে বিকেল নাগাদ ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। তাই এসময় নাইট মার্কেট বা খোলা স্থানে যাওয়ার সময় সঙ্গে ছাতা বা রেইনকোট রাখা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আর এখানে সেভেন ইলেভেনের মতো সুপারশপগুলোতে একবার ব্যবহারের জন্য ছাতা এবং রেইনকোট পাওয়া যায়।

তবে বৃষ্টিতে ভিজে গেলে পরবর্তীতে গোসল করার পরামর্শ দিয়েছে শহর কর্তৃপক্ষ।

;